Published : 05 Oct 2015, 12:15 AM
নগর-মহানগর কিংবা জাতীয় সড়ক-মহাসড়কের যা চেহারা, তাতে গ্রামের রাস্তাঘাট নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। কিছুদিন আগে সিলেটে গিয়ে সেখানকার সড়কের যে চরিত্র দেখলাম, তাতে যারপরনাই বেজার হয়ে পড়ছিলাম এ কারণেই যে, সেখানকার অভিভাবক দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এবং 'প্রভাবশালী' ব্যক্তি। অথচ সিলেট শহরের রাস্তাগুলো গর্ত আর পুকুরে থইথই! মাননীয় অর্থমন্ত্রীর নাম ধরে সেখানকার মানুষ রাতদিন খিস্তি-খেউড় করছেন!
তারও আগে চট্টগ্রাম শহরের রাস্তাগুলো দেখেছি। দেশের দ্বিতীয় রাজধানীর হাল দেখে যে কেউই বিস্ময়ের চূড়ায় উঠে যাবেন! চট্টগ্রামের এসপির নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যদেরকে ভাঙা রাস্তা পরিচর্যার ছবিও নিশ্চয়ই দেখেছেন। খোদ রাজধানীর সড়কগুলোই বেহাল! এবার ঈদে ঢাকার বাইরের বড় মহাসড়কে মানুষ কষ্ট করেছে শুধুমাত্র ভাঙাচোরার কারণে।
বর্ষায় সড়ক ভাঙবে, গর্ত হবে, দুর্ভোগ নেমে আসবে জনজীবনে- এটা যেন আজকালের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অমোঘ নিয়তি! কিন্তু সেটারও তো মাত্রা থাকা চাই। নাকি?
বহুদিন ধরে আমার নিজের এলাকা মিরসরাই থেকে অনেক শুভাকাঙ্খী বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের অবস্থা জানিয়ে আসছিলেন। অনেকে একাধিক ছবিও পাঠিয়েছেন। তাদের বাসনা ছিল- আমি যেন দু'কলম লিখি। আমি অদ্যাবধি তাদের আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে লিখতে পারিনি কিছু তথ্য স্বল্পতার কারণে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাহেরখালীর গজারিয়া গ্রামে গিয়েছিলাম সোনালী স্বপ্ন পাঠশালার শিক্ষার্থী বন্ধুদের দেখতে। ভোরের বাজার থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে গজারিয়া বাজার পর্যন্ত সিএনজি অটোরিক্শার চাকা ঘুরল। থেমে গেল বাজারের ৫০ গজ পশ্চিমে যেতেই। সেখান থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়েছে। যতটা পথ এগিয়েছি, ততটাই ছিল কর্দমাক্ত। এই রাস্তায় যে কোন ধরনের বাহন চলা দায়। নিচের ছবি দুটো দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। টানা কয়েকদিনের কাঠফাটা রোদেও বৃষ্টিস্নাত সড়কের গায়ে কাঁদা মেখে একাকার!
উপজেলার দিক থেকে দেশের ৪৮৭টির একটি মিরসরাই। কিন্তু অবস্থান, বৈচিত্র্য এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন দিক বিবেচনায় গোটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটির একটি হলো মিরসরাই উপজেলা। এমনও অনেক জেলা আছে যেগুলো মিরসরাইয়ের নিচে। অথচ সেই মিরসরাই আজো অবহেলিত! স্বাধীনতার আগে থেকেই মিরসরাইয়ের কোন না কোন নেতা সম্পৃক্ত ছিলেন জাতীয় রাজনীতিতে। সরকার গঠন হলেও থাকে মিরসরাইয়ের প্রতিনিধিত্ব। অথচ উন্নয়নটা সেভাবে হয়নি।
বিশেষ করে উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাঘাটগুলোর ব্যাপারে মাননীয় মন্ত্রী-সাংসদ এবং সরকারের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতার চাইতে উদাসীনতার দিকটাই প্রতীয়মান হয়। এ কথা সত্যি যে, সরকারের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ছোঁয়া পেয়েছে বা পাচ্ছে মিরসরাই। কিন্তু গুরুত্বের বিবেচনায় সেগুলো কতটা জনকল্যাণকর- সেটা প্রশ্নের দাবি রাখে।
গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে ভাঙা রাস্তায় পা রাখেন। অনেক জনপ্রতিনিধির বেলায়ও বিষয়টা এমন। বৃষ্টিতে ওই রাস্তার গর্তে পানি জমে। সেদিকে তাকালে তো আয়নার মতনই লাগে! নিজের চেহারা দেখা যায়। শুনেছি, ভাঙা আয়নায় মুখ দেখে ঘর থেকে বের হলে বিপদ ধেয়ে আসে! তাহলে আমরা রোজ রোজ 'ভাঙা আয়নায়' মুখ দেখে বের হয়ে বিপদকে হাতছানি দিয়ে ডাকছি! জনপ্রতিনিধিরাও বিপদ ডেকে আনছেন। এই বিপদ কার- তাঁর নিজের, নাকি জনগনের?
এই লেখাটি পড়ে আমাকে রাজনীতিতে জড়িয়ে দেবেন না প্লিজ। রাজনীতির নোংরা খেলোয়াড় আমি নই। আমার লেখা সবার ভালো লাগে না। যারা সইতে পারেন না, তারা আমাকে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে থাকেন। পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন- এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে মিরসরাইয়ে কী হয়েছে? সেটা তো সবারই জানা। ওরা উপযুক্ত প্রতিদান পেয়েছে। জনগন আপনাদের মাথায় তুলেছে। তাহলে সেই জনগনের সুবিধার দিকটা চিন্তা করা আপনাদের কর্তব্য। নইলে প্রতিদানটা আপনাদের জন্যেও তোলা থাকবে! সামনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আসছে। প্রার্থীরা আবারও আসবেন ভোট চাইতে। তখন এই প্রশ্নটা করতে ভুলবেন না যে, কেন পূর্ববর্তী অঙ্গীকারগুলো ভঙ্গ করেছেন? প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও পছন্দ করেন না।
আমি যতদূর জানি, দেশের প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ পাচ্ছেন উন্নয়ন কাজের জন্য। আমার দাবি- এই বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে যেন মিরসরাইয়ের রাস্তাঘাটগুলোর চেহারা একটুখানি ফেসিয়াল করা হউক। সবার হৃদয়ে শুভবুদ্ধির উদয় হউক।
লেখক : সাংবাদিক, [email protected]