জলাবদ্ধতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ নয়: মন্ত্রী

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে পাল্টপাল্টি দোষারোপ না করে সমস্যা সমাধানের দিকে নজর ফেরাতে বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2017, 02:28 PM
Updated : 1 August 2017, 02:31 PM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে পাশে রেখে মন্ত্রী বলেন, এখানে ‘ব্লেইম গেইম’ করার কোনো সুযোগ নেই।

টানা বৃষ্টিতে ঢাকার অধিকাংশ সড়ক গত সপ্তাহে পানিতে ডুবে যাওয়ার পর মেয়র সাঈদ খোকন জলাবদ্ধতার জন্য ওয়াসাকে দায়ী করে বলেছিলেন, সংস্থাটি ঠিকমতো কাজ করে না।

এর প্রতিক্রিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম মেয়রের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ঢাকার পানি নিষ্কাশন নালাগুলোর অধিকাংশই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন।

নিজের মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই সংস্থার পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতা নিরসন বিষয়ক সভায় দৃশ্যত মধ্যস্থতার ভূমিকা নিলেন খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে এবারও হয়ত এতটা বিপদে পড়তাম না যদি না ৫-৭ দিন কন্টিনিউয়াসলি অবিরত ধারায় বৃষ্টিপাত না হত। এটা তো আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।

“আমি করব না সিটি করপোরেশন করবে, সিটি করপোরেশন বলবে ওয়াসা করবে। ইউ বিলং টু দ্য সেইম গভর্মেন্ট, কাজেই এখানে ব্রেইম গেইমের কোনো স্কোপ নাই।”

সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার আইনে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না, তা পর্যালোচনায় একটি কমিটিও করে দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৯৬৩ সালে ওয়াসা সৃষ্টির পর তাদের পরিধি ব্যাপক বেড়েছে। যে জনসংখ্যাকে তাদের পানি সরবরাহ করার কথা, তার চেয়ে তিন গুণ মানুষের জন্য এখন তাদের কাজ করতে হচ্ছে।

জলাবদ্ধতায় রাজধানীর কাজীপাড়া (ফাইল ছবি)

বক্স কালভার্ট নিয়ে কী করা যায়, তা পুঙ্খনাপুঙ্খ খতিয়ে দেখতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বক্স কালভার্ট তুলে দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে নির্দেশ দেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

সচিবালয়ের সভায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ঢাকার ১৫ কিলোমিটার খালকে বক্স কালভার্টে রূপান্তর করা হয়েছে। এসব বক্স কালভার্ট দিয়ে খালের মতো করে পানি নিষ্কাশন হয় না।

মন্ত্রী বলেন, “বক্স কালভার্ট যদি কোনো কাজ না করে আমাদের যদি পাঁচ হাজার কোটি টাকাও লাগে সেগুলো ওপেন করে উপর দিয়ে ফ্লাইওভার করে দেওয়া হবে। তুমি (ওয়াসা এমডি) আমারে রিপোর্ট কর বক্স কালভার্ট কোথায় কোথায় ফেইল করতাছে।

“আমরা রিপ্লেস করার চেষ্টা করি যদি দরকার লাগে। আর যদি মেশিন পাওয়া যায় যে বক্স কালভার্টের ভেতরে মানুষ না পাঠিয়ে পরিষ্কার করতে পার, আটটা-দশটা মেশিন যদি আমার ইমপোর্ট করতে হয়, উই উইল ইমপোর্ট দ্যাট। ডিটেইল রিপোর্ট আমারে দাও ম্যাকানিজমটা কী হবে, বুঝতে পারছ? কারণ এই ১৮ কিলোমিটার তো ভাইঙ্গা ফ্যালানো সম্ভব না, রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করতাছে।”

তাকসিম জানান, নগরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২ শতাংশ জলাধার থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় আছে দুই শতাংশ। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ রাজধানীর লাগোয়া নিম্নাঞ্চলগুলো ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

তখন মন্ত্রী বলেন, “ওয়াসার মুখের দিকে তাকিয়ে তো মানুষ বাড়িঘর করবে না। ঢাকা সিটির আয়তন তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। তাতে নিম্নাঞ্চল আগের থেকে ৪-৫ গুণ বেশি। ওয়াসা এই নিম্নাঞ্চল যদি ব্যবহার করতে না পারে তাহলে তো নিম্নাঞ্চল সৃষ্টি করে দিতে পারব না।”

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতা কাটাতে একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী দিলেও সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়নি।

মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। চট্টগ্রামের মেয়র নাছির তার নগরীর অবস্থা তুলে ধরে জলাবদ্ধতা দূর করতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ডিএনডি বাঁধের জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্যোগ নিতে কথা বলেন।

কমিটি গঠন

সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার আইনগুলোতে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না, তা পর্যালোচনা করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন আক্তারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দিয়েছেন মন্ত্রী।

জলাবদ্ধতা দূর করা নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন

এই কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ওয়াসার কী আইন, সিটি করপোরেশনের কী আইন এবং তারা কে কী করছে, সে বিষয়গুলো পর্যালোচনার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

এসব আইনে কী কী পরিবর্তন করতে হবে, সে বিষয়ে সুপারিশের নির্দেশনা দিয়ে মোশাররফ বলেন, “এটা কিন্তু খোলা মনে করতে হবে, যুদ্ধের ভাব না। এটা কিন্তু যুদ্ধের না। আমাদের কাজটা সম্পন্ন করতে হবে। ওয়াসার আইন, সিটি করপোরেশনের আইনটাও ক্লিয়ার। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তাদের পরিধি ও কাজ বেড়ে গেছে।”

কমিটিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর দুই সিটি করপোরেশনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা ওয়াসার এমডি, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে রাখা হয়েছে।

আইনে কোনো পরিবর্তন লাগবে কি না, বিধিগত কোনো পরিবর্তন করতে হবে কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে এই কমিটি।

কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে কোরবানির ঈদের পরে আবার সভার সূচি ঠিক করে মন্ত্রী বলেন, তখন রিপোর্ট নিয়ে বিচার-বিবেচনা করব।

“সিটি করপোরেশন কিন্তু এখন আর আগের মতো নেই। আরও ১৬টি নতুন এরিয়া তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠার পর ওয়াসার আইনে পরিবর্তন না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ৫৪ বছরে কিন্তু অনেক পানি গড়িয়েছে। ওয়াসার আইনে, বিধিতে একটি অক্ষরও পরিবর্তন হয়নি। ওয়াসার আইন ৬০ বছরেও পরিবর্তন হবে না এটা তো ঠিক কথা না। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কাজ করতে হবে।