ফুটওভার ব্রিজে ‘গণ-উপদ্রব’ কি বন্ধ হবে না?

মো. আরিফুল ইসলাম
Published : 30 Dec 2020, 09:06 AM
Updated : 30 Dec 2020, 09:06 AM

অসহায় মানুষের জন্য মিরপুর-২ নম্বর এলাকার ফুটওভার ব্রিজে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের  পোশাক বাক্স

মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার ফুটওভার ব্রিজের মাঝ পথে আনুমানিক ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের কয়েকজন পথশিশুকে প্রায়ই বসে থাকতে দেখা যায়। এই শিশুরা ব্যস্ত পথচারীদের পা এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যে কিছু টাকা সাহায্য না দিয়ে উপায় থাকে না কারো।

হঠাৎ করে কেউ পা জড়িয়ে ধরলে নারী পথচারীদের অনেকেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন। কোনো পথচারী অবশ্য টাকা না দিয়ে কোনোরকমে পাশ কাটিয়ে চলে যান।

এই ফুটওভার ব্রিজে আমি মাঝে মাঝেই এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ স্টাফ কলেজের একটি গবেষণা প্রকল্পে মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলাম।  এই ফুটওভার ব্রিজ পার হতে গেলে  এক মেয়ে শিশু আচমকা পা জড়িয়ে ধরে;   'একটি জরুরি কাজে যাচ্ছি' বলে অনুরোধ করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত নেমে যাই ব্রিজ থেকে।

আমার মতে, পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনীহা হওয়ার একটি কারণ এমন পরিস্থিতি।

মিরপুর-২ নম্বরে ফুটওভার ব্রিজে বসানো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পোশাক বাক্সের প্রায় সব পোশাক বার করে এলোমেলো ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে

এদিকে ফুটপাত কিংবা ফুটওভার ব্রীজের মাঝে বসে অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তি ও পথশিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি এবং ভাসমান যৌনকর্মীদে উপস্থিতি এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় পথচারীদের নজর কাড়তে ভিক্ষুকদের গোঙানির মতো শব্দ ও শরীরের অসুস্থ অঙ্গ দেখাতে দেখা যায়।

ফুটওভার ব্রিজে ভাসমান মানুষদের ছাউনি পেতে পুরোদমে বসবাস অর্থাৎ ঘুম, রান্না, খেলাধুলা, মলমূত্র ত্যাগ, ঝগড়া-বিবাদ এমনকি মাদক বেচাকেনা করতেও দেখা যায়। বিশেষ করে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মিরপুর-২ এলাকায় ফুটওভার ব্রিজে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আমি নিজেই দেখে আসছি;  অথচ একটু দূরেই রয়েছে মিরপুর মডেল থানা।

মিরপুর-১০ এলাকায় গোলচত্বর ফুটওভার ব্রিজে কিছু টাকা সাহায্যের জন্য একটি মেয়ে শিশুকে একজন পথচারীর পা জড়িয়ে ধরতে দেখা গেল।

২০১৮ সালে রাসেল স্কয়ার ফুটওভার ব্রিজ থেকে দিনের বেলায় রমজান মাসে আমার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনতাই হয়। ওই বছরই ১৮ হাজার টাকা মূল্যের নতুন মোবাইল কেনার এক মাসের মধ্যেই মিরপুর-২ থেকে বাসে ওঠার সময় পকেটমার নিয়ে যায়। নিরাপত্তার জন্য পরে মামলা করার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে রাখি।

গণ-উপদ্রবমূলক এসব কর্মকাণ্ড নাগরিকদের উন্নত জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই শহরবাসীকে পকেটমার, চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা ইত্যাদি অপরাধের ভিকটিম হওয়ার ভীতি নিয়েই বের হতে হয়। এখানে বাসিন্দাদের মনখোলা বিকেলে একটু হাঁটা কিংবা রাতে শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ যেন হারিয়ে যাচ্ছে।

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে নাগরিকদের উৎসাহি করতে এখানে সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনায় প্রশাসনের এগিয়ে আসা জরুরি।