ক্যাফে কুইন ভবন তিন তলা থেকে কীভাবে ৭ তলা, জানেন না রাজউক পরিচালক

“আজ অফিস বন্ধ। তাই ভবনটি বৈধ না অবৈধ, বা কখন অনুমতি নিয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়”, বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 09:48 AM
Updated : 8 March 2023, 09:48 AM

পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

ভবনটি কবে তৈরি, সরকারের নিয়মকানুন মেনে বানানো হয়েছে কি না– এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একজন পরিচালক। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, শবে বরাতের ছুটি শেষে অফিস খুললে সব দেখে বলতে পারবেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছ থেকে কিছু তথ্য জানা গেলেও তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না। তার ভাষ্য, ভবনটি তৈরি হয় চার দশক আগে। শুরুতে ছিল তিন তলা। পরে তা আরও চার তলা বাড়ানো হয়।

যার হাত ধরে ভবনটি তৈরি হয়, তিনি মারা গেছেন এক দশক হল। এখন তার ছেলেদের মালিকানায় রয়েছে ভবনটি।

ভবনের নিচের দুটি ফ্লোরে ছিল মূলত স্যানিটারি সামগ্রীর দোকান ও গুদাম, তৃতীয় তলায় ছিল ‘ক্যাফে কুইন’ নামে একটি রেস্তোরাঁ, যেটি বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ। বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই খাবারের দোকানের কারণেই সাত তলা দালানটি ‘ক্যাফে কুইন ভবন’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

এর ওপরের কয়েকটি ফ্লোর ছিল আবাসিক। সেখানে কিছু ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়, কিছু ফ্ল্যাটে মালিকদের পরিবার থাকত। তবে দুর্ঘটনার পর তাদের পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার বিকেলে যখন সরগরম কেনাবেচা চলছিল, তখন বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে ভবনের নিচের অংশে। তাতে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ নম্বর হোল্ডিংযে ওই ভবনের নিচের দুটি ফ্লোরের ছাদের একাংশ ধসে বেজমেন্টে পড়ে।

বিস্ফোরণের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, সামনে রাস্তায় থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরাও হতাহত হন।

এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ঘটনায়। নিখোঁজ আরও কয়েকজনের স্বজনরা ভিড় করে আছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে। পুরো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় উদ্ধারকর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারছেন না। 

বুধবার ভবনটি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজউকের পরিচালক হামিদুর রহমান। সাততলা ভবনটি আইন কানুন মেনে গড়ে তোলা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আজ অফিস বন্ধ। তাই ভবনটি বৈধ না অবৈধ, বা কখন অনুমতি নিয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়।”

ভবনটি বৈধ না অবৈধ- এমন প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, “কাগজপত্র দেখে বলা যাবে।”

সাততলা এই ভবনটির দুই পাশে আছে আরও দুটি বহুতল ভবন। দক্ষিণপাশের সাততলা ভবনটি ঘেঁষেই গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাফে কুইন ভবন। উত্তরপাশের ভবনটির সঙ্গে ফাঁকা রাখা হয়েছে দুই ফুট।

বিস্ফোরণে ক্যাফে কুইন ভবনের নিচতলার উত্তরপাশের সালু এন্টারপ্রাইজ ও দক্ষিণের ভবনের নিচতলার বাদশা ট্রেডিং সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড, একতলা ও দোতলা স্যানিটারির দোকান, তৃতীয় তলায় ‘সুজুতি এন্টারপ্রাইজ’ আর চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ভবন মালিকের দুই ছেলে ও পরিবার থাকত। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় থাকত ভাড়াটিয়া।

ভবনটি কবে গড়ে উঠেছে, সে বিষয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া গেল কিছু তথ্য। একজন বললেন, “এটি ৪০ বছর আগের। আগে তিন তলা ছিল। তৃতীয় তলায় ক্যাফে কুইন হোটেল ছিল।”

তিনি জানান, ভবনটির মালিক ছিলেন রেজাউর রহমান। মারা গেছেন এক দশক হয়ে গেল। তার তিন ছেলে। এদের একজন থাকেন দেশের বাইরে। দুই জন ওই ভবনেই থাকেন।

তবে ভবন মালিকদের কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। তাদের নামও কেউ বলতে পারছিলেন না।

সেই ব্যক্তি জানালেন, রেজাউর রহমান মারা যাওয়ার পর খাবার হোটেলটি আর চালাননি ছেলেরা।

অন্য একজন বললেন, “আগে হোটেলের রান্না ঘর ছিল আন্ডারগ্রাউন্ডে। পরে দোকান বানানো হয়।”

বিস্ফোরণের কারণ ‘পাইপলাইনের গ্যাস নয়’

ভবনটি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিতাসের পরিচালক সেলিম মিয়া। তার মতে, পাইপলাইনের গ্যাস এই বিস্ফোরণের কারণ নয়।

এই সিদ্ধান্তে আসার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “নিচে একটি রাইজার পাওয়া গেছে। তবে রাইজারটি অক্ষত ছিল।”

“কাজেই বিস্ফোরণ অন্য কোনো গ্যাস থেকে হতে পারে।”

বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে আছে অন্যান্য সংস্থাও। র‌্যাবের বম ডিসপোজাল ইউনিটের উপপরিচালক মেজর মশিউর রহমান বলেন, “আমরা সাবধানতা অবলম্বন করে ভবনটির নিচে ঢুকেছিলাম। তবে কোনো অগ্নিকাণ্ড নয়, এখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

“ঘটনাটি গ্যাস লাইন লিকেজ বা অন্য কোনো কারণে ঘটতে পারে। তবে বিস্ফোরণের মাত্রাটা অনেক বড় ছিল।”

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এই ঘটনার জন্য দায়ী কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই আশঙ্কা কম।

“একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছি। আমরা এখানে নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা জানাতে পারব।”

ভবনটিতে কেউ আটকা পড়ে আছে কি না, সেটি অনুসন্ধানে কাজে লেগেছে ডগ স্কোয়াডও।

উচ্চ ঝুঁকির কারণে ভেতরে উদ্ধারকর্মীদের অভিযান কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ভেতরে কেউ আছেন কি না, সেটি খুঁজে বের করতে ভরসা ডগ স্কেয়াড। র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশের কুকুরগুলোও এই কাজ করছে।