দীর্ঘ বিরতি দিয়ে গতবছর জুন থেকে সরকার খোলা বাজার থেকে যে এলএনজি কিনেছে, তার দাম ছিল প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১৩ ডলার থেকে ১৫ ডলারের মধ্যে।
Published : 23 Jan 2024, 07:19 PM
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির শঙ্কার মধ্যে বিশ্ববাজার থেকে প্রতি ইউনিট ১০ দশমিক ৮৮ ডলার দরে এক কার্গো এলএনজি কিনছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এলএনজি কেনার প্রস্তাবসহ মোট ১২টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
দীর্ঘ বিরতি দিয়ে গতবছর জুন থেকে সরকার খোলা বাজার থেকে যে এলএনজি কিনেছে, তার দাম ছিল প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১৩ ডলার থেকে ১৫ ডলারের মধ্যে।
মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন না করে বৈঠকের আলোচ্য সূচি ও অনুমোদন হওয়া বিষয়গুলো গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের পর মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ এগ্রিমেন্টে থাকা ২২টি কোম্পানির মধ্যে দুটি কোম্পানি এলএনজি বিক্রি করার আগ্রহ প্রকাশ করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন দরদাতা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার এর কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৮৮ ডলার হিসাবে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত হয়।
এতে মোট খরচ হচ্ছে ৪৭০ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ টাকা। গত ডিসেম্বরে সর্বশেষ যে এলএনজির কার্গো কেনা হয়েছিল, সেখানে খরচ হয়েছিল ৫৪২ কোটি ২৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৮০ টাকা।
সার কেনার ৮ প্রস্তাব অনুমোদন
নির্বাচন ও অন্যান্য কারণে দীর্ঘ বিরতির পর কৃষি মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পৃথক আটটি প্রস্তাবে মোট দুই লাখ ২০ হাজার টন বিভিন্ন রকম রাসায়নিক সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি।
দুই কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার বা ২৫৯ কোটি ১৬ লাখ টাকায় সৌদি আরব থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার কেনা হবে।
এক কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার বা ১২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় মরক্কো থেকে কেনা হবে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার।
দুই কোটি ১৯ লাখ ডলার বা ২৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকায় মরক্কো থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
৯০ লাখ ৬৩ হাজার ডলার বা ৯৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার টাকায় রাশিয়া থেকে কেনা হবে ৩০ হাজার টন এমওপি সার।
৯৪ লাখ ২ হাজার ৬০০ ডলার বা ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় কাতার থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।
৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ ডলার বা ১০৪ কোটি ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকায় কাফকোর কাছ থেকে কেনা হবে ইউরিয়া সার।
এক কোটি ৮৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ ডলার বা ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ ৭২ হাজার টাকায় সৌদি আরব থেকে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনা হবে।
টিসিবির কেনাকাটা
এদিন সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে তিনটি দেশীয় কোম্পানি মজুমদার প্রডাক্টস, মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিল ও আলী নেচারাল অয়েল মিল অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে এক কোটি ২০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল কেনার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট খরচ হবে ১৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তাতে প্রতি লিটার তেলের দাম পড়ছে ১৫৮ টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জানান হয়, টিসিবির জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২৮ কোটি ৮০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ৪৫ লাখ লিটার তেল কেনা হয়ে গেছে।
অপর দুটি প্রস্তাবে ১০ হাজার টন করে মোট ২০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে ২০১ কোটি ৫৯ লাখ টাকায়।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জানান হয়, উন্মুক্ত একটি দরপ্রস্তাবে ভারতের উমা এক্সপো লিমিটেড একমাত্র দরদাতা ছিল। তাদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ১০১ দশমিক ১৩ টাকা দরে মোট ৯৬ কোটি ১৪ লাখ টাকায় ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হয়।
অপর একটি উন্মুক্ত দরপ্রস্তাবে মোট দুটি আবেদন জমা পড়ে। এরা হচ্ছে বগুড়ার রয় অ্যাগ্রো ফুড এবং ঢাকার নাবিল নাবা ফুড। মূল্যয়ন কমিটি বিবেচ্য মনে করায় দুটি কোম্পানির কাছ থেকে প্রতিকেজি ১০৫ টাকা ৪৫ পয়সা দরে মোট ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনে। এতে মোট খরচ হয় ১০৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৮৮ হাজার টন মসুর ডাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। ইতোমধ্যে এক লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টন মসুর ডাল কেনা হয়ে গেছে।