অপারেটর দুটি বলেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই পদক্ষেপের ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি এ খাতের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়ছে।
টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। টাকা শোধে বিলম্বের মাশুল ও সুদও ধরা হয়েছে এর মধ্যে।
প্রথম ধাপে ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিয়ে এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ২২ জুলাই বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ রেখেও কাজ না হওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর দুই অপারেটরকে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস পাঠায় বিটিআরসি।
টাকা না দেওয়ায় গ্রামীণফোন ও রবির টু জি ও থ্রি জি সেবার লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে এক মাস সময় দেওয়া হয় দুই অপারেটরকে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে বা পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে সোয়া ১২ কোটি গ্রাহকের এই দুই অপারেটরে প্রশাসক নিয়োগের মত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে গত ৫ সেপ্টেম্বর জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক।
অবশ্য তার আগেই গত ২৫ অগাস্ট রবি এবং ২৬ অগাস্ট গ্রামীণফোন ঢাকার দেওয়ানি আদালতে দুটি মামলা দায়ের করে। নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা আদায়ে বিটিআরসির দাবিকে ‘অযৌক্তিক ও ত্রুটিপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করে মীমাংসার দাবি জানানো হয় সেখানে।
বিটিআরসি ‘এনওসি’ দেওয়া বন্ধ রাখায় দুই অপারেটর সেবা চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যায় পড়ছে না। তবে তারা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বা বিটিএস স্থাপন করতে পারছে না, যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি পাচ্ছে না, নতুন কোনো প্যাকেজ তারা বাজারে ছাড়তে পারছে না, চলতি প্যাকেজে কোনো পরিবর্তনও আনতে পারছে না।
ডেটা নেটওয়ার্ক তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে বিটিআরসির ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিৎ নয়’ মন্তব্য করে গ্রামীণফোন বলেছে, “মূলত গ্রামীণফোনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বিরোধপূর্ণ অডিট দাবির পাওনা আদায় করতেই বিটিআরসি অনাপত্তিপত্র (এনওসি) প্রদান এবং প্যাকেজের অনুমোদন স্থগিত করেছে।
“বিটিআরসির এধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীসহ এর সাথে সম্পর্কিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
বিটিআরসির এনওসি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে ‘সব ধরনের বিনিয়োগ’ এখন বন্ধ রয়েছে জানিয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর ফলে এ বছরের জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ বছর আমাদের ৪.৫ জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা ছিল সেটাও এখন বন্ধ রয়েছে।”
জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সম্প্রসারণের যে লক্ষ্য সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা অর্জন করাও এর ফলে কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন সাহেদ আলম।
তিনি বলেন, “গ্রাহক স্বার্থেই এনওসি বন্ধের মত বিনিয়োগবিরোধী সিদ্ধান্ত বিটিআরসির পুর্নবিবেচনা করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।”
দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা ১৬ কোটি ৮২ হাজার নিবন্ধিত মোবাইল সিমের মধ্যে ৭ কোটি ৪৭ লাখ সিম গ্রামীণফোনের। আর রবির ৪ কোটি ৭৬ লাখ সিম রয়েছে গ্রাহকের হাতে। এই হিসাবে মোট গ্রাহকের ৪৬.৪৯ শতাংশ গ্রামীণফোন এবং ২৯.৬৫ শতাংশ রবির সেবা নিয়ে থাকেন।
দেশের ৯ কোটি ৪৪ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ৮ কোটি ৮৬ লাখই মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যা মোট গ্রাহকের ৯৩.৮৭ শতাশংশ।
দুই অপারেটরের এই বক্তব্যের বিষয়ে বিটিআরসির কর্মকর্তাদের কেউ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।