২০১৯ সালে এ বিষয়ে নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই আলোকে সীমিত আকারে চলছে অফশোর ব্যাংকিং।
Published : 28 Feb 2024, 10:17 PM
বিদেশি বিনিয়োগকারী ও অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পাঁচটি বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনের সুযোগ রেখে অফশোর ব্যাংকিং আইন-২০২৪ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এ আইনের মাধ্যমে অনিবাসী ব্যক্তি বা বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান যারা এখানে ইনভেস্ট করবে তারা অফশোর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। যারা লাইসেন্স নেবে তারা এসব অফশোর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।“
মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চাইনিজ ইউয়ান-এ পাঁচ মুদ্রায় এসব অ্যাকাউন্টে ব্যাংকিং কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে বলে জানান তিনি।
ইপিজেডের বিনিয়োগকারীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। ২০১৯ সালে এ বিষয়ে নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই আলোকে সীমিত আকারে চলছে অফশোর ব্যাংকিং।
দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিতরণের জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রচলিত ব্যাংকিং বা শাখার কার্যক্রমের চেয়ে ভিন্ন অফশোর ব্যাংকিং। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান ও বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় এ ধরনের ব্যাংকিংয়ে।
দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার পুরোদমে অফশোর ব্যাংকিং চালু করতে এ আইন করছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে এ আইন হচ্ছে না। সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার প্রত্যাশায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
“এই আইনের আওতায় অফশোর ব্যাংকিং করার জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলো লাইসেন্স গ্রহণ করবে। এরপর অনিবাসী বাংলাদেশে বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত গ্রহণ করতে পারবে, ঋণ দিতে পারবে। ওই আমানত স্বাভাবিক ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারবেন। বিদেশে যে বাংলাদেশি আছেন তার পক্ষে তার কোনো আত্মীয় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, সহায়তাকারী হিসেবে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন।”
যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যে অফশোর ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে সেগুলোর নতুন করে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় এমন প্রস্তাব থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা এই আইনের আওতায় অনুমোদন নিয়েছেন বলে গণ্য হবে। এখন যারা অফশোর ব্যাংকিং করতে চান তাদেরকে এই আইনের আওতায় অনুমোদন নিতে হবে।
অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ঋণসীমা বেঁধে দেওয়া হবে কি না-জানতে চাইলে সচিব বলেন, “ঋণসীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। যে কোনো পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে।“
অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এখন ইপিজেডে যে অফশোর ব্যাংকিং সুবিধা আছে সেটা হচ্ছে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট বা চলতি হিসাবে। এখন অফশোর ব্যাংকিংয়ে যে অ্যাকাউন্ট খোলা হবে সেটা ব্যাংকিং রেট অনুযায়ী ইন্টারেস্ট দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারলে, ব্যাংকের জন্যও সেটা লাভজনক হবে। বহু দেশ এ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ ও আর্থিক কাঠামো সমৃদ্ধ করেছে। তারা বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট পেয়েছে। আমরাও এটাকে একটা অপশন হিসেবে নিচ্ছি।
“বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যখন টাকা জমা রাখে তখন কিন্তু টাকা নিয়ে যেতে পারমিশন নিতে হয়। অফশোর হলে স্বাধীনভাবে এটা অপারেট করা যাবে। এখানে ব্যবসা করে যারা লাভবান হবে তারা এখানে টাকা রাখতে আগ্রহী হবে। কারণ এখন তো ইন্টারেস্ট দেওয়া হচ্ছে।“
আইন অনুযায়ী ওই অ্যাকাউন্টে যে লেনদেন হবে সেই সুদের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ না করার প্রস্তাব খসড়ায় রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার মনে করেছে এ পদ্ধতি অনুসরণ করে অনেক দেশ সুফল পেয়েছে, আমরাও পাব। সেভিংস অ্যাকাউন্ট যেভাবে পরিচালনা করেন সেভাবেই এ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যাবে। ওই অ্যাকাউন্টে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা জমা দেওয়া যাবে।“