করোনাভাইরাস: কোয়ারেন্টিনে ‘হাসির উছিলা’ খুঁজছে মানুষ

সাজিদুল হক
Published : 30 March 2020, 10:05 AM
Updated : 30 March 2020, 10:05 AM

আমাদের এই উপমহাদেশে তখনও করোনাভাইরাস ছোবল মেরেছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। ওইরকম একটি সময়ে হোয়াটসঅ্যাপে আমার এক ভারতীয় বাঙালি  বন্ধু একটি চুটকি পাঠালেন। তাতে লেখা,  "করোনা আমাদের কিছু করতে পারবে না। কারণ ছোট থেকে আমরা 'এটা কোরো না, ওটা কোরো না, সেটা কোরো না' এরকম শুনতে শুনতে 'করোনা প্রুফ' হয়ে গেছি।"

হাসির কথা বটে। তবে কোভিড-১৯ ভাইরাসতো আর চুটকি পড়ে না। বাঙালির এই 'করোনা প্রুফ' হওয়ার খবর জানে না। যদি জানতো তবে হয়তো আরও আগে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে দিতো।

ভূমিকা শেষ; এবার আসল কথায় আসি। মোটামুটি সবাই ঘরবন্দি আমরা। ঘরে বসে বসে কাজ করে আর না করে অফুরন্ত সময় আমাদের। এই সময়ে ঘরে থাকতে থাকতে আমরা বিরক্ত। সেই বিরক্তির প্রকাশ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘরের ভেতরের খবর তো আর জানি না। জানা উচিতও নয়। ওই খবর রাখার জন্য আমার বন্ধু রীমা ঘোষ আছেন। যিনি সমাজ নিয়ে গবেষণা করছেন। করোনাভাইরাসের কারণে গৃহবন্দি সময়ে ব্যক্তি সম্পর্ক এবং সমাজের ওপর তার প্রভাব নিয়ে তিনি একটা গবেষণা প্রবন্ধও লিখে ফেলতে পারেন। বন্ধুটি আবার জরিপে সিদ্ধহস্ত।

এই দমবন্ধ ভীতিকর সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু মানুষ বেশ হাস্যরস করছেন। এই মানুষদের আমি শ্রদ্ধা জানাই। বিরক্তিকর সময়ে অন্তত নিজে হাসছেন সাথে আর কিছু মানুষকে হাসাচ্ছেন। কাজটি কঠিন। টিকটক ভিডিও করছেন অনেকে। দেখে হেসে কুটি কুটি হতে হয়। আমার এক সহকর্মীতো এ বিষয়ে রীতিমত ওস্তাদ।

আমারই এক বন্ধু সেদিন একটি খবরের লিংক শেয়ার করে আমাকে ট্যাগ করলেন। বন্ধুটি টেলিকম জগতের কর্মী। ঘরে বসে কাজ করছেন। ফেইসবুকে বেশ সক্রিয়। প্রায়ই এটা-সেটা ট্যাগ করেন। পড়ে দেখলাম পুরনো খবর। মন্তব্যের ঘরে লিখলামও সে কথা।

সেখানে একজন পোস্টদাতার উদ্দেশ্যে লিখেছে, "ভাই, তোর মত মানুষের জন্য সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবে।" নীচে এক ভদ্রমহিলা লিখেছেন, "সত্যি! তাহলে কী হবে! এই যে সারাদিন ঘরে বসে বসে কাজ করছি আর দু'চোখে সহ্য না করতে পারা বরের চেহারা দেখছি, তার থেকে মুক্তি পাচ্ছি ইন্টারনেট থেকে। বন্ধ হয়ে গেলে বরের চেহারা সবসময় দেখতে হবে।"

হাস্যরস করতে আমরা নিজের ঘরের লোককেও ছাড়ি না। এর উদাহরণ প্রচুর আছে।

'বড়লোকের বেটি লো' গানটি নিয়ে দুই বাংলাতেই খুব চলছে। ট্রল, মিম, পোস্ট দিয়ে খুব রসিকতা করছেন মানুষজন। গুরুগম্ভীর খবরও প্রকাশিত হয়েছে। কিছু জ্যেঠামশাই আবার তাতে বিরক্ত। কেন? "এরকম অস্থির সময়ে একটা গান নিয়ে এত করার কী আছে?"

এই সব মুরুব্বীরা (বয়সের দিক থেকে নয়) সব যুগে একরকম। বলছি কী, ওহে মুরুব্বী! মানুষ তার চেনা জীবন যাপনের বাইরে থাকছে। তার মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। তো সে কি মুখ গোমড়া করে বসে থাকবে? তার যাপিত জীবন, গৃহবন্দি দশায় বিরক্তির মধ্যে একটু আনন্দ করছে। আপনি থাকুন না গিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে। কেউতো মানা করছে না।

গত দু'দিন আগে পুলিশ রাস্তায় বের হওয়া মানুষদের পেটালো। কেউ খুশি, কেউ বিরক্ত, কেউ প্রতিবাদী। তাই-ই উচিত; একই ঘটনা যদি ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব না রাখে তবে বুঝতে হবে সমাজে গণ্ডগোল আছে। ওই ঘটনার পর কেউ কেউ ফেইসবুকে লিখলেন, "পুলিশ যে মারলো, লাঠিটা স্যানিটাইজ করা ছিলো?" "প্লিজ পুলিশ ভাই, একজনকে মেরে ওই লাঠি দিয়ে আরকজনকে মারবেন না। লাঠিটা জীবাণুমুক্ত করে নিন আগে।"

আমরা বাঙালিরা এমনই। আমাদের ঢাকার ঘোড়াও হাসে। কেন মনে নেই ওই যে, পুরান ঢাকার ঘোড়াটা।

গাড়ির ভাড়া কম বলায় গাড়োয়ান যে বলেছিলো, "ছাব আস্তে কন, হুনলে আমার ঘোড়ায় ভি হাসবো।"

তো যেখানে ঘোড়া হাসে সেখানে মানুষ কেন হাসবে না। প্রাণ খুলে হাসুন। শুধু নিরাপদে থাকবেন। পরিচ্ছন্ন থাকবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না।

ঘোড়া আরও কী করে জানেন? শুনুন (পড়ুন) তাহলে।

এক শৌখিন জুয়াড়ি শনিবার বিকালে এক টমটমওয়ালাকে ডেকে বলল, "রেসকোর্স যাইবা নি?"

– আরে কি কইবার লাগসেন! শনিবার রেসকোর্স যাওনই তো আমার আসল কাম!

– কেন, তুমিও রেস খেল নাকি?

– আরে না। আপনাগো মতো ছাহেবগো লইয়া যাই আর তাগো কইয়া দেই কোন ঘোড়া জিতব।

– তাইলে চল আমার লগে। কইয়া দিও কোন ঘোড়া জিতবার পারে।

টমটমওয়ালার কথা মতো ঘোড়া বেছে নিয়ে বাজি ধরল সেই জুয়াড়ি। কিন্তু রেস শুরু হলে দেখা গেল, ঘোড়া দৌড়াচ্ছে সবার পেছনে। জুয়াড়ি রেগেমেগে বলল, 'কী মিঁয়া, এইডা কি কোনো ঘোড়া অইল! বেবাকডির শ্যাষে খোঁড়াইতাছে!'- ঘোড়াডার পলিসি বুঝেন নাই, ছাব! ওই হালায় ঠিক করসে, বেবাকডিরে খেদাইয়া লইয়া যাইব। কেমুন বাঘের মতন হগ্গলডিরে খেদাইয়া লইয়া আইল!