কম দুর্নীতির নিশ্চয়তা বাংলাদেশ টানবে বিনিয়োগকারীদের: পিটার হাস

সব দেশেই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতি থাকার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 02:39 PM
Updated : 21 March 2023, 02:39 PM

বাংলাদেশে ব্যবসার বিপুল সুযোগ থাকার কথা তুলে ধরে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, দুর্নীতির কম হওয়ার নিশ্চয়তা পেলে আকৃষ্ট হবেন বিনিয়োগকারীরা।

মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজেস (সিআইপিই) আয়োজিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ডাক’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশ যদি নাগরিকদের এবং বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে পারে যে, অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে দুর্নীতি কম, তাহলে এর মাধ্যমে বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে দেশকে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনেক সুবিধা রয়েছে, যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। কিন্তু আমেরিকান ব্যবসায়ী নেতারা আমাকে যেমনটি বলেছেন- বহুজাতিক কোম্পানির হাতে বিনিয়োগের অনেক বিকল্প রয়েছে।

“এবং তারা যেখানে দুর্নীতি কমমাত্রায়, আমলতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা কম, আইনের শাসনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এবং ব্যবসায়ের ভালো সহায়ক অবকাঠামো রয়েছে, বিনিয়োগের জন্য সেই দেশকেই নির্বাচন করবেন তারা।”

সব দেশেই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতি থাকার কথা তুলে ধরে পিটার হাস বলেন, “দুর্নীতি হচ্ছে পরগাছার মতো, যা একটি সমাজের সম্পদকে সাবার করে দেয় এবং শক্তিক্ষয় করে দেয়। এটি ব্যবসায় ও সমাজের প্রতিটি স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”

কিছু ‘কুখ্যাত কেলেঙ্কারি’ তার দেশেও ঘটে থাকে যেটিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতির উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য জায়গায় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে অগ্রগতি হয়ে থাকে মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “যেসব সমাজ এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তারা উন্নতি করে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তা কার্যকর হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা দিতে আগ্রহী।”

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের কেন্দ্রে রেখেছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। 

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মান ও নীতি রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্যকে সাহায্য করবে, এমন সব পদক্ষেপে আমরা সহযোগিতা দিয়ে থাকি। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতা সক্ষম হয়ে উঠছে তারা।

“নৈতিক ব্যবসার চর্চা প্রচারের মাধ্যমে আমরা যে কোনো আকারের ব্যবসার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে এবং আরও বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পারি।”

এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ (আরজেএসসি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুটি উদ্যোগে ইউএসআইডির পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।

দুর্নীতির অনুসন্ধান ও প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও উল্লেখ করেন পিটার হাস।

তিনি বলেন, “দুর্নীতি দূরীকরণে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে বাংলাদেশের নাগরিকরা সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে এবং আরও বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানানো যায়।”

অনুষ্ঠানে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) দুর্নীতির উপর গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেহ জহুর।

অন্যদের মধ্যে সিজিএসের উপদেষ্টা ও এসএমই সংক্রান্ত গবেষণা দলের প্রধান আলী রিয়াজ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।