কুড়িলে সাহস নিয়ে খাল খননের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

রাজধানীর কুড়িল-পূর্বাচল এলাকায় বেদখলি জমির তালিকা দিতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2015, 04:33 PM
Updated : 22 Sept 2015, 05:10 PM

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে (কুড়িল হতে বালু নদী পর্যন্ত) ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন’ প্রকল্প অনুমোদনের সময় তিনি এ নির্দেশ দেন।

বৈঠকে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুজন কর্মকর্তাও এই নির্দেশের বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন।

তবে এদের কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে পরিকল্পনা সচিব মোহা. শফিকুল আজমের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্ট কোনো উত্তর না দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পগামী রাস্তার দুই পাশে বালু নদী পর্যন্ত লেক তৈরিতে পাঁচ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যার বাস্তবায়ন করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

এই খাল আদৌ হবে কি না- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মঙ্গলবার একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেগুলোর মালিকদের আবাসন প্রকল্প রয়েছে। 

বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘৫ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার অবাস্তব প্রকল্প উঠছে একনেকে’, বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘উচ্চাভিলাষী অবাস্তব ৫ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা প্রকল্প একনেকে’ শিরোনামে নিয়ে সংবাদ ছাপা হয়।   

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অবৈধ ভূমি দখলকারীসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে ‘সম্ভাব্য সব বাধা’ মোকাবেলা করে এই খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়ী।

“প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন তারা যেন সাহস নিয়ে কাজটি করেন। তাদের সঙ্গে কেউ না থাকলেও মনে রাখবেন, তাদের সঙ্গে আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আছেন’।”

যমুনা বা বসুন্ধরার মতো কোনো আবাসন নির্মাতা কোম্পানির সঙ্গে আপস না করে দ্রুত এই খাল খননের জন্য এর আগেও একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৩ সালের এপ্রিলে কুড়িল ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত ২৫ অগাস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পগামী রাস্তার দুই পাশে খাল কাটার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এই খালের সঙ্গে বালু নদীর সংযোগ থাকবে।

১৮ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি জলাশয়ে ‘সাইনবোর্ড টাঙিয়ে’ ভূমি দখলকারী আবাসন নির্মাতাদের ‘ভূমিখেকো’ আখ্যায়িত করেন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়কে ‘শক্ত’ হতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

২৮ ডিসেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশের ওই এলাকায় লেকের বদলে ‘বক্স কালভার্ট’ করতে চাইছে যমুনা বা বসুন্ধরা গ্রুপ।

“কোথাও কোনো বক্স কালভার্ট হবে না। সব লেক হবে, ওপেন লেক হবে। দরকার হলে লেকের পাশ দিয়ে ব্রিজ করে নেবে তারা। তাদের পয়সার তো অভাব নাই।”

মঙ্গলবারের বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ভূমি দখল নিয়ে কথা বলেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ভূমিদস্যুদের দিকে ঈঙ্গিত করে বলেছেন, ‘তারা কত মানুষের জমি দখল করেছে, কত মানুষকে কাঁদিয়েছে।… মানুষের যখন টাকার নেশা পেয়ে যায়, তখন তারা আর অন্য দিকে তাকায় না’।”

নগরে খালের গুরুত্ব তুলে ধরে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় প্রত্যেক রাস্তার পাশে খাল ছিল। সেসব ভরাট করার কারণেই এখন পানি জমছে।

নিকুঞ্জে ১০০ প্লটের একটি প্রকল্প বাতিল করে সেখানে জলাধার করায় এখন বিমানবন্দরের রানওয়ে বৃষ্টিতে ডোবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।