Published : 07 Dec 2012, 12:00 AM
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
বিগত কয়েক বছরে ইসলামিক ফাইনান্স এর অসাধারণ প্রসার ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী সম্পূর্ণ ইসলামিক শরিয়া অনুবর্তী ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আসুন দেখি ইসলামিক ফাইনান্স এর কিছু মূল নীতি ও কেন তা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ।
ইসলামিক ফাইনান্স এর মূলনীতি সমূহ :
– বৈধ বানিজ্য ও সম্পদ ভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পদ উত্পন্ন করতে হবে । (শুধুমাত্র টাকাকে ব্যাবহার করে টাকা উপার্জন করা নিষিদ্ধ। )
– ব্যবসায়িক ঝুঁকি ভাগ করতে হবে।
– সব রকম ক্ষতিকর কার্যক্রম এড়িয়ে যেতে হবে।
– এছাড়াও খুব বেশি পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করাকেও নিরুত্সাহিত করা হয়। (যা গিয়ারিং ও ওভার ট্রেডিং -এর ঝুকি কমায় )
ব্যাবসা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পদ উত্পাদন :
ইসলামিক ফাইনান্স অনুজাই একটি উদ্যোগের মূল লক্ষ শুধু মুনাফা অর্জন নয় , বরং তার অর্থনৈতিক উপকারিতার লক্ষ বর্ধিত হত্তয়া উচিত সামাজিক কল্যাণ ও সম্পূর্ণ চাকরির ব্যবস্থা পর্যন্ত । ইসলামিক শরিয়া আইন অনুজাই শুধুমাত্র অর্থ ধার দিয়ে মুনাফা অর্জন নিষিদ্ধ এবং এটি সব প্রকার 'পণ্য ও বিনিয়োগ' লেনদেন এবং ব্যাবসার মূল ভিত্তি হিসবে কাজ করে ।
ইসলামিক ফাইনান্স এর অধীনে শরিয়া নীতি অনুসরণ করা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্তপূর্ণ । এই নীতির কাঠামো স্বীকার করে যে মূলধনের সাথে জড়িত খরচ রয়েছে ( cost of capital) এবং মূলধন সম্পদ সৃষ্টিতে সাহায্য করে । কিন্তু শুধুমাত্র টাকা দিয়ে টাকা বানানোকে নীতিবিগর্হিত ধরা হয় এবং ইসলামিক ফাইনান্স এর মতে সম্পদ উত্পাদন শুধুমাত্র 'ব্যাবসা ও বিনিয়োগের' মধ্যমে হত্তয়া উচিত।
ইসলামিক ফাইনান্স এ অর্থনৈতিক লেনদেনর শক্ত ভিত্তি হল যে মূলধন প্রদান করে (বিনিয়োগকারী) ও পুঁজি ব্যবহারকারীর (entrepreneur) মধ্যে ঝুকি ও পুরস্কার ( risk and reward) ভাগ করে নেয়া ।
প্রচলিত ব্যাংক ও ইসলামিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য:
প্রচলিত ব্যাংক ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কম সুদের বিনিময়ে অর্থ জমা নিয়ে এবং আরও উচ্চ হারে সুদের বিনিময়ে অর্থ ধার দিয়ে মুনাফা অর্জন করে। ইসলামিক ফাইনান্স এটি অনুমোদন করে না বরং ইসলামিক ফাইনান্স এর অধীনে বিনিয়োগে এমন ভাবে মুনাফা অর্জনের ব্যবস্থা করা হয় যাতে করে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তার বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানের 'লাভ ও লোকসানের' ভাগ নিতে পারে চুক্তি অনুজাই । ইসলামিক ব্যাংক এমন ভাবে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম বিন্যাস করে যাতে করে ব্যাংকের মুনাফা তার ক্লায়েন্টের মুনাফার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে। সুতরাং ব্যাংক তার মুনাফা ও লোকসান করে বিনিয়োগকৃত প্রকল্পের অনুজাই। এবং সেই জন্য ব্যাংক তার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে বেশি জড়িত ও সক্রিয় থাকে। কিন্তু প্রচলিত ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ গ্রহণ করে থাকে ব্যাবসার বর্তমান অবস্থা ও ঝুকি বিবেচনা করে যা তাদেরকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে খুব বেশি দায়িত্ববান করে না।
সুদ: ইসলামিক ফাইনান্সের অধীনে সুদ নিষিদ্ধ।
সুদের সাধারণ ধারনা হল – ঋণদাতা একটি পূর্বাহ্নে নির্ধারিত সুদ গ্রহণ করে সে যা ঋণ দিয়েছিল তার মূলধনের পরিমাণের উপরে ও তার চেয়া বেশি । কোরআনে আল্লাহ সরাসরি সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন :
"যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা'হ তা'আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন"
সূরা আল বাক্বারাহ আয়াত নং: ২৭৫
সুতরাং ইসলামে সুদ পরিস্কারভাবে নিষিদ্ধ । বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে সুদ অন্যায্য সৃষ্টি করতে পারে নিন্মুক্ত কারণ সমূহে :
দেনাদারের পরিপ্রেক্ষিতে :
সুদ অসাধুতা (unfairness) সৃষ্টি করে যখন একজন দেনাদারের জন্য, যখন তার ব্যাবসা মুনাফা অর্জন করে কিন্তু সুদ দেবার পর তা লোকসানে পরিণত হয়ে যায়। কোনও কোনও ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প এত উচ্চহারে সুদ নেয় যে সেই পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব হয়না। ফলে ক্ষেত্র বিশেষে সুদ না দিতে পেরে তারা সব হারিয়ে বসে ।
ঋণদাতার পরিপ্রেক্ষিতে:
সুদ অসাধুতা (unfairness) সৃষ্টি করে ঋণদাতার জন্য একটি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশে যেখানে পূর্বাহ্নে নির্ধারিত পরিশোধ হারের মূল্য কম হতে পারে কারণ তা মুদ্রাস্ফীতির হারের চেয়া কম হতে পারে।
অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে:
সুদ অর্থনীতিতে সীমিত সম্পদের অসম বন্টন সৃষ্টি করতে পারে এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতার কারণ হতে পারে। একটি সুদ ভিত্তিক অর্থনীতিতে মূলধন তাদেরকেই প্রদান করা হয় যাদের ধার নেবার যোগ্যতা বেশি ও ঝুকি কম কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে বিবেচনা করা হয়না যারা এই মূলধন দক্ষভাবে ব্যাবহার করতে পারবে । সুতরাং মূলধন অনেক অকার্যকর ক্ষেত্রে চলে যায়। এছাড়াও ব্যাংক ও অন্যান্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের ব্যাপারে যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করেনা কারণ তারা যতক্ষণ একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ পায় এবং তাতেই তারা সন্তুষ্ট থাকে । যদি বিনিয়োগের প্রকল্পের / ব্যাবসার মুনাফার সাথে তাদের মুনাফা জড়িত থাকে তখন স্বভাবিকভাবেই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান গুলো সতর্কতার সাথে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে সম্ভাবনাময় প্রকল্পগুলোতে। আর যে বিনিয়োগ ব্যাবহার করবে সেও বেশি নিশ্চয়তা এবং ব্যাবসার প্রসারের সুযোগ পাবে , সুদের ভরে ব্যর্থ হবার ঝুকি কমে আসবে । সর্বোপরি অর্থনীতি অনেক বেশি টেকসই (sustainable) হবে।
ইসলামিক ফাইনান্স এর সমর্থনকারীরা মনে করেন ইসলামিক ফাইনান্স এর মাধ্যমে বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট অনেকটাই এড়ানো যেত কেননা এই ব্যবস্থা যেকোনো প্রকার ফটকামূলক (speculative ) ও অনিশ্চয়তামূলক (uncertainty) লেনদেন পরিহর করার জন্য ব্যবস্থা নেয়। এছাড়াও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হিসাবে ব্যাংকের অতিরিক্ত যুকিপূর্ণ বিনিয়োগকে ও পুজিবাদী অর্থনীতিকে অভিযুক্ত করা হয়। পরিস্কারভাবে ইসলামিক ফাইনান্স এসব সমস্যার সমাধান প্রদান করে এবং এজন্যই বিশ্বব্যাপী ইসলামিক ফাইনান্স ব্যাপক স্বীকৃতি পাচ্ছে ও শক্তিশালী বিকল্প ব্যাবস্থা হিসাবে গড়ে উঠছে ।
তথ্যসুত্র ও বিস্তারিত :
Islamic finance could aid development -Islamic micro-finance or Interest Based micro-finance ?