বিটিআরসিকে ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি গ্রামীণফোন

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্য থেকে শুধু ২০০ কোটি টাকা শর্তসাপেক্ষে পরিশোধ করতে চায় গ্রামীণফোন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 07:07 AM
Updated : 14 Nov 2019, 01:36 PM

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চকে বৃহস্পতিবার একথা জানান গ্রামীণফোণের আইনজীবী শেখ ফজলে নূর তাপস।

এর বিরোধিতা করে বিটিআরসির আইনজীবী মাহবুবে আলম কোম্পানিটির কাছে ‘পাওনা’ আদায়ে বিটিআরসির নোটিস স্থগিত করে দেওয়া হাই কোর্টের আদেশ স্থগিতের আরজি জানান।

তবে আদালত তাতে সায় না দিয়ে এ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন রেখেছেন।

গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানিতে আরও ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন। বিটিআরসির পক্ষে আরও ছিলেন খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

শুনানিতে তাপস বলেন, গত ৩ অক্টোবর দুই অপারেটরের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সমঝোতা বৈঠকে বিটিআরসির আরোপিত প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে নেওয়াসহ বিভিন্ন শর্তে ২০০ কোটি টাকা পরিশোধের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, গ্রামীণফোন সেভাবেই এগোতে চায়।

প্রস্তাবের শর্তগুলো

  • দুই পক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করবে।
  • বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিস ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে; অন্যদিকে অপারেটররা মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবে।
  • অর্থমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, এনবিআর ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবেন
  • কমিটি গঠন ও কমিটির কাজ শুরুর আগে সাত দিনের মধ্যে গ্রামীণফোন ১০০ কোটি টাকা ও পরের এক মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দেবে; রবি দেবে দুই দফায় ৫০ কোটি টাকা।
  • এসব প্রস্তাব দুই অপারেটর তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে।

মাহবুবে আলম এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আদালতকে বলেন, “অন্তত পাওনার ৫০ ভাগ অর্থ গ্রামীণফোন জমা দিতে হবে। এরপর বাকি অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।”

এসময় তিনি বিটিআরসির বিপক্ষে যাওয়া হাই কোর্টের আদেশ স্থগিতের আরজি জানালে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নমনীয়ভাবে দেখতে হবে।’

হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর আপিল বিভাগ জানতে চেয়েছিল, বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির মধ্যে গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে। তারই জবাব সোমবার দিল গ্রামীণফোন।

বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পর বিকেলে এক বিবৃতিতে বলেছে, সমঝোতা বৈঠকের ‘ইতিবাচক আলোচনার’ প্রেক্ষিতে ‘বিটিআরসির আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তসাপেক্ষে প্রস্তাবিত একটি ‘সমন্বয়যোগ্য অর্থ’ জমা দেওয়ার কথা আদালতে তুলে ধরা হয়েছে।

বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবিকে অন্যায্য হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করে গ্রামীণফোন বলেছে, এই নিরীক্ষার ভিত্তিতে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা বন্ধ করা উচিত।

“আমরা আশা করছি, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও গ্রাহকদের সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আমদানিতে খুব শিগগিরই বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।”

গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তি দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি।

কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিস পাঠানো হয় দুই অপারেটরকে। বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি তুলে গ্রামীণফোন ও রবি।

বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতের দ্বারস্থ হয়। তবে পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি।

এরপর গ্রামীণফোনের টাইটেল স্যুট (স্বত্তের মামলা) মামলা নিম্ন আদালত গ্রহণ করলেও এর অধীনে বিটিআরসির দাবি আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন গত ২৮ অগাস্ট খারিজ করে দেয়।

ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গ্রামীণফোনের আপিলটি গ্রহণ করে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করলেও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান তাতে সাড়া না দিয়ে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

এরপর ২৩ অক্টোবর হাই কোর্টের আদেশর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিটিআরসি।