Published : 10 May 2017, 11:38 AM
.
'রাম নেই, নেই রাজত্ব' এটি একটি বাংলা প্রবাদ হলেও যেন এর সাথে বাস্তবতা অনেকটাই মিশে আছে। আজ থেকে কয়েক'শ বছর আগে জমিদাররা আমাদের দেশ থেকে তাদের রাজত্ব গুটিয়ে নিলেও কালের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে তাদের রেখে যাওয়া স্থাপত্য। হাতি, ঘোড়া, পাঁক-পেয়াদা না থাকলেও তাদের রেখে যাওয়া স্থাপত্য আজও কালের সাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
জমিদারদের এখন আর দেখা নেই ভারতীয় উপমহাদেশে, তবে তাদের গড়া স্থাপত্যশৈলী আজও মন কেড়ে নেয়।
লোহাগড় গ্রামের লোহাগড় মঠ। আজ থেকে চার'শ বছর আগে লৌহ এবং গহড় নামে দুজন জমিদারের নামানুসারে এলাকাটির নাম রাখা হয় লোহাগড়। জমিদারদের নামানুসারে গ্রামের সাথে মিল রেখেই তাদের স্থাপত্যশৈলির নাম রাখা হয় লোহাগড় মঠ। আজ থেকে চার'শ বছর আগে জমিদাররা এই এলাকাটিতে রাজত্ব করতেন। মঠের মত বিশালাকার দুটি প্রাসাদ। এই প্রাসাদেই নাকি জমিদাররা তাদের বিচারকার্য সম্পাদন করতেন।
.
লোক মুখে শোনা যায় প্রতাপশালী দুই রাজা লৌহ এবং গহড় ছিলেন অত্যাচারী রাজা। তাদের ভয়ে কেউ মঠ সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যেতে শব্দ করতেন না। এমন কি একবার নাকি কোন ব্যক্তি ঘোড়া নিয়ে প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, "কেমন রাজা রে এরা বাবু রাস্তা গুলো ঠিক নেই!" পরবর্তীতে একথা জমিদারের গোলামরা শুনে লৌহ ও গহড়কে অবহিত করে। পরে ঐ রাস্তাটিতে স্বর্ণ-মুদ্রা দ্বারা ভরিয়ে দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে যখন ঐ ব্যক্তি রাস্তাটি ধরে আসছিলো তখন এ দৃশ্য দেখে চমকে উঠেন। রাজার শিস্যরা তার প্রতি অত্যাচার করেন।
এছাড়া ঐ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা জনাব বিল্লাল হোসেনে সাথে কথা বললে তিনি জানান, "আমরা জমিদার গো দেখি নাই। তয় হুনছি হেরা খুব ভালা মানুষ আছিলো না। অত্যাচারী রাজা আছিলো। এমন ও হুনছি দুই ভাই মিললা বাজি ধরতো গর্ভবতী মহিলার পেটের সন্তান নিয়া। অতপর তারা বাজি ধইরা পেট কাইটা চাইতো ছেলে না মেয়ে। আমরা নিজের চোখে দেহি নাই তয় লোক মুখে হুনছি।"
.
প্রতিদিন এলাকাটিতে কেমন দর্শনার্থী আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "প্রচুর আহে, কত লোক যে জমিদারগো এই স্থাপত্যশৈলি দেখতে আহে। তবে রাস্তাঘাট অতটা ভাল না। তাই পর্যটক ভিড়ানো টা কষ্ট হইবো। অচিরেই সরকারের উচিত রাস্তাঘাট আরো ভাল কইরা নির্মাণ কইরা এইখানে একটা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাক। এতে কইরা এলাকারও লাভ হইবো।"
অবকাঠামোগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলোর মধ্যে একটি লোহাগড়। পর্যটন শিল্পের এক চমৎকার ভবিষ্যৎ এখানে অপেক্ষা করছে। পাখ-পাখালির কলকাকলি, স্নিগ্ধ বাতাস আর দৃষ্টি নন্দন স্থাপত্যশৈলি যে কারো মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে।
যান্ত্রিক যুগে যখন মানুষ অর্থের পিছনে ঘুড়তে হয়রান, ঠিক তখন মনের বিষন্নতাকে দূর করতে এসব পর্যটন জায়গাগুলো ভ্রমণ প্রিয়সী মানুষদের মনে একটু হলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা যায়। তাই অচিরেই প্রত্নতত্ত বিভাগ লোহাগড় মঠের অবকাঠামো বিনির্মানে আরো বেশী আগ্রহী হয়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা।
তাছাড়া ভ্রমণ প্রিয়সী মানুষদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্থাপত্যশৈলির আশে-পাশের জংলা গুলো ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা করা হোক। রাস্তাঘাটের আধুনিকায়ন করা হোক। এতে করে যেমন পর্যটন শিল্পে আমাদের উন্নতি ঘটবে তেমনি ঐ এলাকার অর্থনীতির চাকাও আরো বেগবান হবে।
কিভাবে যাবেন লোহাগড় মঠে?
চাঁদপুর থেকে সোজা চাঁন্দ্রা বাজার। এরপর চান্দ্রা বাজার থেকে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করলেই লোহাগড় গ্রামটি। সিএনজি যোগে চাঁদপুর থেকে চাঁন্দ্রা বাজারের ভাড়া জনপ্রতি চল্লিশ টাকা। সেখান থেকে রিক্সায় ৩০ টাকা কিংবা হেঁটেও পৌঁছানো যাবে লোহাগড় মঠে।