ভারত ও বাংলাদেশের নৌ যোগাযোগ বৃদ্ধিতে নতুন দুটি রুট চালুর পাশাপাশি উভয় দেশের পাঁচটি করে নৌবন্দরকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করা হয়েছে।
Published : 20 May 2020, 05:40 PM
এর ফলে ভারতের সঙ্গে নৌ রুটের সংখ্যা বেড়ে হল দশটি। আর আগের ছয়টি নিয়ে ‘পোর্ট অব কল’ বেড়ে হল ১১টি।
নতুন দুটি নৌরুট হল- দাউদকান্দি-সোনামুড়া এবং সোনামুড়া-দাউদকান্দি।
নতুন পাঁচটি ‘পোর্ট অব কল’ হল- বাংলাদেশের রাজশাহী, সুলতানগঞ্জ, চিলমারী, দাউদকান্দি ও বাহাদুরাবাদ এবং ভারতের ধুলিয়ান, ময়া, কোলাঘাট, সোনামুরা ও জগিগোপা।
এগুলো পোর্ট অব কল ঘোষণা হওয়ায় উভয় দেশের পণ্য পরিবহনকারী নৌযানগুলো এসব বন্দরে নোঙর করে মালামাল ওঠানো-নামানো এবং জ্বালানি নিতে পারবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড-পিআইডব্লিউটিটির আওতায় প্রতিটি দেশের আগের ছয়টি ‘পোর্ট অব কলের’ সঙ্গে আরও পাঁচটি করে ‘পোর্ট অব কল’ এবং আগের আটটি নৌ প্রটোকল রুটের সঙ্গে নৌরুট দুটি সংযোজিত হয়েছে।
বুধবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পিআইডব্লিউটিটির দ্বিতীয় সংযোজনীপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
দ্বিতীয় সংযোজনী পত্রে স্বাক্ষর করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী এবং ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুই দেশের মধ্যে আগে থেকে ছয়টি করে ১২টি ‘পোর্ট অব কল’ রয়েছে। সেগুলো হল- বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, মোংলা, সিরাজগঞ্জ, আশুগঞ্জ ও পানগাঁও এবং ভারতের কলকাতা, হলদিয়া, করিমগঞ্জ, পান্ডু, শিলঘাট ও ধুবরী। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজশাহী, সুলতানগঞ্জ, চিলমারী, দাউদকান্দি ও বাহাদুরাবাদ এবং ভারতের ধুলিয়ান, ময়া, কোলাঘাট, সোনামুরা ও জগিগোপা।
সংযোজনীপত্রে দুটি করে ‘এক্সটেনডেন্ড পোর্ট অব কল’ ঘোষিত হয়েছে। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ পোর্ট অব কল’র আওতায় ঘোড়াশাল এবং পানগাঁও পোর্ট অব কলের আওতায় মুক্তারপুর। আর ভারতের কলকাতা পোর্ট অব কলের আওতায় ত্রিবেনী (বেন্ডেল) এবং করিমগঞ্জ পোর্ট অব কলের আওতায় বদরপুর।
নৌ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৮ সালের ২৪ ও ২৫ অক্টোবর নয়া দিল্লিতে এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় উভয় দেশের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং পিআইডব্লিউটিটির স্ট্যান্ডিং কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে নতুন কয়েকটি ‘পোর্ট অব কল’, নতুন প্রটোকল রুট সংযোজন, হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে ও ড্রেজিংয়ের জন্য পিআইডব্লিউটিটির দ্বিতীয় সংযোজনীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর পিআইডব্লিউটিটির প্রথম সংযোজনী স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের পানগাঁও এবং ভারতের ধুবরীকে ‘পোর্ট অব কল’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য চুক্তি’ ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরের পর থেকে নবায়নের ভিত্তিতে অব্যাহত ছিল। ওই প্রটোকলের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ উত্তীর্ণ হলে ২০১৫ সালের ৬ জুন পুনরায় পিআইডব্লিউটিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আগে থেকে আটটি নৌরুট রয়েছে। সেগুলো হল-
১. কলকাতা-হলদিয়া-রায়মংগল-চালনা-খুলনা-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-ধুবরী-পান্ডু-শিলঘাট।
২.শিলঘাট-পান্ডু-ধুবরী-চিলমারী-বাহাদুরাবাদ-সিরাজগঞ্জ-আরিচা-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল-কাউখালী-মোংলা-খুলনা-চালনা-রায়মংগল-হলদিয়া-কলকাতা।
৩.কলকাতা-হলদিয়া-রায়মংগল-মোংলা-কাউখালী-বরিশাল-হিজলা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ-আজমেরিগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ।
৪.করিমগঞ্জ-জকিগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ-শেরপুর-মারকুলি-আজমেরিগঞ্জ-আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-চাঁদপুর-হিজলা-বরিশাল-কাউখালী-মোংলা-রায়মংগল-হলদিয়া-কলকাতা।
৫. রাজশাহী-গোদাগাড়ি-ধুলিয়ান।
৬. ধুলিয়ান-গোদাগাড়ি-রাজশাহী।
৭. করিমগঞ্জ-জকিগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ-শেরপুর-মারকুলি-আজমেরিগঞ্জ-আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-চাঁদপুর-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-ধুবরী-পান্ডু-শিলঘাট।
৮. শিলঘাট-পান্ডু-ধুবরী-চিলমারী-বাহাদুরাবাদ-সিরাজগঞ্জ-আরিচা-চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-পানগাঁও-ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ-আজমেরিগঞ্জ-মারকুলি-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ।
এগুলোর সঙ্গে নতুন দুটি রুট দাউদকান্দি-সোনামুড়া এবং সোনামুড়া-দাউদকান্দি এবং পাঁচটি করে দশটি ‘পোর্ট অব কল’ যুক্ত হল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নৌ-প্রটোকল রুটে ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশি জাহাজের ২ হাজার ৬৮৫টি যাত্রায় (ট্রিপে) ২২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫২ মেট্রিক টন এবং ভারতীয় জাহাজের ৫৯টি যাত্রায় (ট্রিপে) ৭৮ হাজার ৭৯৪ মেট্রিক টন মালামাল পরিবহন হয়েছে।
এরপর চলতি অর্থবছরের গত মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশি জাহাজে ২ হাজার ৫৯১টি ট্রিপের মাধ্যমে ২২ লাখ ২৩ হাজার ৪৬১ মেট্রিক টন এবং ভারতীয় জাহাজের ৫৪টি ট্রিপের মাধ্যমে ৮৮ হাজার ৫৬৬ মেট্রিক টন মালামাল পরিবহন হয়েছে।