পি কে হালদারের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে অপসারিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2020, 01:39 PM
Updated : 21 Jan 2020, 02:18 PM

বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের একক হাই কোর্ট বেঞ্চের আদেশে পি কে হালদারের মা, স্ত্রী, ভাই, এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ আরও ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দের আদেশও দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, “অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল, যাতে এসব ব্যক্তিরা কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে না পারেন।”

এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতেও বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত তাদের নগদ অর্থ, গাড়ি, মজুদসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কোনও ব্যক্তি বা সত্তার কাছে হস্তান্তর না করতেও নির্দেশ দিয়েছে।

পিকে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি কোটি কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পালিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

অন্য যাদের পাসপোর্ট জব্দ করতে বলা হয়েছে, তারা হলেন- আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, এমএ হাশেম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জী, পাপিয়া ব্যানার্জী, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, আবুল হাশেম, মো. রাশেদুল হক, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, ভাই প্রিতুষ কুমার হালদার, চাচাত ভাই অমিতাব অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী।

আইএলএফএসএলের ৭ বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত চেয়ে করা মামলার শুনানি শেষে হাই কোর্ট গত রোববার এই আদেশ দেয়। মঙ্গলবার আদেশটি প্রকাশ করা হয়েছে।

আদালত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে পি কে হালদারকে অপসারণ করে কোম্পানিটি পরিচালনার জন্য স্বাধীন পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দিয়েছে।

নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানাতে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, নতুন চেয়ারম্যানকে সুসজ্জিত স্বতন্ত্র অফিস কক্ষসহ মাসিক সম্মানী হিসেবে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে।

এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল, পি অ্যান্ড এল অ্যাগ্রো, পি অ্যান্ড এল ভেনচার, পি অ্যান্ড এল বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, হল ইন্টারন্যাশনাল, হল ট্র্যাভেলস, হল ট্রিপ, হল ক্যাপিটাল, হল টেকনোলোজি, আনন ক্যামিকেল, নর্দার্ন জুট, সুখন্দা লিমিটেড অ্যান্ড রেপটাইল ফার্ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসহ প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের নিবন্ধককে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির সাংবাদিকদের বলেন, “সাত আবেদনকারী স্থায়ী আমানত হিসাবে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন টাকা জমা দিয়েছিলেন। আমানত পরিপক্ক হওয়ার পর আমানতকারীরা তাদের আমানতের টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করলে তাদের জানানো হয় আইএলএফএসএল আমানতের টাকা দিতে অক্ষম।

“এই পরিস্থিতিতে আমানতকারীরা কোম্পানিটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করার আরজি জানিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে হাই কোর্টে আবেদন করেন।”

সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি আইএলএফএসএল আদালতে একটি লিখিত আবেদন দিয়ে বলে, বর্তমান অবস্থায় কোম্পানি এক সঙ্গে সব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদনকারীদের অর্থ ফেরত দেবে।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে আইএলএফএসএলকে দেউলিয়া ঘোষণা না করে যদি অভিজ্ঞ, সৎ,দক্ষতাসম্পন্নদের দিয়ে কোম্পানিটি ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পায়, তাহলে বরং অংশীদার ও আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

অবৈধ ব্যবসা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে পৌনে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৮ জানুয়ারি কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় বলা হয়, পি কে হালদার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।

মামলায় বলা হয়, লিপরো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ছাড়াও বিভিন্ন কাগুজে কোম্পানিতে পি কে হালদারের ১২৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সম্পত্তি রয়েছে, যা তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।

অন্যদিকে তিনি ময়মনসিংহের ভালুকায় ৫৮৯ শতক জমি কিনেছেন, কিন্তু এর কোনো আয়ের উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি ছলছাতুরির আশ্রয় নিয়ে বেনামে (অন্যদের নামে) ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা রেপটাইলস ফার্মের নামে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, প্রশান্ত কুমার নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে বেনামে ৩৩ লাখ টাকা, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে বেনামে ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, আজিজ ফেবরিক্স লিমিটেডে বেনামে ৬৩ লাখ টাকা, আনান কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজে বেনামে চার কোটি ৯০ লাখ টাকা, একইভাবে ক্লীউইস্টন ফুড অ্যান্ড একোমোডেশনে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা, রহমান কেমিকেলে ৭০ লাখ টাকা বেনামে বিনিয়োগ করেন পি কে হালদার।