অডিট আপত্তি: আপাতত ২০০০ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে গ্রামীণফোনকে

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার নিরীক্ষা দাবির নোটিসের ওপর হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে গ্রামীণফোনকে অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2019, 03:51 AM
Updated : 24 Nov 2019, 01:02 PM

গ্রামীণফোন ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞাও বাতিল হয়ে যাবে। তখন গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে যে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে বিটিআরসির আইনজীবী জানিয়েছেন।

হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।

সর্বোচ্চ আদালতে বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ ফজলে নূর তাপস, সঙ্গে ছিলেন এ এম আমিন উদ্দিন ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।

আপিল বিভাগের আদেশের পর গ্রামীণফোনের আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “দুই হাজার কোটি টাকা না দিলে তিন মাস পরে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। আমরা আদেশ পাওয়ার পরে গ্রামীণফোনের সাথে আলাপ করব, এ আদেশের রিভিউ করবে কিনা। তিন মাস সময় আছে। আর এক মাসের মধ্যে রিভিউ করার জন্য সুযোগ আছে।”

অন্যদিকে বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, “বিটিআরসির যে পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে তারা (গ্রামীণফোন) যদি দুই হাজার কোটি টাকা এখন না দেন, তাহলে হাই কোর্ট থেকে যে নিষেধাজ্ঞা নিয়েছিল, সেটা ভ্যাকেট হয়ে যাবে।

“এর অর্থ হল, এখন গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। তারা যদি না দেয়, তাহলে যে কোনো অ্যাকশন নিতে বিটিআরসির সামনে আইনগত আর কোনো বাধা থাকবে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে রেজা-ই-রাকিব বলেন, “এটা তো ফাইনাল সেটেলমেন্ট না। এখন দুই হাজার কোটি টাকা দিলে পরবর্তীতে যদি দেখা যায় মামলায় বিটিআরসি আরও বেশি টাকা পাবে, তাহলে গ্রামীণফোনকে তা দিতে হবে।

“এই টাকাটা গ্রামীণফোন যত তাড়াতাড়ি দেবে ততই তাদের জন্য ভাল। তবে আমরা এখন মোটামুটি সেটিসফায়েড,কারণ এটা তো ফাইনাল সেটেলমেন্ট না।”

বিটিআরসির আইনজীবী বলেন, “আমরা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি, এটা নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরে জানা যাবে যে বিটিআরসি আর কত পাবে।”

আদালতের আদেশের পর গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা আদালতের লিখিত আদেশের জন্য অপেক্ষা করছি। সম্মানিত আইসিটি উপদেষ্টা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে ইতিবাচক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরীক্ষা সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানের বিষয়ে আমরা আমাদের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করতে চাই।

“বিটিআরসির ওপর মাননীয় হাই কোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে এবং ত্রুটিপূর্ণ অডিট রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে গ্রামীণফোনের ওপর কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। আমরা আশা করছি আদালতের ওপর আস্থা রেখে বিটিআরসি হাই কোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে এবং গ্রামীণফোনকে পরিকল্পিত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং গ্রাহকদের সেবা প্রদানে বাধা দেবে না।” 

গ্রামীণফোনের আইনজীবী তাপস আপিল বিভাগের শুনানিতে বলেছিলেন, অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বিটিআরসির আরোপিত প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে নেওয়াসহ বিভিন্ন শর্তে ২০০ কোটি টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণফোন সেভাবেই এগোতে চায়।

অন্যদিকে বিটিআরসির আইনজীবী মাহবুবে আলম এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, পাওনার অন্তত ৫০ ভাগ অর্থ গ্রামীণফোনকে জমা দিতে হবে। এরপর বাকি অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।

কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিস পাঠানো হয় দুই অপারেটরকে। বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি তোলে গ্রামীণফোন ও রবি।

বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতের দ্বারস্থ হয়। তবে পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি।

এরপর গ্রামীণফোনের টাইটেল স্যুট (স্বত্ত্বের মামলা) নিম্ন আদালত গ্রহণ করলেও এর অধীনে বিটিআরসির দাবি আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন গত ২৮ অগাস্ট খারিজ করে দেয়।

ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গ্রামীণফোনের আপিলটি গ্রহণ করে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করলেও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান তাতে সাড়া না দিয়ে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

এরপর ২৩ অক্টোবর হাই কোর্টের আদেশর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিটিআরসি। সেই আবেদনের ওপর শুনানি করে আপিল বিভাগ রোববার গ্রামীণ ফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দিল।