Published : 01 Jul 2015, 12:11 AM
২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বদানকারী জাতীয়তাবাদী দলের মাননীয় প্রধান, পত্রের শুরুতে সামান্য অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন এই পত্র লেখকের সালাম ও পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকার মানসিক কষ্টের মধ্যেও অর্ধশতাধিক মামলা মোকদ্দমার ঘানি মাথায় নিয়ে শারীরিকভাবে কিছুটা হলেও সুস্থ-স্বাভাবিক আছেন ! পত্রের দ্বিতীয় লাইন পড়ে হয়তো ক্রোধান্বিত হবেন, আর হওয়াটাই স্বাভাবিক । সামান্য এক আদম সন্তান হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার মায়া কি জিনিস এবং তা হাতছাড়া হয়ে গেলে মানসিক অবস্থা কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে সে সম্পর্কে অতি সামান্য আন্দাজ করতে পারি কিন্তু বোধ করার সামর্থ্য একেবারেই নেই। এই লাইনটি পড়ে হয়তো সংক্ষুদ্ধ হয়ে ভাবতে পারেন, আপনার বর্তমান অবস্থা জেনেশুনেও কেন বারবার রাষ্ট্রক্ষমতা হারানোর বেদনা নামক ব্যাপারটি নিয়ে প্রলাপ বকে যাচ্ছি?
কিন্তু জনাবা, আপনাদের জোটের সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন ঘরোয়া ক্ষুদ্র আলোচনার বিষয়বস্তুর সারমর্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি মতামত আমরা মুহূর্তেই গণমাধ্যমের মারফত পেয়ে থাকি। সেগুলো নিয়ে আমাদের মানে জনগণের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ক্ষয় করার আর কোনপ্রকার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ক্ষয় না করে উপায় নেই। প্রতিটি বৈঠকেই আপনার বিস্তর অভিযোগ, অনুযোগ, হুমকি-ধামকি যে নাগরিক জীবন কে কতটা উদ্বিগ্ন করে তোলে তা আমাদের অবস্থানে না দাঁড়ালে কখনোও অনুভব করতে পারবেন বলে মনে হয় না। কিছু মাস পূর্বে আপনার নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট বাংলার জমিনে নাগরিক জীবনে পেট্রোল বোমার যে বিষ হাজার হাজার বর্গমাইল জুড়ে বিস্তার করেছিলো সে দিনগুলোর ভয়াবহতার কথা মনে পরলে আপনার বর্তমান বক্তৃতা-বিবৃতি পুনরায় আমাদের শংকিত করে তোলে। বিশেষ করে সেই ২০০৮ পরবর্তী আপনাদের জোটের দানবীয় তাণ্ডবের দুঃসহ স্মৃতি কোনভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। কারণ ঐ সমস্ত তাণ্ডবলীলার শিকার হয়েছিলাম আমরা সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষেরা।
যাই হোক জ্ঞানী-গুণীজনদের মতো তরজমা করার জ্ঞান মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে দেন নি তাই দীর্ঘ আলোচনায় না যাওয়াই সমীচীন। কিন্তু একেবারে যে আলোচনা না করেই পত্রের সমাপ্তি টানবো তাও নয়। ইদানীংকালে আপনার বেশী আক্ষেপ ৫ই জানুয়ারি নামক একটি দিবস নিয়ে, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দ্বায় আপনার দলের ও জোটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ আপনার উপরেই দিয়েছে। সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ৫ই জানুয়ারির মতো একটি হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলাফল যে আপনাদের সাংগঠনিক রাজনীতিতে কতক্ষানি কোণঠাসা করে দিয়েছে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট সকলের কাছে।
তারপরেও কেন ক্রমাগত অনুযোগ অভিযোগের তীর ছুঁড়েই যাচ্ছেন ? গত ২৮জুন'২০১৫ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (ড্যাব) আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও প্রয়োগকারী বাহিনী পুলিশসহ অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিচার বিভাগ কে যেভাবে একহাতে নিলেন তা কি আদৌ শোভনীয় আপনার মুখে? বিশেষ করে অনুমান নির্ভর দুর্বল তথ্য-প্রমানের ভিত্তিতে পুলিশ বাহিনী ও বিচার বিভাগ কে ঢালাওভাবে আক্রমণ করে একতরফা যা মুখে এসেছে তাই বলেছেন। রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এমন বেফাঁস অসংলগ্ন মন্তব্য করার আগে সমাজে আপনার কি অবস্থান তা একবার হলেও ভেবে দেখা উচিৎ ছিলো।
এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আপনার যতো বিষয়ে অভিযোগ, ক্রোধ, অনুযোগ সেসব তুলনায় যদি আপনার শাসনামলের অবস্থা বিবেচনা করা হয় এবং আপনাকে প্রশ্ন করা হয় তবে নিঃসন্দেহে আপনি এর কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারবেন না। এই দুই প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নে, মানোন্নয়নে এবং স্বাধীনতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপনার সরকার কি দিতে পেরেছিলো ? পুলিশ বাহিনীর যতটুকু অধঃপতন হয়েছিলো তাঁর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আপনার ও তৎকালীন মন্ত্রীসভার প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে হাজতের বাসিন্দা বাবর গং দের। পুলিশ কে দিয়ে নেতাদের বাসার বাজার পর্যন্ত করানো হয়েছিলো ! ভুলে যাবেন না প্লিজ! চাকুরী খাওয়ার ভয় দেখিয়ে কৌশলে কিভাবে পুলিশ কে বিরোধী দল নির্মূল অভিযানে জনগণের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন পুলিশের লাঠির আঘাতে [গুলিস্থান পীর ইয়ামেনি মার্কেটের সামনে] কিন্তু নির্দেশ ছিলো আপনাদের উপর মহলের বন্ধু জামায়তি প্রেসক্রিপশন অনুযায়ি। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা পরবর্তী পুলিশের অনেক উর্ধতন কর্মকর্তাগণ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে গিয়েও থমকে গিয়েছিলেন আপনাদের কুচক্রের শিকার হয়ে। তাঁদের ভেতরে দায়িত্ববোধ ছিলো, মানবতাবোধ ছিলো, দেশপ্রেম ছিলো যা আপনাদের সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপের দরুন বেড়ে উঠতে পারে নি। উত্তরাঞ্চলে গজিয়ে উঠা জঙ্গি সংগঠন জেএমবি কে দমন করতে বদ্ধ পরিকর ছিলো এই বাহিনীটি কিন্তু আপনাদের চাপে 'জেএমবি তখন হিরো' হয়েছে আর 'পুলিশ হয়েছিলো জিরো'। এরুপ আরো অসংখ্য নজির আছে আপনাদের শাসনামলের। বিচার বিচাগের জন্যেই বা কি করেছিলেন যে, আজ এই বিভাগের উপর এতো মায়া !! স্বদিচ্ছা থাকলে আপনারাই পারতেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে কিন্তু তাও করলেন না। এদেশের মানুষ কে যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড চিনিয়েছিলেন আপনারাই। ঐ ৫টি বছরে দেশটাকে জাহান্নামের টুকরো বানিয়েও শান্তি পান নি নিশ্চয়ই ! তাই আজ পুলিশ বাহিনীর শির উচ্চ দেখে মনের আগুনে দগ্ধ হন প্রতিনিয়ত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেখে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চান তাঁদের উপর মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে।
ভাগ্যিস নিজামি-মুজাহিদ গং দের আইন বিষয়ে সনদ ছিলো না, থাকলে হয়তো এঁদেরই কাউকে প্রধান বিচারপতির চেয়ার খানায় বসিয়ে দিয়ে সব হালাল করে নিতেন…..!!!
আল্লাহ্র ওয়াস্তে থামুন এবার….সৃষ্টিকর্তা কে ভয় করতে শিখুন, প্রকৃতির বিচার কে আমলে নিন। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে আলোর পথে যাত্রা শুরু করুন, মানুষের ভালো দিকটা কে অন্তরের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করুন, পেট্রোল পরিহার করে গোলাপের সুবাসিত জলে সিক্ত করার চেষ্টা করুন সাধারণ নির্দোষ মানুষ গুলোকে; দেখবেন সৃষ্টিকর্তা অন্তরে প্রশান্তি দিয়ে দিবেন। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার মঙ্গল করেন ।।
ইতি
শান্তিপ্রিয় একজন