টানা নয় বছর বেসরকারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান।
Published : 04 Sep 2024, 10:48 PM
এবার আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্রদের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; এতে বেসরকারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ হারালেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বুধবার ব্যাংকটির ছয়জনের নতুন পর্ষদ গঠন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মেহমুদ হোসেনকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক আইএফআইসি ব্যাংকের আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে চারজন স্বতন্ত্র ও সরকারের দুইজন প্রতিনিধি পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে।
পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আগের সরকারের প্রভাবশালী ও সুবিধাভোগীদের সরিয়ে দেওয়ার মধ্যে এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমানের নেতৃত্বাধীন আইএফআইসি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হল। তিনি টানা নয় বছর ধরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
এতে করে বেসরকারি এ ব্যাংকের পর্ষদে নিয়ন্ত্রণ হারালেন সালমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান। এর আগে সরকার পতনের পর দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ হারান শায়ান। ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে গত ১৩ অগাস্ট তার পরিচালক হওয়ার প্রস্তাবে আপত্তি দিয়ে ব্যাংকটিকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৫ সাল থেকে সালমান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। এর আগে ২০১০ সালে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর শায়ান ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
নতুন পর্ষদ
আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে নবগঠিত পর্ষদ গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করাসহ জনস্বার্থে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র চার পরিচালক করা হয়- ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. মেহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবতাদুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ জহির ও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ কাজী মো. মাহবুব কাশেমকে।
এছাড়া ব্যাংকে সরকারের ৩২ দশশিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকায় অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা ও যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ মনজুরুল হককে প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নয়জনের এ পর্ষদে চেয়ারম্যান করা হয় সাবেক ব্যাংকার মেহমুদ হোসেনকে।
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান রহমানকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। পরে ১৩ অগাস্ট ঢাকার পুলিশ তাকে সদরঘাট থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ গ্রেপ্তার করে।
এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা ১ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক এ সংসদ সদস্যকে কয়েকদফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমানকে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামার কথা জানিয়েছে।
পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) বেক্সিমকোসহ আরও আলোচিত আরও চার কোম্পানি বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসার মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর কথা জানায়। তাতে সালমান রহমানের নামও আসে।
এরমধ্যেই সালমান এবং তার ছেলে ও পুত্রবধূর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশও দিয়েছে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা বিভাগ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তাদের পরিচালিত সব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ৩০ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।