সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘হাপাগ-লয়েড’র এদেশীয় এজেন্ট ও মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা কর ফাঁকি ও অর্থপাচারের অভিযোগে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন হয়েছে।
Published : 12 Feb 2018, 03:54 PM
রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উঠলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর আপত্তিতে তা তিন সপ্তাহের জন্য মুলতবি হয়।
রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহীন খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
শাহীন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড ২০১৪ সালে হাপাগ-লয়েডের মালামাল সরবরাহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত (আমদানি সরবরাহ ২ শতাংশ, রপ্তানি সরবরাহ ২.৫-৫ শতাংশ) কমিশন অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করে।
“কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ৩৭.৫ শতাংশ আয়কর না দিয়ে ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছে। একই সঙ্গে অপ্রদর্শিত আয় পাচার করেছে তারা।”
মতিউর রহমান নামে একজন আইনজীবীর দায়ের করা ওই রিট আবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে হাপাগ-লয়েডের এজেন্ট ছিল এসডব্লিউ শিপিং কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সে বছর তারা কন্টেইনার সরবরাহ করে কমিশন হিসেবে সাত কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় করে।
“অথচ জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড ২০১৪ সালে তাদের অর্থনৈতিক নিরীক্ষায় দেখিয়েছে, এসডব্লিউ শিপিং কোম্পানির চেয়ে দ্বিগুণ কন্টেইনার সরবরাহ করে আয় করেছে মাত্র পাঁচ কেটি টাকা।”
রিট আবেদনে বলা হয়, হাপাগ-লয়েড ছাড়াও ওই বছর সিঙ্গাপুরের ওইএল ও বিএলপিএল’র এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ৮ কোটি ১২ লাখ ৪০১ টাকা আয় হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে জিবিএক্স। সে হিসাবে ২০১৪ সালে কোম্পানিটির প্রদর্শিত মোট আয় ১২ কোটি ১২ লাখ ৪০১ টাকা।
পুরো আয়ের উপর তাদের ৩৭.৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়ার কথা থাকলেও জিবিএক্স লজিস্টিকস ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিয়েছে বলে রিটকারীর অভিযোগ।
রিটকারীর অভিযোগ, প্রদর্শিত আয়ের উপর প্রতিষ্ঠানটি মোট ৮৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬২৮ টাকা, যেখানে তাদের আয়কর হয় ৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ১৫০ টাকা।
শাহীন খান বলেন, এ বিষয়গুলো তুলে ধরে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড ও ‘হাপাগ-লয়েড’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকে দুইবার উকিল নোটিশ দিয়েছিলেন রিট আবেদনকারী।
কিন্তু সরকারের এ তিন সংস্থা থেকে কোনো জবাব না পেয়ে গত সপ্তাহে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী মতিউর রহমান।
জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচারের অভিযোগ আনার পরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিস্ক্রিয়তা কেন আইনবিরুদ্ধ ঘোষণ করা হবে না এবং জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের কাস্টমস লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে।
এছাড়া হাপাগ-লয়েড ও জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের চুক্তিসহ সব নথি প্রকাশ করতে নির্দেশনা চেয়েছেন রিটকারী।
সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ আইনজীবী এর আগেও একই বিষয়ে রিট আবেদন করেছিলেন। রিটটি খারিজ করে দিয়েছিল আদালত।
“এখন তিনিই আবার জনস্বার্থে রিট আবেদন করেছেন। এটি শুনানির জন্য উঠলে আমি আপত্তি জানালে আদালত জনস্বার্থের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে এবং দুদকের আইনজীবীকে রিট আবেদনের নথি সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়ে শুনানি তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছে।”
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জিবিএক্সের পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা রিট আবেদনের খবর শুনেছেন, তবে তা এখনও দেখেননি।
নথিপত্র দেখার আগে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অনীহা জানান তিনি।
“আমাদের কোম্পানির লইয়ার যারা আছেন, উনারা এসব ডকুমেন্ট বের করে নিক, আমরা আসলে কোনো ডেটা বা কোনো কিছু না দেখে কোনো রকম কমেন্ট করতে অপারগ।”
এই ধরনের আবেদনের পেছনে ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ কেউ রয়েছে বলে সন্দেহ ওয়ালিদের।
“গত ২০ বছরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম লোকজন দিয়ে, উকিল সাহেবদের সামনে দাঁড় করিয়ে পেছনে আমাদের কম্পিটিটররা অনেক কিছু করে আর কি হয়রানি করার জন্য।
“জানি না আসলে এটা কী? এটা আমরাও আজকে শুনেছি। কাগজপত্র পেলে তখন একটা কিছু বলতে পারব। না দেখা পর্যন্ত কোনো কমেন্ট করতে পারছি না।”