Published : 17 Mar 2016, 12:38 AM
সেদিন রাস্তায় একজন ইঁদুর–তেলাপোকা মারার বিষ ফেরি করে বিক্রি করছিলেন। বয়স ২৫–২৬ বছর হবে; হালকা–পাতলা শরীর, ঘর্মাক্ত চেহারায় পরিশ্রমের ছাপ স্পষ্ট। সাথে থাকা হ্যান্ডমাইকে বাজছিল পণ্যের বিজ্ঞাপন।
সাদা–ছড়ি দেখে বুঝলাম তিনি অন্ধ। আগ্রহ নিয়ে কাছে গেলাম, কেননা সাধারণত অন্ধ গরীবেরা ভিক্ষা করে। কাজ করে খায় এমন মানুষের সংখ্যা কম।
ভাই বলে ডেকে তাকে থামালাম। তার নাম–পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। জানালেন মোঃ মিজানুর রহমান তার নাম, থাকেন মিরপুরে। অবাক হলাম একা একা মোহাম্মদপুরে এসে কেন এই কাজ করছেন। তিনি হেসেছিলেন। সেই হাসির রহস্য একটু পরে বুঝতে পেরেছিলাম।
জানালেন অল্প কিছুদিন ধরে এই কাজে আছেন তিনি। আগে কি করতেন, জিজ্ঞেস করাতে জানালেন তিনি আসলে বেকার বসে আছেন তাই এই কাজ করছেন। বাসায় বাবা আর ভাই–বোন আছে। কিন্তু তারা পড়াশুনার খরচ দিলেও এখন আর সাহায্য করতে চায় না।
কতদূর পড়েছেন, জিজ্ঞেস করতেই তিনি হাসলেন। জানালেন মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছেন; ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে পড়েছেন। পাশ করেছেন ২০১২ সালে।
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আবার জিজ্ঞেস করার পর একই উত্তর আসলো। বললেন তার কম্পিউটার প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট আছে আর ছোটখাটো মেকানিকের কাজও জানেন। কিন্তু কোথাও চাকরি পাচ্ছেন না। এক পর্যায়ে বললেন তার বন্ধুরা জানেনা তিনি এই কাজ করেন, তাই দূরের মোহাম্মদপুর এলাকায় ফেরি করে বেড়ান।
আমাকে বললেন তাকে সাহায্য করতে পারবো কিনা। আমি বললাম অবশ্যই চেষ্টা করবো।
আসলেই সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ! নইলে এমন একটি মেধাবী ছেলে শুধু অন্ধত্বের কারণে পথে পথে ঘুরে মরবে! তার পরিবার খুব একটা স্বচ্ছল নয় বুঝলাম, কিন্তু বাংলা কলেজ কর্তৃপক্ষ বা তার বন্ধুরা কি করেছে? বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল যে মিজানকে প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট দিলো, তারাও তো জন্য কিছু একটা করতে পারতো!
আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চাকরি দেয়ার উপযুক্ত না হলেও ভাবলাম ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকায় লিখে হয়তো মিজানের জন্য একটু চেষ্টা করে দেখতে পারি। তাই আমার এই খোলা চিঠি।
তার সাথে যোগাযোগের কোন মাধ্যম জানা নেই। আপনার সাথে মিরপুর বা মোহাম্মদপুর এলাকায় তার দেখা হয়ে যেতে পারে। সম্ভব হলে তার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করবেন প্লিজ।