পাঁচ হাজার কিলোমিটারের অবিচ্ছিন্ন এ নৌপথ ৪৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে মনে করছেন আসামের বন্দর ও নৌপথমন্ত্রী।
Published : 20 Jul 2023, 02:42 AM
নিজেদের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, প্রতিবেশী বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে নৌপথে নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য চালাতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত; যেটির আওতায় এ অঞ্চলে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের নৌ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা দেশটির।
নৌপথের পূর্বাঞ্চলীয় এ নেটওয়ার্কের পরিকল্পনায় বাংলাদেশের নদীগুলোও রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের আসাম রাজ্যের বন্দর, নৌপথ ও নৌ চলাচলমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোওয়াল।
এটি ৪৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরি করবে বলে মনে করছেন তিনি।
ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের নদীগুলোর খননকাজে তার দেশ যুক্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের পাশাপাশি সীমান্ত সংলগ্ন ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের ভারতের প্রভাবও বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন।
ট্রান্সশিপমেন্ট: প্রথম চালানে বন্দর পেল ৩১ হাজার টাকা, শুল্ক বিভাগ ১৩ হাজার
মেঘালয়ের চা পাতা চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে কলকাতার পথে
ট্রান্সশিপমেন্ট: চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতীয় পণ্যের দ্বিতীয় চালান
সর্বানন্দ সনোওয়ালকে উধ্বৃত করে ভারতের অর্থনীতিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস আরও বলেছে, ভারত সরকার পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ও অবিচ্ছিন্ন এ নৌপথ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার পাঁচ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নিরবচ্ছিন্ন নৌপথ গড়ে তুলতে কাজ করছে। এ ধরনের নৌপথ শুধু আঞ্চলিক সংহতি কিংবা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে তা নয়, বরং এটা বিবিআইএন হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলীয় দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াবে।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও বারাক নদীর নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তিন হাজার ৫০০ কিলোমিটার ইকোনমিক করিডোর ব্যবহার করে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের সংযোগ ঘটানো হবে।
এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নৌ ও সমুদ্র পথে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনার কথাও বলেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।
তিনি বলেন, ভারত ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে বেশ কিছু নদী খনন চলছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্রপথের নৌ যোগাযোগ সচল করার মাধ্যমে এ অঞ্চলে যোগাযোগ বাড়াতে কাজ চলছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সচল আন্তর্জাতিক নৌপথের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, একটি পথ বর্তমানে খুলনার আংটিহারা হয়ে চাঁদপুর, আরিচা হয়ে সিরাজগঞ্জ এবং সর্বশেষ উত্তরবঙ্গের দইখাওয়া হয়ে ভারতের দিকে চলে গেছে। আরেকটি আংটিহারা, চাঁদপুর, ভৈরব ও আশুগঞ্জ হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ দিয়ে ভারতের দিকে বের হয়।
“আরও কয়েকটি রুটের ব্যাপারে কথাবর্তা হচ্ছে। এগুলো কলকাতা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত। রাজশাহী হয়ে পাকশি, সুলতানগঞ্জ হয়ে একটি রুট। এবং কুমিল্লার গোমতী নদী হয়ে আরেকটি রুটের কাজ চলছে,” যোগ করেন তিনি।
দেশের বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ নৌপথ সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছে। গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকেও চারটি নদীতে ৭২১ কিলোমিটার দূরত্বের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার একটি প্রকল্প পাস হয়েছে।
এছাড়া পুনর্ভবা-ব্রহ্মপুত্র নদীর ড্রেজিং ও লক্ষ্মীপুরে নদী খনন প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বাংলাদেশ-ভারত অর্থায়নে খনন হবে ৪৭০ কিলোমিটার নৌপথ
ভারত-বাংলাদেশের নৌ যোগাযোগ বৃদ্ধিতে নতুন পথ খুলল
ভারতের পথে জাহাজে খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান
ভারতের সঙ্গে নৌবাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আঞ্চলিক করিডোর ব্যবহার করে বর্তমানে ভারত থেকে অনেক জাহাজ বাংলাদেশ হয়ে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন করছে। তবে নদীপথের গভীরতা কম থাকার কারণে দুই মিটারের বেশি গভীর জাহাজ চলাচল করতে পারে না। যাত্রীবাহী জাহাজ গঙ্গাবিলাস বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে।
ভারতীয় ওয়েবসাইট ইন্ডিয়া শিপিং নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মিয়ানমারের উপকূলীয় সিতয়ু শহরে ভারতের অংশিক অর্থায়নে নির্মিত একটি বন্দর ইতোমধ্যেই পণ্য ওঠানামা শুরু করেছে। গত মার্চে সিতয়ু থেকে চালের একটি চালান বাংলাদেশে এসেছে।
সিতয়ু বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ নৌপথের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ও বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর ভারত, নেপাল ও ভুটানের সংযোগ ঘটানো। মিয়ানমারের সর্বপশ্চিমের শহর পালাতওয়া থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথ এসে সিতয়ুর সঙ্গে মিশে যাবে। সিতয়ু থেকে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ ও ভারতের যে কোনো বন্দরে যুক্ত হবে।