নতুন খনন ও পুরোনো কূপ সংস্কারের মাধ্যমে দৈনিক অন্তত ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছে দেশের পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র সিলেট গ্যাস ফিল্ডস; যার মধ্যে একটি পরিত্যক্ত কূপে সন্ধান পাওয়া ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসও রয়েছে।
আগামী সপ্তাহে কৈলাসটিলা ২ গ্যাসক্ষেত্রের পরিত্যক্ত ওই কূপ খননের পর পাওয়া গ্যাস থেকে দৈনিক সাত মিলিয়ন ঘনফুট জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা জানিয়েছেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম সরদার।
মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, কৈলাশটিলা ২ গ্যাসক্ষেত্রে আগে পরিত্যক্ত হওয়া ২ নম্বর কূপটি পুনঃখননে সফল হওয়ার পর গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া এ গ্যাসক্ষেত্রের দুইটি কূপ এখন সচল আছে যেখান থেকে দৈনিক ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যাচ্ছে।
পরিত্যক্ত এ কূপে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুকে পেইজে এক ঘোষণায় সোমবার বলা হয়, “কৈলাশটিলা ২নং কূপটি সফলভাবে ওয়ার্কওভার করে ডিপার হরাইজোনে গ্যাসস্তরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। খুব শিগগিরই এই কূপ থেকে দৈনিক ৭০ লক্ষ ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। গ্যাসের বর্তমান বাজার মূল্য বিবেচনায় এ স্তরে উত্তোলনযোগ্য ৫৩ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মূল্য ৩৬০০ কোটি টাকা।“
এছাড়া গ্যাসের সঙ্গে দৈনিক ৭০ ব্যারেল কনডেনসেট উৎপাদনও করা যাবে বলে জানানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশজুড়ে ১৫৭টি প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের কূপ ও রিফাইনারি সংক্রান্ত ৯টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
বর্তমানে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে সিলেট, কৈলাশটিলা ১, কৈলাশটিলা ২, রশিদপুর ও বিয়ানিবাজার নামের পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এগুলোর বেশ কিছু কূপ বন্ধ হয়ে গেলেও সচল আছে ১১টি। এর বাইরে আরও আটটি পূরনো কূপে পুনঃখননের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
বর্তমানে সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের অধিন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের অধীন সক্রিয় ১১টি কূপ থেকে ৯১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে যদিও এসব কূপের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ১৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট।
প্রকৌশলী কামরুল বলেন, “আজকে প্রধানমন্ত্রী তিনটি নতুন কূপ খনন ও পাঁচটি পুরোনো কূপ পুনঃখনন ও একটি রিফাইনারি ইউনিট উদ্বোধন করেছেন। রিফাইনারিতে পেট্রোলকে অকটেনে রূপান্তর করা যাবে। সেখান থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ ব্যারেল পেট্রোল, ২ হাজার ১০০ ব্যারেল অকটেন ও ৩০ ব্যারেল এলপিজি উৎপাদন হচ্ছে।
“চলমান খনন ও ওয়ার্কওভার থেকে কমবেশি দৈনিক ৭০ মিলিয়ন গ্যাস পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যেই কিছু উৎপাদনে চলে এসেছে। কিছু উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায়।”
সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের এ কর্মকর্তা বলেন, “সিলেট-৮, সিলেট-৯, কৈলাশটিলা-৭ নম্বর কূপ ও বিয়ানিবাজার-১ নম্বর কূপ ইতোমধ্যেই উৎপাদনে চলে এসেছে। কৈলাশটিলা-২ নম্বর কূপে আজকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলো। সেখান থেকে দৈনিক ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটা জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হবে।
“সিলেট-১০ নম্বর কূপে গ্যাসের ভালো উপস্থিতি আছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এখান থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের একটা সম্ভাবনা পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।”
এ গ্যাসক্ষেত্রের অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সূচির বরাত দিয়ে প্রকোশলী কামরুল বলেন, সিলেট-৯, সিলেট-১০ ও কৈলাশটিলা-৮ নম্বর কূপ নামের নতুন তিনটি কূপের খনন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী মাসে এসব কূপের কাজ শুরু হবে। এগুলো থেকে ৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
এদিন পাঁচটি ওয়ার্কওভার কূপের উদ্বোধনও করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট ৮, কৈলাশটিলা ৭, কৈলাশটিলা ২, রশিদপুর ২, বিয়ানিবাজার ১ নম্বর কূপ। এরমধ্যে কিছু কূপের ওয়ার্কওভার কাজ শেষ হয়ে গেছে, যেগুলো অচিরেই উৎপাদনে চলে আসবে।