জাতির পিতার জন্মদিনে নানা আয়োজন

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু কিশোর দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2023, 06:48 PM
Updated : 16 March 2023, 06:48 PM

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী শুক্রবার। একই সঙ্গে বাংলাদেশ দিনটি উদযাপন করবে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্ম। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান পায় আজকের বাংলাদেশ।

এই দিনে পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন শেখ মুজিব নামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন।

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়-দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর মাত্র ৫৪ বছরের জীবনের এক-চতুর্থাংশই কেটেছে কারাগারে; তার পুরো জীবনটাই ছিল বাঙালির জন্য নিবেদিত; সেজন্য ফাঁসির মঞ্চকেও তিনি ভয় পাননি। টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এ মহানায়ক উঠে এসেছেন জাতীয় অঙ্গনে, দ্যুতি ছড়িয়েছেন বিশ্বমঞ্চে।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি খুব বেশিদিন তার সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার কাজ করে যেতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

তার জন্মদিনে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “গ্রামের কাদা-জল, মেঠো পথ আর প্রকৃতির খোলামেলা পরিবেশে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদি আর অধিকার আদায়ে আপসহীন। পরোপকার আর অন্যের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে তিনি ছিলেন সদা তৎপর। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন।

“জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছা যায়।”

জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই সোনার বাংলায় তার বাংলাদেশকে পৌঁছে দিতে আজকের অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন তারই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক বাণীতে তিনি বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী এবং ‘জাতীয় শিশু দিবস- ২০২৩’ উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং দেশের সকল শিশুসহ দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

“জাতীয় শিশু দিবসে এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মমতা ছিল অপরিসীম। তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; শিশুরাই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলবে। শিশুরা যেন সৃজনশীল ও মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে- তিনি সব সময় সেটাই চাইতেন।

“এজন্য তার জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে ১৭ মার্চকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমাদের শিশুরাই হবে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের সারথি।”

জাতির পিতার জন্মদিনে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। সেখাতে ফাতেহা পাঠ করবেন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। 

এ উপলক্ষে সেখানে জাতীয় শিশু সমাবেশ ও তিন দিনব্যাপী বই মেলারও আয়োজন করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত সেই জাতীয় শিশু সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতার এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

পরে সকাল ৭টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবে দলটি।

সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা বঙ্গবন্ধু সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একইসঙ্গে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশ নেবেন তারা।

এছাড়া আগামী রোববার বিকাল ৪টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা, কোরানখানি ও দোয়া মোনাজাত হবে।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল শহীদ সদস্যের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম ও মসজিদ কমিটিসহ সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।