সিগারেটের দাম আরও বাড়ছে

নিম্ন স্তরের প্যাকেটে ৫ টাকা, মধ্যম ও উচ্চ স্তরে ২ টাকা করে এবং অতি-উচ্চ স্তরে ৮ টাকা দাম বাড়বে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 11:27 AM
Updated : 1 June 2023, 11:27 AM

ধূমপায়ীদের মধ্যে যারা সিগারেট কেনেন তাদের কাছ থেকে আরও বেশি রাজস্ব আদায় করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর কারণে মানভেদে প্রতি প্যাকেটের দাম ২ থেকে ৮ টাকা বাড়বে।

তবে স্বল্প আয়ের মানুষদের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিড়ির দামে বাড়তি করারোপ করা হয়নি। যদিও জর্দা ও গুলের দামও বাড়াতে চান তিনি।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখানে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে।

অবশ্য ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে কাজ করে এমন দুটি বেসরকারি সংস্থা মনে করে অর্থমন্ত্রী যে হারে সিগারেটের দাম বাড়িয়েছেন, সেটা যথেষ্ট হয়নি। দেশে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তার তুলনায় সিগারেটের দাম কম বাড়িয়ে বরং তিনি ধূমপানে পরোক্ষভাবে উৎসাহী করেছেন। 

দাম কত বাড়বে

বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, “সিগারেটের নিম্নস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৪৫ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করছি।”

এছাড়া মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৬৭ টাকা ও তদুর্ধ্ব, উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১১৩ টাকা ও তদুর্ধ্ব, অতি-উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।

এই তিনটি মূল্যস্তর এবং এর ওপরে প্রতিটির ওপর সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ আরোপের কথাও জানান মন্ত্রী।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪০ টাকা, মধ্যম স্তরের দাম ৬৫ টাকা, উচ্চ স্তরে ১১১ টাকা এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আমদানি করা সিগারেট পেপারের বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে সিগারেটের উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়ে যাবে।

সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও আগের মতোই যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাতে তৈরি ফিল্টার বিযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮ টাকা, ১২ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯ টাকা ও আট শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া ফিল্টার সংযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯ টাকা ও ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন মন্ত্রী।

জর্দা ও বিড়িতে সম্পূরক শুল্ক আগের মত ৫৫ শতাংশ রাখা হলেও এই দুটি তামাকপণ্যের খুচরা বিক্রির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি।

প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৩ টাকা নির্ধারণসহ সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন মুস্তফা কামাল।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে জর্দা ও গুলের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ১০ গ্রাম জর্দার দাম ৪০ টাকা, সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ এবং ১০ গ্রাম গুলের দাম ২০ টাকা, সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ রাখা হয়।

এদিকে তামাক বিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান- প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি ট্যোবাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, “প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় ‘আরেক দফা’ সস্তা হয়ে পড়বে তামাকপণ্য।”

এতে তরুণরা তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত হবে, তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বাড়বে এবং একই সঙ্গে এখাতে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।

তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব আমলে না নেয়ায় সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারও বাধাগ্রস্ত হবে বলে মত তাদের।

মূল্যস্তর বাড়ানোর কারণে বর্ধিতমূল্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাবে বলেও মনে করে সংস্থা দুটি।

অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবের পর তামকবিরোধী দুটি সংগঠনের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরও সস্তা হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে এই স্তরের সিগারেটের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

প্রস্তাবিত বাজেটে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য আমদানির সুযোগ বন্ধের দাবিও জানান তিনি।