নিরীক্ষার দায়িত্ব পাওয়া ‘ইওয়াই’, ‘ডেলোইটে’ ও ‘কেপিএমজি’ লন্ডনভিত্তিক কোম্পানি; আয়ের দিক থেকে বিশ্বের চার শীর্ষ নিরীক্ষকের তালিকাতেও রয়েছে এগুলো।
Published : 27 Jan 2025, 12:32 AM
দেশের কোনো ব্যাংকের নিরীক্ষায় বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সুযোগ তৈরির মাস খানেকের মধ্যে তিন বিদেশি নিরীক্ষক কোম্পানি কাজ শুরু করেছে; যেগুলোকে ‘ব্যাংক ডাকাতি’ তদন্তে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
লন্ডনভিত্তিক নিরীক্ষক কোম্পানি তিনটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর বলেন, “আত্মসাৎ হওয়া অর্থ শনাক্ত ও তা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১১টি যৌথ তদন্ত টিমও গঠন করেছে।”
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া নিরীক্ষকগুলো হল- ‘ইওয়াই’, ‘ডেলোইটে’ ও ‘কেপিএমজি’। আয়ের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চার নিরীক্ষকের তালিকায় এই তিন কোম্পানির নামও রয়েছে।
গভর্নর বলেন, “ঋণের কতটা খেলাপি হয়েছে, কতটা হয়নি, কে এসব ঋণ নিয়েছে, এসব আমরা এখন বের করব। একই সঙ্গে একটা ‘ফরেনসিক’ প্রতিবেদনও তৈরি করব আমরা।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগের সরকারের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের অনিয়মের তথ্য অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সামনে আসতে শুরু করেছে।
অনেক প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী ও প্রতাপশালী ব্যবসায়ী ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেসব ব্যাংক থেকে কোটি কোটি বের করে নিয়েছেন। তারা ব্যাংকের সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে।
গভর্নর আহসান মনসুর বলছেন, আগের সরকারের সময়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস নিরীক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বলেছে, তদন্ত শুরুর বিষয়টি কেপিএমজি তাদের নিশ্চিত করেছে। কোম্পানির শ্রীলংকার শাখা এ দায়িত্ব পালন করছে।
ইওয়াই ও ডেলোইটের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেও তারা কোনো বক্তব্য দেয়নি বলে দাবি করেছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকগুলো নিরীক্ষায় বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সুযোগ রেখে গত ২২ ডিসেম্বরে একটি বিশেষ বিধান প্রণয়ন করে।
তখন এ বিধান প্রণয়নের বিষয়ে বলা হয়, নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থাকার পরও দেশের ব্যাংকিং খাত নানা ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সম্পদের মান, করপোরেট সুশাসন, নীতিমালা এবং আইন ও বিধিবিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এতে ব্যাংক খাত নিয়ে সাধারণভাবে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে। পুরো খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা ক্ষতির মুখে পড়েছে।
‘স্পেশাল রেগুলেশনস অব বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪’ নামের ওই বিধানে বলা হয়, ব্যাংকগুলোতে বিদেশি পরামর্শক কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা সমন্বয় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেবে। পরামর্শক কোম্পানি ব্যাংকে নিরীক্ষা করার পর প্রতিবেদন জমা দেবে গভর্নরের কাছে। এরপর গভর্নর ওই প্রতিবেদন পরিচালনা পর্ষদের কাছে তুলে ধরবেন।
নতুন বিধান অনুযায়ী নিরীক্ষার জন্য নির্বাচিত আন্তর্জাতিক পরামর্শক কোম্পানিকে কত পারিশ্রমিক দেওয়া হবে এবং তা কোন পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হবে, তা চুক্তিতে তুলে ধরতে হবে।
আরও পড়ুন-
নিরীক্ষায় বিদেশি কোম্পানি নিয়োগের সুযোগ তৈরি করল বাংলাদেশ ব্যাংক