তাহাদের ভালোবাসা, যেন কেবলই মরীচিকা

প্রিয়ার ভাষায়, তারা যেন ‘গন্ধহীন কাগজের ফুল’। সে ফুলে গন্ধ নেই বলে মানুষ ‘খেলনা’ হিসেবে ব্যবহার করে, মন থেকে কেউ ভালোবাসে না।

রাসেল সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2024, 02:21 AM
Updated : 14 Feb 2024, 02:21 AM

মানব সমাজে জন্ম নেওয়ার পর নিজের শরীরটাকে ঠিকঠাক বুঝে ওঠার আগেই মনের জমিন চিনে ফেলে শিশু। তারও মন খারাপ হয়, মন চায় অনেক কিছু। 

এরপর আসে কৈশোরের মাতাল হাওয়া। মগজে জাগে প্রেমের রসায়ন। মন বলে ওঠে, তারও আছে ভালোবাসার, ভালোবাসা পাবার অধিকার।    

তবে কেউ কেউ থাকে, যাদের সেই অধিকারটুকু চাইবার অধিকার সমাজ দেয়নি।  ভালোবাসা তাদের জন্য শুধুই মরীচিকা। 

তাদের একজন প্রিয়া খান। জীবনের ৩৯টি বসন্ত পার করে আসা প্রিয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেও কেউ তার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি। সমাজের নানা বেড়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃসঙ্গতাই তার জীবনের সঙ্গী। 

প্রিয়া যখন ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে উঠলেন, বুঝতে পারলেন, ঠিক অন্যদের মত নন তিনি। তার চাওয়া-পাওয়াটা আলাদা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলোও বুঝতে শুরু করলেন। উপলব্ধি করতে শুরু করলেন, তিনি আসলে পুরুষ নন! 

“যে বয়সে একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে, তখন একটা ছেলেকে আমার পছন্দ হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারলাম, আমার ভেতরে অন্য কেউ বিরাজ করে।” 

স্কুল জীবনে এক ছেলের প্রেমে পড়েছিলেন প্রিয়া। বললেন, “ধরে নেন ওই ছেলেটির নাম ছিল প্রত্যয়। সবার চোখে আমি একজন ছেলে, শার্ট-প্যান্ট পরে স্কুলে যাই। তারপরও একজন ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে মনে বাসনা জাগে।”  

“প্রত্যয়ের সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। একদিন না দেখলে ভালো লাগত না। শুরুতে বুঝতাম না। আমি কি ছেলে? না মেয়ে? নাকি অন্য জগতের কেউ?” 

হিজড়াদের জন্য সমাজের সমানুভূতিহীনতার গল্পই প্রিয়ার জীবন। নিজের জীবনের প্রেম-বিরহ আর বাধাবিপত্তির অভিজ্ঞতা তিনি বলেছেন অকপটে। 

প্রিয়ার ভাষায়, হিজড়ারা যেন ‘গন্ধহীন কাগজের ফুল’। সে ফুলে গন্ধ নেই বলে মানুষ ‘খেলনা’ হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু মন থেকে কেউ ভালোবাসে না। 

“সবাই আমাদের ব্যবহার করতে চায়, ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আমরা কি কারো ভালোবাসার যোগ্য হতে পারি না?” 

প্রিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান করতেন। সেজন্য উত্ত্যক্তও হতে হত। কেউ ‘হিজড়া’, কেউ ‘মেয়েলি’, কেউ আবার ‘মাইগ্যা’ বলে কটাক্ষ করত। 

ঢাকার সাভারের একটি স্কুল থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করেন প্রিয়া। 

“এসএসসি পর্যন্ত ওই ছেলেটির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দিলাম, তখন সে সাভার থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে এল। তাকে আর ভালোবাসা হল না।” 

এরপর কলেজে ভর্তি হয়ে পরিবার ছেড়ে ঢাকার গুলিস্তানে চলে আসেন প্রিয়া। ২০০৭ সালে নাচ শেখার একাডেমিতে ভর্তি হতে গিয়ে আরেক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেই ছেলের সঙ্গে ছিলেন। 

“তখন আমাদের বিয়ের কথা কল্পনাও করা যেত না। রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতিও ছিল না। বিয়ের কোনো অনুমতি বা বৈধতা তখনও ছিল না, এখনও নেই। এমনিতে ভালো লাগা থেকে আমাদের সম্পর্ক চলত। ও একটা কম্পিউটারের দোকানে জব করত।” 

২০১৪ সালে সেই ছেলেও প্রিয়াকে ছেড়ে বিদেশ চলে যায়। পরে আর যোগাযোগ হয়নি।

“তখন মনে কষ্ট লাগল, আমাদের মত মানুষের জন্য হয়ত ভালোবাসা নয়। হয়ত তার পরিবার আমাকে গ্রহণ করবে না বলেই আমাকে ছেড়ে সে অনেক দূরে চলে গেছে।” 

এরপর অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রিয়াকে। এক পর্যায়ে সংকল্প করলেন, কারো সঙ্গে আর সম্পর্কে জড়াবেন না। এই সমাজের প্রতি, এমনকি নিজের প্রতিও অনেক রাগ আর ক্ষোভ জমে গিয়েছিল। 

মানুষের জীবনে তবু আশার ফুল ফোটে। হয়ত ঝরে যাওয়ার জন্যই।   

২০১৯ সালের শেষ দিকে শাহবাগে এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রিয়ার। অল্পদিনেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সে সম্পর্কও কোনো পরিণতিতে পৌঁছায়নি। 

সেই ছেলের সঙ্গে আড়াই বছরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে সম্পর্কের টানাপোড়নে ছেলেটা অভিমান করে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তাদের সম্পর্কের কথা পরিবারও জেনে যায়। ছেলেটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দুজনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়নি। ২০২১ সালের নভেম্বরে ছেলেটি  নিখোঁজ হয়। তার পরিবার তখন প্রিয়ার ওপর দোষ চাপিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করে। 

প্রিয়ার ভাষ্যে, “নিখোঁজের এক মাসের বেশি সময় পর আমার টেক্সট মেসেজ দেখে কুষ্টিয়ার লালনের আঁখড়া থেকে সে বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফেরার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে আটকে রাখে, ফোন কেড়ে নেয়। এক সময় ওকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়। পরে বাড়িতে এনে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। 

“ও আমার সঙ্গে সংসার করতে রাজি ছিল। তার পরিবার সেটা মেনে নেয়নি। হয়ত সমাজের কথা ভেবে আমাকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু ছেলেটার জীবনটাকে কেন নষ্ট করা হল?” 

এই সমাজে আবারও মন নিয়ে কোনো জটিলতায় যেতে চান না প্রিয়া। তার ভাষায়, তার মনে সেই শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই। 

কিন্তু তাই বলে জীবন কী থেমে যাবে? বেঁচে থাকতে হলে স্বাবলম্বী হতে হবে। প্রিয়া তাই চান এখন। 

“ওর সঙ্গে আমার কথা বলার খুব ইচ্ছে। তার সঙ্গে আমাকে দেখা করতেই দিচ্ছে না। আমি স্থানীয় মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যক্তিগত ঝগড়ায় হয়ত আমাদের সম্পর্কের কিছু ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তার জীবন আমি নষ্ট করিনি। ওর পরিবার রাজি থাকলে, আমি তাকে আবারও আপন করে নিতে প্রস্তুত।” 

সমাজ কেন হিজড়াদের মেনে নিচ্ছে না– এটাই প্রিয়ার প্রশ্ন। তিনি বলেন, “আমরা কি কারও ভালোবাসার যোগ্য হতে পারি না? আমাদের কি ভালোবাসার ইচ্ছে জাগে না!”

প্রতারিত, বার বার 

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন ফারিহা ফারহা, সমাজ তাকে হিজড়া হিসেবে চেনে। 

টঙ্গী সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় এক প্রতিবেশী ছেলের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ান ফারিহা। কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। পরে কারো সঙ্গে প্রেম করবে না বলে সংকল্প করেন।  

তবে স্নাতকোত্তর শেষ করে আবারও এক ছেলের সঙ্গে প্রণয়ের বন্ধনে জড়ান ফারিহা। আইনি স্বীকৃতি নেই জেনেও মুখে মুখে তারা ‘বিয়ে’ করেন। পাঁচ মাস সংসার করার পর তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। 

ফারিহা বলেন, “বিরহটা আমি সহ্য করতে পারছি না। সে আমাকে খুব ভালোবাসত, টেক কেয়ার করত।…আমরা মৌখিকভাবে বিয়ে করেছিলাম। কসম করে সে আমাকে বিয়ে করেছে। নিজেদের মধ্যে একটা কমিটমেন্ট ছিল। আমার ফ্যামিলি জানত। কিন্তু ওর ফ্যামিলিকে জানানো হয়নি।” 

পাঁচ মাস পর সেই ছেলে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারে মুখ দেখানোর ভয়ে তাকে ছেড়ে যান বলে ফারিহার ভাষ্য। 

ভালোবাসা হারিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েছেন। তারপরও তিনি বিশ্বাস করতে চান, ভালোবাসার ভেদাভেদ হয় না, ভালোবাসার কোনো লিঙ্গ বা ধর্ম নেই। 

ফারিহার প্রশ্ন, “রিলেশনশিপ যদি কন্টিনিউ না-ই করে, তাহলে আমাকে কেন মাঝ নদীতে এনে ছেড়ে দিল। মাঝ নদী থেকে সাঁতরে কিনারায় পৌঁছাবার শক্তিটা তো থাকতে হবে। আমি যদি এখানে ডুবে মরে যাই, সেই দায়ভার কে নেবে?” 

তার উপলব্ধি, “আমাদের ৯৯ পার্সেন্ট প্রতারিত হচ্ছে। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া হয়। কোনো নিয়মনীতি বা কঠোর আইন না থাকার কারণে আামাদেরকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা নিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়।” 

‘পরম্পরা’ 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজধানীর একটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ালেখা করছেন তাহরিবা আনিকা। তবে ছোটবেলায় ছেলে হিসেবে তার নাম ছিল মাশফিক। ১২-১৩ বছর বয়সে নিজের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তিনি। 

২০১৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আনিকা। সেই প্রেম ছিল দুই বছর। কিন্তু যেমন হয়, সেই ছেলের পরিবার মেনে নিতে পরেনি। ফলাফল সম্পর্কচ্ছেদ। 

আনিকা বলেন, “ওর ফ্যামিলি মেনে নিতে পারেনি, কারণ তারা একটা বংশধর চায়। ওইটা তো আমি দিতে পারব না।” 

‘মানুষ নই?’ 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে দেশের প্রথম হিজড়া নারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন সঞ্জীবনী সুধা। 

তিনি বলেন, “মানুষ হিসেবে বসবাস করতে হলে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। প্রতিটি মানুষের জৈবিক চাহিদা থাকে। কিন্তু সম্পর্কে জড়াতে গিয়ে হিজড়া নারীরা বারবার প্রতারণার শিকার হয়। এই মানুষগুলোর সঙ্গে অনায়াসে প্রতারণা করা যায়। এখানে আইনগত কোনো সুরক্ষার ব্যাপার নাই। যে কেউ আমাদের ঠকিয়ে দিতে পারে।” 

সুধার উপলব্ধি, “আমার কমিউনিটির মানুষদের সেক্স সিম্বল ছাড়া কিছু ভাবা হয় না। তাদেরকে কেউ যৌনকর্মী ভাবে, কেউ হাস্যরসের খোরাক বানায়, কেউ ভিখারী ভেবে করুণা দেখাতে আসে। সামাজিক জীব বা মানুষ হিসেবে কেউ দেখে না।” 

হিজড়াদের সম্পর্কের কেন গ্রহণযোগ্যতা নেই? 

২০১৪ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তবে তাদের বিয়ে ও সম্পত্তির অধিকারের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি সেখানে। 

হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বৃহন্নলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাদিকুল ইসলাম বলেন, “সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বিয়ের কোনো স্বীকৃতি নাই বাংলাদেশে। মূল কথা হচ্ছে, তাদেরকে গ্রহণ করার জায়গাটা এখনও তৈরি হয়নি। 

“সেখানে প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে বা সামাজিক কার্যক্রমে যে পার্টিসিপেশন, এটা ডিপেন্ড করে সোশাল এক্সেপটেন্সের উপর। সেই জায়গাটা এখনো তৈরি হয়নি। এখনো আমরা তাদেরকে মেনে নেব কি নেব না, সেই ডিবেটের মধ্যে আছি।”

সাদিকুল ইসলাম বলেন, অনেক উন্নত দেশ এ বিষয়ে দ্বিধা কাটিয়ে উঠেছে, সেখানে তারা ভালোবাসা পায় এবং একসঙ্গে থাকতে পারে। তাদের সেই আইনি বৈধতা আছে, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি হয়েছে। 

বাংলাদেশে হিজড়াদের বিয়ে নিয়ে আইনগত কোনো বিধি না থাকায় তারা সহজে প্রতারিত হন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী। 

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে হিজড়া নারীদের প্রতি অনেকে ফ্যাসিনেশনের মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে প্রতারণা করেন।  

“ওরাও (হিজড়া নারীরা) তাদের সফট মাইন্ডের জায়গা থেকে সব কিছু ঢেলে দেয়, যেহেতু তাদের কেউ ভালোবাসা দেয় না। সব আবেগ দিয়ে তাকে ভালোবাসে। কিন্তু দিনশেষে সেই মানুষটাও আসলে তার সঙ্গে থাকে না। কারণ এই সম্পর্কের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।” 

নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর উপর পিএইচডি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা। 

তিনি বলেন, “তারা (হিজড়ারা) যেহেতু একটা দীর্ঘ সময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। তাদের মধ্যে একাকীত্বের বোধটা একটু বেশি থাকে। সে কারণে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, তারা অনেকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়।” 

স্নিগ্ধা বলেন, “যার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে যুক্ত হয়, তাকে হিজড়ারা ‘পারিক’ বলে। দেখা যায়, সেই ছেলের যাবতীয় খরচ আসলে হিজড়া মেয়েটিই বহন করে। বহন করার পর যখন স্থায়ী কোনো সম্পর্ক বা বিয়ে করার চেষ্টা করে, তখন ওই ছেলেটা বিট্রে করে।” 

হিজড়া নারীরা যে পদে পদে নিপীড়নের শিকার হন, সে কথা তুলে ধরে এই গবেষক বলেন, “আমি অনেক হিজড়াকে চিনি, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। কিন্তু যখন তাদের আচরণ ডিসক্লোজ হয়ে যায়, তখন তারা প্রতিষ্ঠানে ভীষণ রকম হয়রানির শিকার হয়। কারো কাছে কমপ্লেইন করতে পারে না। পরে বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কমিউনিটিতে যোগ দেয়। 

“অনেককে দেখা যায়, শিশুকাল থেকে এত বেশি ধর্ষণের মধ্য দিয়ে গেছে, সেক্সুয়াল অ্যাসাল্টের মধ্য দিয়ে গেছে, তখন একজন সেক্স ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করা শুরু করে। সামাজিক নিরাপত্তা বা আইনগত কোনো অধিকার নেই বলেই এরকমটা ঘটে।” 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলছেন, সমস্যাটা ‘বাইনারি পিপলদের’ যারা নারী-পুরুষের বাইরে কিছু গ্রহণ করতে রাজি না। 

“সব মানুষেরই ভালোবাসার অধিকার আছে। নারী-পুরুষের বাইরে যে বৈচিত্র্য, তাকে গ্রহণ করা উচিত। সেটি যদি গ্রহণ করতে পারি, তাহলে তাদের প্রেম-ভালোবাসা সবকিছুই আমরা গ্রহণ করতে পারব।” 

তিনি বলেন, “সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছে সেখানে নারী পুরুষের বাইরে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু লিঙ্গ পরিচয়ের বাইরে কোনো অধিকারের কথা বলা হয়নি। হিজড়াদের উত্তরাধিকারসহ সার্বিক বিষয়ে একটা আইন থাকা উচিত।”