টাকা না পেয়ে গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিল বিটিআরসি

তাগাদা দেওয়ার পরও নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা পরিশোধ না করায় দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডইউথ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2019, 02:24 PM
Updated : 4 July 2019, 02:50 PM

ইন্টারনেট গেইটেওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনা দেওয়ার ফলে গ্রামীণফোনের জন্য বরাদ্দ ব্যান্ডইউথ ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশ এবং রবির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সীমিত হবে বলে বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তকে ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে বর্ণনা করে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি বলেছে, ব্যান্ডইউথ সীমিত করা হলে তাতে সাধারণ গ্রাহকই সমস্যার মুখে পড়বে।  

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আরেক অপারেটর গ্রামীণফোন বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।

গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডইউথ সীমিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইআইজিগুলোকে বৃহস্পতিবার আলাদা দুটো নোটিস পাঠায় বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ।

গ্রামীণফোনের বিষয়ে পাঁচটি আইআইজি প্রতিষ্ঠানকে পাঠানো নোটিসে বলা হয়, “তাগাদা দেওয়া সত্বেও নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ব্যন্ডইউথ ক্যাপাসিটি আইআইজি প্রান্তে সীমিত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হল।”

একইভাবে রবির বিষয়ে পাঁচটি আইআইজি প্রতিষ্ঠানকে পাঠানো নোটিসে বলা হয়, নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ব্যন্ডইউথ ক্যাপাসিটি কমানোর এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

এ দুই অপারেটরকে নতুন করে ব্যান্ডইউডথ বরাদ্দ বা বাড়ানো থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট আইআইজিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যন্ডইউডথ ক্যাপাসিটি সীমিত করায় কলড্রপ বাড়তে পারে। পাশাপাশি গ্রাহকের ইন্টারনেটের গতি কমতে পারে।

>> দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা ১৬ কোটি ৮২ হাজার নিবন্ধিত মোবাইল সিমের মধ্যে ৭ কোটি ৪৭ লাখ সিম গ্রামীণফোনের। আর রবির ৪ কোটি ৭৬ লাখ সিম রয়েছে গ্রা্হকের হাতে।

>> এই হিসাবে মোট গ্রাহকের ৪৬.৪৯ শতাংশ গ্রামীণফোন এবং ২৯.৬৫ শতাংশ রবির সেবা নিয়ে থাকেন।

>> দেশের ৯ কোটি ৪৪ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ৮ কোটি ৮৬ লাখই মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যা মোট গ্রাহকের ৯৩.৮৭ শতাশংশ।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গ্রামীণফোন ও রবির কাছে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা থাকার কথা দাবি করে ২০১৮ সালের অগাস্টে দুই অপারেটরকে চিঠি দিয়েছিল বিটিআরসি।

দুই কোম্পানিই তখন বিটিআরসির দাবি নিয়ে আপত্তি তোলে এবং সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেয়।

কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টি চাপিয়ে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম।

এক লিখিত বিবৃতিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মোবাইল গ্রাহক নানাবিধ সমস্যার মুখে পড়বে। প্রশ্নবিদ্ধ নিরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে মোবাইল গ্রাহকদের জন্য এ ধরনের ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত দিয়ে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল গ্রাহকদের মোবাইল সেবার মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিটিআরসি ।”

শাহেদ আলম বলেন, “রবি সীমিত ব্যান্ডউইথ দিয়েই গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে পারবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

দেশের প্রায় অর্ধেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর অপারেটর গ্রামীণফোনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পদক্ষেপে তারা বিস্মিত। ওই নির্দেশনার বৈধতা নিয়েও তাদের প্রশ্ন রয়েছে।

“সালিশের মাধ্যমে নিরীক্ষার বিষয়টির সমাধানে আসতে আমরা যে প্রস্তাব করেছিলাম, বিটিআরসির এই নির্দেশনার তা প্রত্যাখান করা হল। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার বদলে জোর করে ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হল।

“এই নির্দেশনা যেভাবে দেওয়া হয়েছে, তাতে আমাদের গেটওয়ে পার্টনাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কোটি কোটি গ্রাহক সমস্যায় পড়তে পারেন।”  

দুই অপারেটরের অভিযোগের বিষয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. জাকির হোসেন খাঁন এক লিখিত বিবৃতিতে শুধু বলেছেন, “অপারেটরদ্বয়ের নিকট অডিট আপত্তিকৃত বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কমিশন আশা করছে, শীঘ্রই এ পাওনা পরিশোধ করে অপারেটর দুটি স্বাভাবিক গতিতে গ্রাহকদের সেবা প্রদানে সচেষ্ট হবে।”