বক্স কালভার্টে বিলীন হয়েছে খিলগাঁওয়ের খাল

বোরহান বিশ্বাস
Published : 4 March 2020, 03:49 PM
Updated : 4 March 2020, 03:49 PM

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে পরীবাগ খাল ভরাটের মাধ্যমে ঢাকায় বক্স কালভার্ট নির্মাণের চল তৈরি হয়েছিল বলেই জানি। ধীরে ধীরে এই বক্স কালভার্টগুলো নগরবাসীর জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দেয়। উপলব্ধি ঘটে ঢাকার জলবদ্ধতার আরেক কারণ এই বক্স কালভার্টগুলোই।


এলাকাবাসীর অভিযোগ,  বক্স কালভার্ট নির্মাণের নামে উন্মুক্ত খালের আশপাশের জায়গা ভরাট করে প্লট হিসেবে বিক্রি করে মুনাফা অর্জনই ছিল উদ্দেশ্য।

এরও একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল; বিক্রিযোগ্য প্লটগুলো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দলীয় মতাদর্শের লোকের কাছে হস্তান্তর করে নিজস্ব ভোট ব্যাংক তৈরি।


খিলগাঁও ফ্লাইওভার সংলগ্ন স্থান থেকে জোড়পুকুর মাঠ হয়ে তিলপাপাড়ার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা ওয়াসার খাল। সরকারি এ খালটি ভরাট করে সেখানে বানানো হয়েছে মার্কেট। খাল ভরাট করে ফেলায় এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে পুরো এলাকার বাসিন্দারা।

রাসেল স্কয়ার থেকে গ্রিন রোড হয়ে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা থেকে সোনারগাঁও হোটেল, পান্থপথ থেকে পরীবাগ, ইব্রাহিমপুর বাজার থেকে মিরপুর বাউনিয়া খাল, সেগুনবাগিচা থেকে আরামবাগ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, খিলগাঁও থেকে তিলপাপাড়া পর্যন্ত কয়েকটি  বক্স কালভার্ট দেখা যায়।

কালভার্ট নির্মাণের পর ওয়াসার পক্ষ থেকে যে সতর্কতামূলক ফলক বসানো হয় তাতে 'খালের নাম : খিলগাঁও/বাসাবো'  উল্লেখ করে বলা হয়-  খালের মধ্যে অবৈধ কোন স্থাপনা নির্মণ করা যাবে না, খালের মধ্যে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না, খালের মধ্যে সাঁকো, পানির লাইন, ঘরবাড়ি, টয়লেট, দোকান, রিক্সার গ্যারেজ স্থাপন দণ্ডনীয় অপরাধ।

ঢাকা ওয়াসার খাতায় এখনো খিলগাঁও-তিলপাপাড়া এলাকার খালটির অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে একটি নর্দমা মিলতে পারে; খালের কোনো চিহ্ন নেই।


কোটি কোটি টাকা খরচ করে বানানো এই কালভার্টগুলো কমবেশি ভরাট হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টির পাশাপাশি ভেতরে বিষাক্ত গ্যাস জমে বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে।

এই পথ ধরে গিয়ে দেখা যায়, স্থানে স্থানে বক্স কালভার্টগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। উন্মুক্ত কালভার্টে ময়লা-আবর্জনার স্তর জমে তাতে পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ওয়াসা থেকে কালেভদ্রে পরিস্কার করে যাওয়ার পর আবারো আবর্জনা ফেলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ফলে অল্প ক'দিনেই তা আবার নর্দমা হয়ে ওঠে।

খোলা কালভার্টে শুধু শিশুরাই নয়, বড়রাও পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। মশার প্রজননেরও সহায়ক ক্ষেত্র হয়ে উঠছে এই কালভার্টগুলো।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বক্স কালভার্টের নেতিবাচক দিক বিবেচনা করে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসরে বক্স কালভার্ট ভেঙে খাল উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বহুবার। তবে এর বাস্তবায়নে এখন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন বক্স কালভার্টটি তিলপাড়া, দক্ষিণ গোড়ান ও উত্তর বাসাবোর মধ্য দিয়ে আগমন সিনেমা হলের পেছন দিয়ে মান্ডা-মুগদা, সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ি হয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিশেছে।  খাল তো খেয়ে ফেলেছেই,  নদীগুলোর দূষিত হওয়ার সুযোগ বাড়িয়ে তুলছে এই বক্স কালভার্ট।

খাল ও নদীর মধ্যে যে স্বাভাবিক সংযোগ ছিল  বক্স কালভার্ট নিমার্ণ করে তার অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে। এতে করে নগরীর ভেতরে যে জলাধার সংযোগ বেষ্টনী ছিল তা ছিন্ন হয়েছে।  বৃষ্টির পানি ধরে রাখার যে ক্ষমতা থাকার এই এই নগরের তাও আর নেই।

খিলগাঁওয়ের স্থানীয়দের দাবি, দূষণ-দখলমুক্ত করে অচিরেই বিলীন হওয়া এইসব জলাধারগুলো উদ্ধার করা হোক।