বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্যবসায়ীদের দিক থেকে বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিষয়ে সঠিক বার্তা দেওয়া গেছে বলে মনে করছে এফবিসিসিআই।
এদিক থেকে বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩ অনেকটা সফল জানিয়ে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আসার বিষয়ে আশাবাদের কথা শোনালেন সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিন।
সোমবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনের এ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগমুখী হবেন বিদেশি উদ্যোক্তারা- এ সম্মেলনের মাধ্যমে তা জানাতে সফল হয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি তিনটি কারণে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশকে প্রাধান্য দেবে বলে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এদেশের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ থেকে সহজেই লাভবান হতে পারবেন বিদেশি উদ্যোক্তারা। সঙ্গে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের বিশাল ভোক্তা শ্রেণি, যাদের লক্ষ্য করেই অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ আসবে বলে তিনি আশাবাদী।
এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক সেই সুবিধার কারণে এখান থেকে কয়েকটি দেশে সহজেই পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
একই সঙ্গে সহজে ও সস্তা মজুরিতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের সুযোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
জসিম উদ্দিন বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে বেসরকারি খাত ও সরকারের মধ্যে একটি সেতু বন্ধন তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে এফবিসিসিআই।
এতে অন্যান্য সম্ভাবনমায় খাতের পাশাপাশি জ্বালানি, তৈরি পোশাক, ওষুধ, অবকঠামো, প্রযুক্তি, কৃষি অর্থনীতি ও অটোমোবাইল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা বিদেশি প্রতিনিধিদের সামনে আনা হয়। বিনিয়োগকেন্দ্রীক সম্মেলনের উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল হয়েছে বলে দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৮০০ অতিথির অংশ নেওয়ায় আমাদের আত্মবিশ্বাস আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে।
কয়েকটি অধিবেশনে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘‘কৃষি বাণিজ্য সম্প্রসারণের যে সুযোগটি দেখা যাচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছে।’’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘‘এসএমএই খাত আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এজন্য এখাতে বিনিয়োগ ও বড় শিল্প প্রতিষ্টানের সঙ্গে তাদের পণ্য কাঁচামাল হিসেবে নিতে একটি সংযোগ স্থাপনের কথা আলোচিত হয়েছে। তাতে বড় ও ছোট শিল্প উভয়েরই টিকে থাকা সহজ হবে। এজন্য সরকারি যে নীতিমালা ও কর ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’’
সম্মেলনে সৌদি ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্বাক্ষর সই হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে সৌদির রেড সি পোর্ট এর ১৫ কোটি ডলারের একটি বিনিয়োগ সমঝোতা রয়েছে।
এদিন ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ শীর্ষক অধিবেশনে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলদেশের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয় বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোরিয়া একটি সফল দেশের উদাহরণ। এর মাধ্যমে সহজে অর্থায়ন পাওয়া যায়। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ফলপ্রসু। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা বাংলাদেশে খুব তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ শীর্ষক অধিবেশনে ডান অ্যান্ড ব্রাডস্ট্রিট এসএএমই এর প্রধান নির্বাহী রাজেশ মির চান্দানি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিদেশি বিনিয়োগের ভালো স্থান হতে পারে।
‘ফার্মাসিটিউক্যালস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার’ শীর্ষক অধিবেশনে মেডট্রনিক বাংলাদেশ এর কান্ট্রি প্রধান দেবজ্যোতি ব্যানার্জি বলেন, বাংলাদেশে ওষুধ তৈরির ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। বড় একটি বাজার হতে পারে। এ খাতে যদি বিনিয়োগ করা যায় তাহলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
‘সার্কুলার ইকোনোমি’ শীর্ষক অধিবেশনে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিদেশি উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় যদি এখানে সুযোগ-সুবিধা বেশি হয় তাহলে বিনিয়োগ করবে। তা না হলে অন্য দেশে চলে যাবে। এদিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এ অধিবেশনে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইইউ শুধু বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজারই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজার। বিশ্ব চক্রাকার অর্থনীতি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে বাংলাদেশকেও এ বিষয়ে আরও অগ্রগতির জন্য তাগিদ দেন তিনি।
১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এ সম্মেলনে ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
সংগীতে অসামান্য অবদান রাখায় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের হাতে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন, বিএসআরএম এর চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবর আলীকে।
বিশেষ অবদান রাখায় শিল্পে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোবারক আলী, বাণিজ্যে এনার্জি প্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, সেবা খাতে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাজিম উদ্দিন, তরুণ উদ্যোক্তা বসুন্ধরা পেপারস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফওয়ান সোবহান, নারী উদ্যোক্তা কারিগর এর ম্যানেজিং পার্টনার তানিয়া ওহাব, এসএমই খাতে ক্রিয়েশন এর রাশেদুল করিম মুন্না ও টাম্পাকো ফয়েলস এর সাফিয়াস সামি আলমগীরকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় এফবিসিসিআইয়ের প্রথম নারী পরিচালক ও বাংলা ক্রাফটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মালেকা খান, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে।