'ওর নাম কী? ও কি পার্সিয়ান না কি মিক্সড?' আদুরে প্রাণীগুলোর গায়ে হাত বুলিয়ে এভাবেই পালকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছিলেন বিড়ালপ্রেমীরা।
ছুটির দিনে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে প্রিয় পোষা বিড়ালকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। সেজেগুঁজে আসা প্রাণীগুলো অংশ নিল সেরা খাদক, ক্যাটওয়াক, যেমন খুশি তেমন সাজোর মতো প্রতিযোগিতায়।
শুক্রবার এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হল ক্যাট শো।
বেলা ১২টায় শপিংমলে হাজির হয়ে গুটি গুটি পায়ে এ উৎসবস্থল খুঁজছিল প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিবা মাহরুকের চোখ। মামার হাত ধরে সে পোষা রোজীকে সঙ্গে নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে জায়গাটি খুঁজে পেল। তবে আরিবাকে হতাশ করে সকাল ১১টার এ আয়োজনের মূল পর্ব শুরু হল বিকাল ৪টায়।
তখন প্রধান তিন প্রতিযোগিতার একটি 'খাদক বিড়াল' শুরু হয়। লটারির মাধ্যমে এতে অংশ নিল ১০টি বিড়াল। ওদের সবার সামনে এক বাটি করে রাখা 'ক্যাটফুড'। নির্ধারিত ৫ মিনিটের মধ্যে বেশি খেতে পারা বিড়ালটি হল প্রথম।
পালকদের মধ্যে দুজন বলে বসলেন, সব বিড়াল ক্যাটফুড খেতে পারে না। তাই তাদের বিড়াল প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারেনি!
এরপরেই নবাব হলরুম মুখরিত হল প্রাণীপ্রেমীদের উল্লাসধ্বনিতে, এবার যে ক্যাট র্যাম্প শো!
পোষা বিড়ালকে হাতে নিয়ে কিংবা সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে হাঁটলেন পালকরা। এ প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন কণ্ঠশিল্পী মেহরীন, চিকিৎসক ও অভিনেত্রী নায়লা নাঈম ও ফুটবলার কায়সার হামিদ।
এরপরে এল 'যেমন খুশি তেমন সাজো' প্রতিযোগিতার পালা। দর্শনার্থীদের চোখ তো ছানাবড়া! প্রতিযোগী বিড়ালকে কেউ সাজিয়েছেন হাওয়াইয়ান পুরুষদের মতো, কেউ দিয়েছেন বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানের ‘লুক’, কেউ আবার সাজিয়েছেন জাদুকরের মতো।
বলিউড বাদশার সাজে আসা বিড়ালটির নাম 'লুসিফার দ্য পিউক'। বিড়ালটির পালক সারা বলেন, “আমাদের বাসায় ও আমাদের শাহরুখ খান। ওর ভাবও তেমনই।”
আগে ঘোষণা দেওয়া এ তিন প্রতিযোগিতার বাইরে আরও কয়েকটি প্রতিযোগিতাও দেখা গেল।
'রিয়াল ক্যাটওয়াক' প্রতিযোগিতায় পালক ছাড়াই হলরুমজুড়ে হেঁটে বেড়াল বিড়াল। কোনো কারিকুরি জানলে সেটিও দেখানোর সুযোগ ছিল ওদের।
পুরানা পল্টন থেকে পোষা বিড়াল লুসিকে নিয়ে এসেছিলেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর। হাসিমুখে জানালেন, তার বেশির ভাগ সময় কাটে বিড়ালটির সঙ্গে। বেশির ভাগ বিড়াল পাখি অপছন্দ করলেও তার বিড়াল পাখিদের সঙ্গে খেলে।
ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছিলেন অনেক বিড়ালপ্রেমী। দুই বছর ধরে পোষা পার্সিয়ান বিড়াল ‘ক্লাউডি’কে নিয়ে রংপুর থেকে আসেন রেদওয়ান রশিদ। তিনি বললেন, মাছ ও মুরগি সিদ্ধ করে ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে ক্লাউডিকে খাওয়ান তিনি।
হলরুমের এক কোণায় ছিল ক্যাটফুড বিক্রির স্টল। বিড়ালের জন্য একই কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাবার ছিল সেখানে।
উদার নামে এক নারী বললেন, দাম চড়া হওয়ায় তার বিড়াল 'মাও'- এর জন্য ক্যাটফুড কিনতে পারেননি।
অনুষ্ঠানে বিড়ালদের বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয় পেট ফুড অ্যান্ড কেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেবারত ডা. জাহিদ হাসান বললেন, “আমরা নরমাল চেকআপ করে দিচ্ছি। বিড়ালগুলো দূর থেকে আসার কারণে চাপে পড়ে গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে মালিকরা চিন্তিত হয়ে পড়ছে।”
প্রাণী কল্যাণে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রবিনহুড দ্য অ্যানিমেল রেসকিউয়ার (আরটিএআর)’ টিমের প্রধান আফজাল খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, “গণভবন থেকে কড়াইল বস্তি পর্যন্ত আমরা পোষা প্রাণীদের সেবা দিয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা কম হওয়ায় সবখানে সেবা দিতে পারি না।”
পোষাপ্রাণীদের জরুরি সেবা দিতে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
উৎসবে অংশ নিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলেন উল্লেখ করে আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আলমগীর জানালেন, তাদের এই আয়োজনের শুরু বন্ধুদের আড্ডায় চা খেতে খেতে।
“আমরা একটি উদ্দেশ্যে নিয়ে এগোচ্ছি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পোষা প্রাণী অপরিহার্য। তাদেরও প্রাণ আছে, বাঁচার অধিকার আছে। এ বিষয়ে আমরা জনসচেতনতা বাড়াতে চাই।”
এমন আয়োজন আরও করতে চান বলে জানালেন তিনি।
মাস তিনেক আগে এমন আসর বসেছিল বরিশালে, তখন দক্ষিণের ওই নগরী প্রথমবারের মতো দেখেছিল ‘ক্যাট শো’। সেখানকার আয়োজকরাও জানিয়েছেন, এখন থেকে প্রতিবছর তারা ক্যাট শো করবেন।