পাইলট নিয়োগে ‘অনিয়ম’: বিমানের ব্যাখ্যা, তদন্তের কথা বললেন প্রতিমন্ত্রী

“কেউ কিন্তু ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে নেই। তদন্ত কমিটি হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2023, 07:23 PM
Updated : 2 March 2023, 07:23 PM

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সবশেষ ব্যাচে আটজন ক্যাপ্টেন (পাইলট) ও ছয়জন ফার্স্ট অফিসার (কো-পাইলট) নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ; তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সটি জানিয়েছে, নিয়োগের এক বছরে ১৪ জনের মধ্যে পাঁচজন (চারজন ক্যাপ্টেন ও একজন ফার্স্ট অফিসার) প্রশিক্ষণ শেষ করে ফ্লাইট পরিচালনা করছেন। ছয়জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং বাকিদের মধ্যে এক নারী পাইলটের জাল সনদ ব্যবহারের অভিযোগে তদন্ত চলছে, একজন কাজে ইস্তফা দিয়েছেন আর একজন প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন না।

২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে চলতি বছরের শুরুতে এসব পাইলটদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ জানিয়ে আসছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটদের সংগটন বাপা। তখন এ আপত্তি আমলে নেয়নি বিমান এবং নিয়োগ পাওয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে।

সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে নতুন করে খবর আসার পর অভিযোগ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহাবুব আলী ঢাকায় পর্যটন মেলার উদ্বোধন শেষে কথা বলেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “রিপোর্টগুলো একেবারে উড়িয়ে দেওয়ারও না আবার সমস্ত ঘটনাটা সত্য তাও বলা যাবে না। আমরা চাচ্ছি এই বিষয়টাতে স্বচ্ছতা আনার। সে বিষয়গুলোতে অভিযোগ আছে, প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় আছে সে জায়গাগুলো খতিয়ে দেখা, আইনানুগভাবে যেটা হয় নিয়মানুযায়ী সেটাই করা হবে।”

অনিয়মের পরও নিয়োগপ্রাপ্তদের ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “একটা অভিযোগ যখন আসে তখন তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আইন অনুযায়ী একটা তদন্ত কমিটি করতে হয়। এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে আমাদের তদন্ত কমিটি আছে। কমিটি যে সুপারিশ করবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“কেউ কিন্তু ব্যবস্থার ঊর্দ্ধে নেই। তদন্ত কমিটি হবে। এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কিন্তু কাউকেই ছাড়ি নাই।”

সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়োগপ্রাপ্তদের কয়েকজন সেই প্রশিক্ষণ উত্তীর্ণ হতে না পারায় এক বছরেও ফ্লাইট পরিচালনায় যোগ দিতে পারেননি এবং একজন নারী পাইলটের বিরুদ্ধে সনদ ও অন্যান্য নথি জাল করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে তদন্ত চলছে।

বিমানে আলোচিত এ নিয়োগের খবর প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার এয়ারলাইন্সটির জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর বোয়িং ৭৭৭ এর ক্যাপ্টেন ও ফার্স্ট অফিসারের পদ শূন্য থাকায় আটজন ক্যাপ্টেন ও ছয়জন ফার্স্ট অফিসারকে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে গত ২০২১ এর ২৩ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সংস্থাটির নীতিমালা অনুযায়ী আটজন ক্যাপ্টেন ও ছয়জন ফার্স্ট অফিসারকে শর্তসাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়।

“নির্বাচিত পাইলটরা নির্ধারিত প্রশিক্ষণ শেষ করে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম ফ্লাইট থেকে বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন। এর মধ্যে চারজন ক্যাপ্টেন ও একজন ফার্স্ট অফিসার প্রশিক্ষণ শেষ করে ফ্লাইট পরিচালনা করছেন।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “অবশিষ্ট পাইলটদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করেছেন, একজন প্রশিক্ষণে অংশ নেননি। অবশিষ্ট একজনের শিক্ষাগত সনদ যথাযথ না হওয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত করেছে এবং তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। বাকি ছয়জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।”

তবে যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে সেই নারী পাইলটের নাম উল্লেখ করা হয়নি বিজ্ঞপ্তিতে।

এর আগে বিমানের এ নিয়োগ নিয়ে ২০২২ সালের ২৫ অগাস্ট বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাহিদ হাসানকে চিঠি দেয় পাইলটদের সংগঠন বাপা।

ওই চিঠিতে বলা হয়, “সম্প্রতি বিমানের পাইলট নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিমানের ট্রেনিং বিভাগের প্রধানকে (সিওটি)। তার স্ত্রী পাইলট হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, যা নিশ্চিতভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব।

“… নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া ওই ফ্লাইট কর্মকর্তারা নিয়মিত ফ্লাইট কর্মকর্তা হিসেবে ফ্লাই করতে পারবেন না, যতক্ষণ না তারা ৩০০ ঘণ্টা ফ্লাই করছেন। এখন এসব ফ্লাইট কর্মকর্তাদের জন্য এখন বিমান বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।”

ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, “বিমানের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ চালানোর জন্য নতুন করে কোনো পাইলট নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে ক্রু নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে এবং ক্রুদের বাছাই করে মেইল পাঠানো হয়েছে। ফ্লাইট কর্মকর্তা পদে একজন এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ভুয়া সনদ দিয়েছেন। তিনি সিমুলেটর ট্রেনিং করেননি। পরে তাকে বিমানের খরচে এই প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়, যা সম্পূর্ণ অপচয়।

“বিমানের বোয়িং-৭৭৭ এর জন্য জ্যেষ্ঠ পাইলটদের পাশ কাটিয়ে একজন জুনিয়র পাইলটকে পাইলটদের প্রশিক্ষক বানানো হয়েছে, যা অনৈতিক। এতে জ্যেষ্ঠ পাইলটদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।”

বিমানে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে এর আগেও অনিয়মের অভিযোগে ২০২২ সালে এয়ারলাইন্সটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় কমিশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

Also Read: বিমানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও: পুলিশ