একজন পাঠক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাউশি সম্ভবত সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেছে, সে কারণেই এ বিপত্তি।
Published : 16 Jan 2024, 06:46 PM
তীব্র শীতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্কুল বন্ধের নির্দেশনা দিতে গিয়ে তাপমাত্রার হিসাবে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশি।
মঙ্গলবার বিকালে মাউশির এক অফিস আদেশে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
“এক্ষেত্রে যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর নিচে নেমে যাবে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী) আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ওইসব জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেবেন।”
নির্দেশনাটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের মাউশির আঞ্চলিক উপপরিচালকদের পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু আড়াই ঘণ্টা পর মাউশির সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নতুন আদেশে বলা হয়, যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রমাণক অনুযায়ী) নেমে যাবে, আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ওইসব জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেবেন।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই সময়ে রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বদলগাছী, তাড়াশ, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রাজারহাট, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। কিন্তু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কোথাও ১০ ডিগ্রির নিচে নামেনি।
বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সর্বশেষ কবে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল, আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে তা জানতে চেয়েছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানালেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে কখনও রেকর্ড করা হয়েছে বলে তার জানা নেই।
তিনি বলেন, দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত, সেই হিসাব ধরে তারা আবহাওয়া পর্যালোচনা করেন। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলিসয়াসের উপরে উঠলে তাকে তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলা হয় শৈত্যপ্রবাহ।
“এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাসেও চলে যেতে পারে। সেরকম পরিস্থিতি আমাদের এখানে হয়নি।”
২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল রেকর্ড ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দিনাজুপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, “চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ মাসের শেষে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।”
মাউশি প্রথম যে নির্দেশনা দিয়েছিল, তাতে কোনো জেলার তাপমাত্রার তথ্য নিয়ে স্কুল বন্ধ রাখা বা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা শিক্ষার্থীদের জানানো একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়াত। তারপরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তর্কের খাতিরে ছিল যৌক্তিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য।
কিন্তু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামার জন্য যদি অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে শীতের মধ্যে হয়ত আর স্কুল বন্ধ করতে হবে না।
একজন পাঠক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাউশি সম্ভবত সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেছে, সে কারণেই এ বিপত্তি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে অফিস আদেশ পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা। যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবেই।”
গলদ কোথায় সেটা বুঝতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “প্রাথমিকের সাথে সমন্বয় করে নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বুঝে বিভিন্ন জেলা ডিভিশনাল ডিরেক্টররা আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন। মূলত সেই এলাকার শৈত্যপ্রবাহের ও শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নির্দেশনা দেবেন। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দেশের যে কোনো জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
“সেক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলের উপপরিচালকরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেবেন।”