সুইস সরকারের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূরের পথ খুঁজছে বাংলাদেশ

তথ্য আদান-প্রদানে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে চুক্তিতে আগ্রহের কথা বললেন পররাষ্ট্র সচিব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 04:10 PM
Updated : 16 August 2022, 04:10 PM

সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার চায়নি বলে দেশটির রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি’র কারণে তা হয়েছে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এই ধরনের ‘ভুল বোঝাবুঝি’ অবসানে একটি কৌশল ঠিক করতে সুইজারল্যান্ড সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বললেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে সচিব মাসুদ বলেন, রাষ্ট্রদূতের কাছে হয়ত সঠিক তথ্য ছিল না, কেননা এই তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ে।

“উনার কাছে হয়ত সম্পূর্ণ তথ্য নাই বা আমাদের কাছেও সম্পূর্ণ ইনফরমেশন নাই।”

এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এফআইইউ যেটা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং ওদের যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট বডি আছে, তাদের মধ্যে হয়ত যোগাযোগ আছে বা সংযোগ রয়েছে। এটা সম্পর্কে সুইস অ্যাম্বাসেডর হয়ত অবহিত নন। সেক্ষেত্রে এই কনফিউশনটা আরও বাড়ছে।”

গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিক্যাব টকে’ সাংবাদিকদের প্রশ্নে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার বলেন, সুইস ব্যাংকের কাছে ‘সুনির্দিষ্ট কারও তথ্য’ বাংলাদেশ চায়নি।

পরদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্য ‘অসত্য’।

সেদিনই হাই কোর্ট এ বিষয়ে সরকার ও দুদকের ব্যাখ্যা চেয়ে আদেশ দেয়। সে নির্দেশনা অনুসারে রোববার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক। আদালত ওই প্রতিবেদন ও বক্তব্য ‘হলফনামা’ আকারে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি ২১ অগাস্ট আদেশের জন্য রেখেছে।

বিভ্রান্তি এড়ানোর কৌশল নিয়ে সচিব মাসুদ বলেন, “সুইজারল্যান্ডের যে অথরিটি আছে বার্নে, তাদের সাথে যোগাযোগ আছি। এখানে তাদের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ আছে বা আমাদের যে সমস্ত সংস্থা বা যে সমস্ত এনটিটিজ এগুলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদেরকে নিয়ে আমরা বসে এমন একটা ম্যাকানিজম আমরা করব, সরকারগুলোর মধ্যে- যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ না থাকে।”

ওইদিন সুইস রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ব্যক্তি পর্যায়ের তথ্য পেতে হলে সরকারকে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করতে হবে। সুইজারল্যান্ড এমন চুক্তির প্রস্তাব দিলেও সরকারের দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব বলেন, একটি ’ম্যাকানিজম’ করার প্রস্তাব সুইজারল্যান্ড সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছে। তবে চুক্তির প্রস্তাব এখনও তারা পাননি।

“আমরা যদি একটা ম্যাকানিজম তৈরি করতে পারি, যেখানে দুদেশের সরকারের মাঝেও একটা প্যারালাল বা ধরেন পাশাপাশি সংযোগ বা যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে, যাতে করে এ ধরনের কনফিউশন আগামীতে না হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”

চুক্তি করার ইচ্ছা সরকারের আছে কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “অবশ্যই।”

রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ারকে উচ্চ আদালতে তলবের ক্ষেত্রে তার কূটনীতিক দায়মুক্তি থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে মাসুদ বলেন, “অবশ্যই উনার ইমিউনিটি আছে।

“আমরা এখন আমাদের স্টেকহোল্ডারস যারা আছে, তাদের সাথে বসব। বসলে এই সংক্রান্ত যে কনফিউশন বা ভুল বোঝাবুঝি যেটা হয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা করব।”

এসব নিয়ে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির শঙ্কা রয়েছে কি না- এ প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আমরা নিশ্চয় চাইব না সেটা।

“সুতরাং আমরা তাদেরকে বলেছি যে, আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের কিছু সাজেশন্স আছে, সেগুলো যদি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, নতুন মেকানিজম তৈরি করব, যাতে করে এই ধরনের তথ্য যতটুকু জানান সম্ভব সেটা যাতে আমরা জানতে পারি।”

তবে সুইজারল্যান্ডের আইনের কারণে ব্যাংক গ্রাহকদের সব তথ্য হয়ত প্রকাশ করা যাবে না, এটাও বলেন মাসুদ বিন মোমেন।