সরকার উদ্যোগ নিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে গ্যাস পরিবহন শুরু করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ইন্ট্রাকোর এমডি।
Published : 30 Dec 2024, 09:04 PM
গত সরকারের সময় ভোলা থেকে সিএনজি আকারে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের দায়িত্ব পাওয়া ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানটি এবার সরকারের উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ঠিকাদার বাছাইয়ের উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়েছে।
সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে গ্যাস পরিবহনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ইন্ট্রাকো কর্মকর্তারা।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনটি স্থগিত করেছে। ফলে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতাবিহীন কোনো ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পর্যালোচনা শেষে ভোলা থেকে গ্যাস পরিবহনের জন্য গত বছরের ২১ মে ইন্ট্রাকোকে বেছে নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল)।
প্রথম পর্যায়ে দৈনিক ৫ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দিয়ে শুরু করে ইন্ট্রাকো ধীরে ধীরে দৈনিক ২৫ মিলিয়ন গ্যাসে উন্নীত করতে চুক্তিবদ্ধ হয়।
চুক্তি অনুযায়ী গত অক্টোবরের মধ্যে বাকি ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে না পারায় চুক্তির অবশিষ্ট অংশের আর কার্যকারিতা নেই।
ইন্ট্রাকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াদ আলী বলেন, “আগের সরকার উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির দিকে না যাওয়ায় আমাদেরকে বিশেষ আইনের অধীনেই চুক্তি করতে হয়েছে। কিন্তু এতে আমাদের কোনো লাভ হয়নি। এখন সরকার যে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে গ্যাস পরিবহনের উদ্যোগ নিচ্ছে আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরাও চাই সবকিছু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হোক। সেক্ষেত্রে আমরা কাজ না পেয়ে অন্য কেউ পেলেও তাদের সঙ্গে আমরা অভিজ্ঞতা ও অবকাঠামো শেয়ার করতে পারব।”
ভোলায় বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে এসব ক্ষেত্রের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অব্যবহৃত থাকে। জাতীয় সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় ভোলার অব্যবহৃত গ্যাস কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
অন্যদিকে দেশে দৈনিক প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরকার সর্বোচ্চ তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দিতে পারছে। ফলে বহু বছর ধরে গ্যাসের চাহিদা পূরণে ভোলা থেকে গ্যাস এনে শিল্পের চাহিদা পূরণের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
অনুষ্ঠানে ইন্ট্রাকোর এমডি রিয়াদ আলী বলেন, “ভোলার গ্যাসক্ষেত্র থেকে সিএনজি আকারে দৈনিক আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা পরিবহন করতে চাই। সেধরনের অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। সরকার উদ্যোগ নিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমরা পরিবহন শুরু করতে পারব। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে আমরা সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানাব।”
চুক্তি অনুযায়ী ইন্ট্রাকো প্রতি ইউনিট গ্যাস ১৭ টাকা দরে কিনে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় শিল্প কারখানায় বিক্রি করছে। সড়ক পথে বিভিন্ন ফেরি পারাপারে প্রতি ইউনিট গ্যাসের জন্য ১২ টাকা ৫০ পয়সা, টোল বাবদ ৩ টাকা ৮৫ পয়সা, ডিজেল জ্বালানি খরচ বাবদ ১০ থেকে ১২ টাকা খরচ যুক্ত হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ১৮টি কারখানায় এই গ্যাস সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নদী পথে সিএনজি পরিবহনের সুযোগ পেলে খরচ আরও কমে আসবে বলেও আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্যক্তি পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহের পরিবর্তে জাতীয় গ্রিডে কিংবা বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব দিয়ে ইন্ট্রাকো জানায়, এক্ষেত্রে খরচ অনেক কমে আসবে। সবপক্ষ লাভবান হবে।