এসএসসিতে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে প্রায় এক দশক আগের করা এক রিট মামলায় এই রায় এল।
Published : 24 Jan 2023, 04:27 PM
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত ফরম (এসআইএফ) পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে বাবার নাম লেখার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা আর থাকছে না। বাবা, মা এবং আইনগত অভিভাবক- এই তিন বিকল্পের যে কোনো একটি ব্যবহার করলেই চলবে বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
এসএসসিতে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে প্রায় এক দশক আগের করা এক রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেয়।
রিটকারী পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকী পরে সাংবাদিকদের বলেন, “১৪ বছর আগে যখন রিটটি করা হয়, তখন একজন শিক্ষার্থীকে এসআইএফ ফরমে অভিভাবক হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে ‘বাবা’ ও ‘মা’র নামের ঘর পূরণ করতে হত, অর্থাৎ বাবা ও মার নাম লিখতে হত। যে কোনো একটি পূরণ করলে হত না। ফলে একজন শিক্ষার্থী বা পরীক্ষার্থী চাইলেই বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনো একজনের নামের ঘর পূরণ করতে পারত না।
“হাই কোর্টের এ রায়ের ফলে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের মধ্যে যে কোনো একজনের নামের ঘর পূরণ করলেই চলবে।”
আদালতে রুলের পক্ষে শুনানিতে আরো ছিলেন অ্যাডভোকেট এমএম রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ না করায় ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড।
মা ও সন্তানকে স্বীকৃতি না দিয়ে বাবা চলে যাওয়ায় ওই তরুণী তার মায়ের একার চেষ্টায় বড় হচ্ছিলেন। পরে এই ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে ২০০৯ সালের ২ অগাস্ট মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)’, ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’ ও ‘নারী পক্ষ’ হাই কোর্টে জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করে।
রিটের প্রাথমিক শুনানি হয় ২০০৯ সালে ৩ অগাস্ট বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর বেঞ্চে। সে সময় আদালত রুল জারি করে।
মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থি ও বিশেষভাবে শিক্ষা অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এই বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থি এবং অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না– তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই রুলের নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার রায় দিল আদালত।