যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলরের দায়িত্বে থাকা ডেরেক শোলে দেশটির আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পলিসি অ্যাডভাইজার।
Published : 10 Feb 2023, 07:29 PM
দুদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের জ্যেষ্ঠ পলিসি অ্যাডভাইজার ডেরেক শোলে।
তার এই সফর দুদেশের সম্পর্ককে ‘আরও শক্তিশালী’ করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উনার এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র– দুদেশের মধ্যে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, এটাকে আরও জোরদার করা। দুই সরকারের মধ্যে যে সম্পর্কটা আছে, সেটাকে আরও শক্তিশালী করা।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলরের দায়িত্বে থাকা ডেরেক শোলে দেশটির আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পলিসি অ্যাডভাইজার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ কূটনৈতিক দায়িত্বও সামলে থাকেন এই কর্মকর্তা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা সঙ্কটের মত বিষয় তার এই সফরে আলোচনার টেবিলে থাকতে পারে।
পাশাপাশি র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরাবরের মেই জোর দেওয়া হবে।
মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেন, “উনি বিশেষত আমাদের বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গা সংকট, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অবস্থান, আমরা যে মানবিক সাহায্য দিয়েছি সে বিষয়ে সরেজমিনে দেখতে এবং আলোচনা করতে আসছেন।
“বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কটা সেই আগের মতই আছে। আমরা একযোগে কাজ করছি সকল সমস্যা সমাধানের জন্য।”
সফরের আগেই বাংলাদেশে একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলেছেন ডেরেক শোলে।
সেখানে তিনি বলেন, “মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যা কেবল খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এই শরণার্থী সংকট বাংলাদেশের উপর চাপ ফেলছে, তা কমানোর জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্র সাধ্যমত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি বাংলাদেশকে।
“মানবিক প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার কার্যক্রমও রয়েছে।”
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সফরের ধারাবাহিকতায় আসছেন ব্লিংকেনের উপদেষ্টা ডেরেক শোলে।
২০২২ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সফরের পর অগাস্টে বাংলাদেশ সফর করেন দেশটির আন্তর্জাতিক সংগঠন বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন।
এরপর গতবছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আকতার।
পরের মাস ২০২২ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশটির জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস চার দিনের বাংলাদেশ সফরে আসেন।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে চার দিনের বাংলাদেশ সফরে আসেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লউবাখার।
তিনি ফিরে যাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় মধ্য জানুয়ারিতে ঢাকা সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু।
এরপর ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা সি ম্যাকডনাল্ড বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও স্থগিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কিত কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে ভাবার কারণে উচ্চ পর্যায়ের এসব সফর হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ডেরেক শোলে।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আগামী দশকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সে কারণেই উচ্চপর্যায়ের সফরকারীদের আমরা ঘন ঘন দেখছি।”
বাংলাদেশে অবাধ ও নিরেপক্ষ নির্বাচন দেখার আশার করার কথা জানিয়ে ডেরেক শোলে বলেন, “আমরা স্বীকার করি যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রও নিখুঁত নয়; তবে আমরা নিজেদেরকে আরও ভালো করার, স্বীকার করার এবং উন্নত করার চেষ্টা সবসময় করে যাচ্ছি।
“এ কারণে আমরা যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অবাধ ও নিরেপক্ষ নির্বাচন, নাগরিক সমাজের সমাবেশ ও মতপ্রকাশের বিষয়ে উদ্বেগ তুলে ধরি, তখন সেটা আমরা অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্বের জায়গা থেকে করে থাকি।”