অঞ্জলি-ভক্তিতে বিদ্যাদেবীর আরাধনা

এবারও ঢাকায় সবচেয়ে বড় আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে; অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে আলোকিত মানুষ হওয়ায় প্রত্যাশায় দেবী বীণাপাণির কৃপা প্রার্থনা করেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 10:23 AM
Updated : 26 Jan 2023, 10:23 AM

নতুনদের হাতেখড়ি, বাণী অর্চনা, আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনে বিদ্যা ও ললিতকলার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করলেন দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মণ্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশে সরস্বতী পূজা হয়; প্রতিবারের মত এবারও ঢাকায় সবচেয়ে বড় আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হলের মাঠ জুড়ে বিভিন্ন ‘থিমের’ আদলে ৭৩টি মণ্ডপ তৈরি করে প্রার্থনা করেন। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে আলোকিত মানুষ হওয়ায় প্রত্যাশায় দেবী বীণাপাণির কৃপা প্রার্থনা করেন তারা।

জগন্নাথ হলে সকাল ৯টায় বাণী অর্চনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পূজা। পুরোহিত ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ মন্ত্রপাঠ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করেন। এরপর ভক্তরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ সেখানে সরস্বতীর আরাধনা করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও।

জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী বাঁধন দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মত সরস্বতী পূজা পেয়েছিলাম ২০২০ সালে। গত দুই বছর আমরা প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ওভাবে পূজা করতে পারিনি। এ বছর আড়ম্বরপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল থেকে পুণ্যার্থীরা এসেছেন। খুব ভালো লাগছে।

“মায়ের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের জ্ঞানের চক্ষু খুলে দেন। সুন্দর মন ও চিন্তাশক্তি দান করেন।”

রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী অতসী সেন বলেন, “আমি গান করি। আমার গানের যাতে উন্নতি হয়, সেই প্রার্থনা করেছি মায়ের কাছে। এছাড়া আমার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ভালো হোক হোক, সেই প্রার্থনাও ছিল।”

প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়। সাদা রাজহাঁস এই দেবীর বাহন।

ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠ হতেখড়ির আয়োজন করেন।

ধানমণ্ডি থেকে মেয়ে অনুশ্রী রায়কে নিয়ে জগন্নাথ হলে হাতেখড়ি দিতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জুলি রায়। তার প্রার্থনা, তার মেয়ে যাতে বড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে পারে।

“আজকে মেয়ের হাতেখড়ি হল। মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি- আমার মেয়ে যাতে বিদ্যা-বুদ্ধিতে আলোকিত মানুষ হতে পারে।”

পিলখানা থেকে জগন্নাথ হলে এসে ছেলে গৌরব দাসকে হাতেখড়ি দেন বাবা গোপাল দাস। তিনি বলেন, “আমি চাই আমার ছেলে আলোকিত মানুষ হোক। সমাজে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুক।”

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, “সরস্বতী বিদ্যা, সংস্কৃতি ও সংগীতের দেবী। গত দুই বছর করোনার মধ্যে মানুষ বিষণ্নতার মধ্যে ছিল। দেবীর কাছে আমাদের প্রার্থনা, করোনা পরবর্তী নতুন পৃথিবীতে জ্ঞানের আলোয় বিষণ্নতা দূর করে একটি নতুন পৃথিবী গড়ে উঠুক।

“যে পৃথিবীতে সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের জন্য একটি শান্তির নিবাস গড়ে উঠুক। মায়ের কাছে প্রার্থনা, আমরা সব সময় শান্তি চাই। মানুষের মধ্যে ভালো ও মন্দ দুটি দিক আছে। আমরা চাই ভালোর দিকটা উপরে চলে আসুক। মানুষের মাঝে বিবাদ দূর হোক।”

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং কবি সুফিয়া কামাল হলে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এসব হলের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সকলকে শুভেচ্ছা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, হলসমূহের প্রাধ্যক্ষসহ আবাসিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য বলেন, সরস্বতী বিদ্যা, জ্ঞান ও সুরের দেবী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে সরস্বতী পূজা। বিদ্যা দেবীর আরাধনার মাধ্যমে অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিনাশ হবে এবং মানুষের মাঝে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে।

অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে সকল ধর্ম ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সত্য, সুন্দর, সম্প্রীতি ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য উপাচার্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।