সদস্য দেশগুলোকে সমঝোতায় আসার ডাক দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্রতম ও দ্বীপ প্রদেশ বালিতে শুরু হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নবম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন।
Published : 03 Dec 2013, 05:37 PM
মঙ্গলবার বিকেলে বালির নুসা দুয়া আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (বিএনডিসিসি) চারদিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়োধোইয়োনো।
উদ্বোধনী ভাষণে সুসিলো বামবাং বলেন, ডব্লিউটিওর সদস্য দেশগুলোর সামনে দীর্ঘ দিনের ঝুলে থাকা বৈশ্বিক বাণিজ্য আলোচনাকে একটি পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে এখন। বালি সম্মেলন থেকে সে পরিণতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য এই কয়দিন সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি আশাবাদী মানুষ। আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মেলনে সবাই একটি ঐকমত্যে পৌঁছাবে, যার মধ্য দিয়ে উন্নত, উন্নয়নশীল এবং এলডিসি সবাই সমানভাবে উপকৃত হবে।
“আমার বিশ্বাস, উন্নত, উন্নয়নশীল এবং এলডিসিগুলোর মধ্যে দীর্ঘদীন ধরে ঝুলে থাকা সমস্যা বালিতে সমাধান হবে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব নতুন যুগের সুচনা করবে।“
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ও সম্মেলনের চেয়ারম্যান গিতা বীরজওয়ান ও ডব্লিটিওর মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো ।
গিতা বলেন, “আশা করি, সম্মেলনে নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটাবেন। তারা এলডিসির স্বার্থ সংরক্ষণে একমত হবেন এবং এসব বিষয়ে চুক্তি করবেন।”
তিনি বলেন, “আমি আশা করি, এবার উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এলডিসির স্বার্থ সংরক্ষণে সহযোগিতার মনোভাব দেখাবেন। বালিতে যদি সমঝোতা না হলে তা উন্নত, উন্নয়নশীল ও এলডিসি- সবার জন্যই হবে একটা দুঃসংবাদ।”
এবারের সম্মেলনে মূলত তিনটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে বালি প্যাকেজ চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। এগুলো হল- বাণিজ্য সহজীকরণ (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন) বিষয়ে চুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কৃষি ভর্তুর্কি ও এলডিসিগুলোর সুবিধা।
এর মধ্যে সম্মেলনকে সামনে রেখে উন্নত দেশগুলোকে কৃষি খাতে রপ্তানি ভর্তুকি তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি-২০। অবশ্য গত ১০ বছর ধরেই তারা এই আহ্বান জানিয়ে এলেও উন্নত দেশগুলো আমলে নিচ্ছে না।
জেনেভাতে ডব্লিউটিওর প্রধান কার্যালয়ে সম্মেলন পূর্ববর্তী আলোচনা আগেই শেষ হয়েছে। ‘বালি প্যাকেজে’র জন্য নেগোসিয়েশন বা আলোচনা করে সমঝোতায় আসার বিষয়টি জেনেভাতেই নিষ্পত্তির চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। এ অবস্থায় সম্ভাব্য বিভিন্ন চুক্তির নথিপত্র নিয়ে বালিতেও আলোচনা করতে হবে, যা সম্মেলনের সাফল্যকে ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
মূল আলোচনা বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চলবে। বুধবার ডব্লিউটিওর ১৬০তম সদস্য হিসেবে ইয়েমেনের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে।
সম্মেলনে বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বালি সম্মেলনে মোটা দাগে বাণিজ্য সহজীকরণ বা ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, কৃষি এবং এলডিসির জন্য উন্নয়ন প্যাকেজ নিয়ে অলোচনা হবে।
“প্যাকেজের মধ্যে আবার চারটি ইস্যু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, সেবা খাতের বাণিজ্যে এলডিসির জন্য ছাড়, রুলস অব অরিজিন বা রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের উৎস সম্পর্কিত শর্ত শিথিল করা এবং তুলা ইস্যু।”
শুল্কমুক্ত সুবিধা
২০০৫ সালে ডব্লিউটিওর হংকং সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ছিল- উন্নত দেশগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেবে। শতভাগ পণ্যে না হলেও অন্তত ৯৭ শতাংশ পণ্যে এই সুবিধা দিতে হবে।
আট বছর পেরিয়ে গেলেও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় বালি সম্মেলনে এই বিষয়ে তাগিদ দেবে বাংলাদেশ।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি নিজস্ব আইনের আওতায় শুধু আফ্রিকার দেশগুলোকে তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে; ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্তের আলোকে নয়।
বাণিজ্য সচিব বলেন, “তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে এ সুবিধা দিতে হলে তাদেরকে (যুক্তরাষ্ট্র) রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি
দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর বালি সম্মেলনে ডব্লিউটিওর আওতায় বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়ে একটি চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি আধুনিক ও উন্নত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যাতে বাণিজ্যের জন্য সময় ও ব্যয় কমে। এই চুক্তির বিষয়বস্তু বালিপূর্ব জেনেভা আলোচনায় চূড়ান্ত হয়নি।
সেবা খাতের বাণিজ্যে ছাড়
দীর্ঘদিন আলোচনার পর ২০১১ সালে জেনেভাতে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে সেবা খাতের বাণিজ্যে এলডিসির জন্য ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী, এলডিসিগুলোকে উন্নত দেশগুলোর সেবা খাতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার কথা কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যও বালি সম্মেলনে বাংলাদেশসহ এলডিসিগুলো জোর প্রচেষ্টা চালাবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।
রুলস অব অরিজিন
রুলস অব অরিজিন হচ্ছে শুল্কমুক্ত বা যে কোনো অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার আওতায় রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন শর্ত।
মাহবুব আহমেদ বলেন, রুলস অব অরিজিনের আওতায় শর্ত সহজ ও সরল না হলে তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শুল্কমুক্ত সুবিধা স্কিম কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়ে।
রুলস অব অরিজিনকে সহজ, স্বচ্ছ ও শিথিল করার লক্ষ্যে বালিতে একটি সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।