Published : 17 Feb 2024, 09:10 PM
নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস চেয়ারম্যান- এমন সাতটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ বলেছেন, সবগুলো প্রতিষ্ঠানই তাদের ব্যাংকের অর্থে গড়া হয়েছে। সেগুলোতে আইনগতভাবেই চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে ‘জবরদখল’ এর কিছু নেই।
প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জবর দখলের’ বিষয়ে ইউনূসের অভিযোগের এক দিন পর শনিবার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল মজিদ।
তিনি উল্টো ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন, বলেছেন এর তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে আছে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় গড়া প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছরের হিসাবও পাওয়া যাচ্ছে না, এমন তথ্যও দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
প্রতিষ্ঠান জবরদখলের অভিযোগ এনে ইউনূসের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সব প্রতিষ্ঠানই তৈরি করা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায়। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের। সাতটা প্রতিষ্ঠানে আইন মত চিঠি পাঠানো হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনি অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনা হবে। এগুলো অধ্যাপক ইউনুসের প্রতিষ্ঠান নয়। টাকাগুলো গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গেছে।’’
যে সাতটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এই আলোচনা, সেগুলো হল: গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ সামগ্রী ও গ্রামীণ শক্তি। সাতটি প্রতিষ্ঠানেরই চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনুস।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক।
ড. ইউনূসের কী অভিযোগ
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস দাবি করেন, গ্রামীণ ব্যাংক তাদের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে তাদের মতো করে চালাচ্ছে। পুলিশের কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইলেও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরে চিড়িয়াখানা সড়কে গ্রামীণ টেলিকম ভবন। এই ভবনে ১৬টি কোম্পানির কার্যালয়, যার প্রতিটির চেয়ারম্যান ড. ইউনূস।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ভবনের আটটি অফিস দখল করে নেওয়া হয় বলে দাবি করে তিনি বলেন, “ওই দিন থেকে তারা ভবনে তালা মেরে রেখেছে। নিজের বাড়িতে অন্য কেউ যদি তালা মারে, তখন কেমন লাগার কথা আপনারাই বলেন। তাহলে দেশে আইন–আদালত আছে কীসের জন্য। তারা আদালতে যেতে চায় না। আমরা জীবনে বহু দুর্যোগ দেখেছি। এমন দুর্যোগ আর কখনও দেখিনি।”
গ্রামীণ ব্যাংকের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথাও বলেন সরকারি প্রজ্ঞাপনে প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান
ইউনূসের অভিযোগ খারিজ করে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল মজিদ বলেন, ‘‘আইনি বৈধতার ভিত্তিতে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক (আরজেএসসি) হতে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডামের সার্টিফাইড কপি তোলা হয়েছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেখানে লেখা বিধি মোতাবেক পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইনের বাইরে, কিছুই হয়নি।’’
গ্রামীণ ব্যাংকের সব টাকা এর বিত্তহীন, দরিদ্র, ভূমিহীন ও অসহায়ের কাজে ব্যয় করার বিধান রয়েছে জানিয়ে কত টাকা, কোথায় গেছে তার হিসাবও চান তিনি। বলেন, ‘‘গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্য থেকে অনেক কিছু করা সম্ভব ছিল। এত প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।’’
বিদেশি অনুদান নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘এনডাউমেন্ট ফান্ড’ নামে গ্রামীণ কল্যাণকে টাকা দেওয়া হয় জানিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেন, “৪৪ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে হস্তান্তর করা হয়। অনুদানসহ সব মিলিয়ে ৪৪৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দেওয়া হয় গ্রামীণ কল্যাণে। এসবই গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা।’’
‘মানিলন্ডারিং করেছেন ইউনূস’
প্রতিষ্ঠার সাল ১৯৮৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষার দাবি করে গ্রামীণ ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেন, “১৯৯০ সালের আগে কোনো লেজার পাওয়া যায়নি।”
মুহাম্মদ ইউনূস মানি লন্ডারিং করেছেন অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “সেই প্রমাণ রয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড-এসব প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।’’
গ্রামীণ ব্যাংকের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আক্তার বলেন, ‘‘গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষ। সেই ব্যাংকের টাকায় যে প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি, তার মালিক সদস্যরা।’’
গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তোলা এসব বক্তব্যের বিষয়ে ড. ইউনূসের কোনো প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ, পরিচালক মোহাম্মদ জুবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।