অপরিকল্পিত এই উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা ধরে কাজ না করাকে দায়ী করে তিনি বলেছেন,যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করেছে।
এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় ঢাকাকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা চালাতে হচ্ছে বলে বুধবার ঢাকা শহরের ‘পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত উপস্থাপনা’ সভায় জানান সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, “ঢাকা একটা শহর, যেটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে ওঠেনি। অনেকটা বলতে গেলে অপরিকল্পিত ভাবে.. যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, সেভাবে গড়ে তুলেছে। সেজন্য আজকে অনেক রকম জটিলতা দেখা দিচ্ছে।”
যানজটকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
“মানুষের আর্থিক উন্নতি হচ্ছে। যেহেতু আর্থিক উন্নতি হচ্ছে; মানুষ গাড়িও ক্রয় করছে। গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। রাস্তায় গাড়ির ভিড়ও বাড়ছে।”
যানবাহনের তুলনায় রাস্তা না থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঢাকার সবগুলো রাস্তাই কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছে। কিন্তু, পূর্ব-পশ্চিম রাস্তা খুবই কম।”
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিলেও পাঁচ বছরে তা শেষ করতে না পারার কথা বলেন গত আট বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা।
আরও উড়াল সেতু নির্মাণের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “মানুষ যে কোনো কাজে রাজধানীতে আসে, রাজধানীতে মানুষের যোগাযোগটা যেন আরও ভালোভাবে হয়; তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”
ধানমন্ডিতে বহুতল দালানের অনুমতি দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যত্রতত্র হাইরাইজ বিল্ডিং করে ফেলা হচ্ছে।
“পরিবর্তন ভালো, সে পরিবর্তন যদি সুপরিকল্পিতভাবে হয়, তাহলে আর বসবাসের অসুবিধা হয় না।”
একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ থাকলেও তা অনুসরণ না করাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন সরকার প্রধান।
“ঢাকাকে কী ভাবে আরও বাস উপযোগী করতে পারি, সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে,” বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে বলেন, “উন্নয়ন আমরা চাই। তবে, এমন উন্নয়ন না যে মানুষের জীবনকে সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়।”
অপরিকল্পিত উন্নয়নে গেছে জলাধার
ঢাকায় এক সময় অনেক জলাশয় থাকলেও সেগুলো মুছে যাওয়ার জন্য অপরিকল্পিত উন্নয়নকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইস্টার্ন বাইপাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে বসুন্ধরা-টসুন্ধরা হয়েছে, আগে সেখানে পানি ছিল, বিল এলাকা ছিল। যে যেখান থেকে পেরেছে, জমি কিনে তাদের ইচ্ছামতো উন্নয়ন করে গেছে।”
নিজের শৈশব স্মৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “৫৪ সাল থেকে ঢাকা শহরে। মতিঝিলে ঝিল ছিল, যেটা আমরা নৌকায় পার হয়েছি।
“আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে ঝিলটা বন্ধ করল। আমি লক্ষ্য করেছি, যখনই যে মিলিটারি ডিকটেটররা এসেছে, তাদের একটা কাজ হল গাছ কেটে ফেলা আর, খাল, পানি, নদী, ঝিল, পুকুর এগুলো বন্ধ করা।”
ধোলাই খাল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল এবং পান্থপথ খাল বিলীন হয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
“অনেক খাল ছিল, অনেক লেক ছিল, অনেক পুকুর ছিল। সেগুলো একে একে ভরাট করা হয়েছে। কারণ, দালান বানাতে গেলে সবাই আগে একটা পুকুর দখল করে।”
বিভিন্ন সময়ে তৈরি বক্স কালভার্টের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এমন অনেক কাজ করা হয়েছে, যেটা করার আগে আরও চিন্তা করা উচিৎ ছিল। বক্স কালভার্ট হওয়ার পর পানি জমে থাকে। যারা করেছিলেন, তারা চিন্তা করেননি যে ভারী বৃষ্টির পানি কোথায় যাবে।
“বক্স কালভার্ট ভেঙে ফেলে দিয়ে যদি দু’পাশে রাস্তা করতে পারতাম তাহলে, ঢাকাটা আরও সুন্দর হত। ঢাকার পরিবেশটাও ভালো থাকতো। ঢাকার তাপমাত্রাও কম হত।”
ঢাকাকে ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌ-পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করার উপর জোর দেন শেখ হাসিনা।
“এই নদীগুলো সব নাব্য না। এই নৌপথগুলো যদি খুলে দিতে পারি এবং চালু করতে পারি, তাহলে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের জন্য সুবিধা হয়।”
ঢাকায় বন্যার পানি ধারনের জন্য খনন করা গুলশান লেকের অর্ধেক ভরাট হওয়া নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
“অনেক কষ্টে হাতির ঝিলটা ঠেকাতে পেরেছি,” বলেন শেখ হাসিনা।