আদালতের আশ্রয়ে দেশে ফিরতে চান পি কে হালদার

দুদকের চোখে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক পি কে হালদার ‘আত্মসাত করা অর্থ ফেরত দিতে’ আদালতের আশ্রয়ে দেশে ফিরতে চাইছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2020, 02:45 PM
Updated : 7 Sept 2020, 02:50 PM

তার জীবনের নিরাপত্তায় আদালতের হেফাজত চেয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) হাই কোর্টে এই আবেদন করেছে।

সোমবার সেই আবেদন গ্রহণ করে বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ।  

পরে বিচারক বলেন, এই আদালত পি কে হালদারের নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য আদেশ দিতে এবং সীমিত সময়ের জন্য তাকে এই আদালতের হেফাজতে নিরাপদে রাখতে রাজি আছে।

আদালত আদেশে আইএলএফএসএল ’র পরিচালনা পর্ষদকে বলেছে পিকে হালদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।

তিনি কবে, কখন, কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও দুদকসহ দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে আদালত।   

শুনানিতে বিচারক বলেন, আত্মসাতকারীরা টাকা ফেরত দিতে চাইলে সে সুযোগ যেমন থাকা দরকার, তেমনি তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাও প্রয়োজন।

প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে এই বছরের শুরুতে খবর আসে।

এরপর তার পাসপোর্ট, সম্পত্তি জব্দ করা হয়। আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে অপসারণও করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও হয়।

আইএলএফএসএল আদালতকে জানায়, সম্প্রতি পি কে হালদার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফিরে টাকা ফেরত দিতে রাজি হওয়ার কথা জানান।

কোম্পানির আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন আদালতের আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, “সম্প্রতি পি কে হালদার আইএলএফএসএলের সাথে যোগাযোগ করে বলেছেন, তিনি টাকা ফেরত দিতে চান। তবে তার জন্য আদালতের হেফাজতে জীবনের নিরাপত্তা চান তিনি।

“আইএলএফএসএলের পরিচালনা পর্ষদ সে অনুযায়ী পিকে হালদারের জীবনের নিরাপত্তার জন্য উচ্চ আদালতের হেফাজত চেয়ে আবেদন করেছিল। শুনানি শেষে আবেদনটি গ্রহণ করেছেন আদালত।””

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “পিকে হালদার একটি দরখাস্ত পাঠিয়েছেন যে, উনি দেশে আসতে চান, কিন্তু দেশে আসাটা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যদি তার জীবনের জন্য আইনগত নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তাহলে উনি দেশে ফিরবেন।

“দরখাস্তটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গ্রহণ করে করে আজকে আদালতে দাখিল করেছিল। এর উপর শুনানি হয়েছে। হাই কোর্ট বলেছেন, ঠিক আছে, উনি কখন আসতে চান সেটা জানান, দিন, তারিখ, সময়-ক্ষণ বা কোন ফ্লাইটে আসবেন, সে ফ্লাইট নাম্বার সব জানান।”

আইএলএফএসএলে রাখা আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাত ব্যক্তির রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পিকে হালদারের বিষয়টি আদালতে ওঠে।

ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর হাই কোর্ট গত ১৯ জানুয়ারি পি কে হালদার, তার মা, স্ত্রী, ভাই এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেয়।

তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে এই নির্দেশ দেওয়া হলেও পি কে হালদার ততদিনে টাকা লোপাট করে লাপাত্তা হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।

আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছিল, এ সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের নগদ অর্থ, গাড়ি, মজুদসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কোনও ব্যক্তি বা সত্তার কাছে হস্তান্তর না করতে।

হাই কোর্টের সে আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করেন আইএলএফএসএল’র দুই পরিচালক।

পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ হাই কোর্টের আদেশই বহাল রাখে।