Published : 08 May 2023, 02:27 PM
সংঘাতের মধ্যে সুদান থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের পুনর্বাসনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে একটি নীতিমালা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
ফিরে আসা প্রবাসীদের বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আপনারা এসেছেন, পরর্তীতে সুদানের অবস্থা ভালো হলে আপনারা আবার যেতে পারবেন। এর বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো দেশে যদি যাওয়ার ব্যবস্থা হয়, তাহলে আমরা সেইভাবে ব্যবস্থা করব।
“আপনাদের পুনর্বাসনের জন্য আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আছে, আমরা একটা নীতিমালা ঠিক করে দিলে আপনারা ওখান থেকেও সাহায্য নিতে পারবেন।”
সুদানে বসবাসরত প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশির মধ্যে অর্ধেকই দেশে ফিরতে চান। প্রথম দলে তাদের মধ্যে ১৩৬ জন সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে সোমবার সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড তাদের প্রত্যেকের হাতে তিন হাজার টাকা তুলে দেয়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওম) থেকে দেওয়া হয় দুই হাজার টাকা ও খাদ্য সহায়তা৷
মন্ত্রী জানান, সুদানে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুই লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।
“আপনারা আশ্বস্ত হতে পারেন যে, অতি সত্বর বাকিদের নিয়ে আসব। ৯ বা ১০ তারিখ আরেকটা ফ্লাইট আসবে। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে আসার। আজকে আসার কথা ছিল ২৫০ জন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এল ১৩৬ জন। সেজন্য নির্দিষ্ট সংখ্যা বা তারিখ বলাটা কঠিন।”
সুদান থেকে সব বাংলাদেশিকে চলে আসার আহ্বান
সুদান থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে তোড়জোড় বিভিন্ন দেশের
সুদান থেকে ফেরানো হবে বাংলাদেশিদের: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
সুদানে আটকে পড়া ‘৭০০ প্রবাসী’ ফিরবেন জেদ্দা হয়ে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সুদান থেকে জেদ্দায় ১৩৫ বাংলাদেশি, ঢাকায় ফিরবেন সকালে
গত ১৫ এপ্রিলে সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নাগরিক পরিষেবা।
এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সুদান থেকে ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়। বাংলাদেশও তার নাগরিকদের ফিরে আসার আহ্বান জানায়।
সে অনুযায়ী খার্তুম থেকে গত ২ মে রাতে পোর্ট সুদান পৌঁছান ৬৮২ বাংলাদেশি, সেখানে তাদেরকে একটি মাদ্রাসায় অস্থায়ীভাবে রেখে ফেরানোর কার্যক্রম চলে।
শুরুতে পোর্ট সুদান থেকে জাহাজে জেদ্দায় নেওয়ার কথা ছিল এই বাংলাদেশিদের। শেষ পর্যন্ত সৌদি বিমান বাহিনীর ফ্লাইটে তিন দফায় তাদের ১৩৬ জনকে অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে জেদ্দায় পাঠানো হয়। তারাই সোমবার ঢাকা পৌঁছালেন।
প্রথম দফায় সুদান ছাড়তে পারা প্রবাসীদের মধ্যে নারী, শিশু ও অসুস্থ যাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, “এরা সবকিছু হারিয়েছে। কিন্তু এ হারানোর আগে দেশকে অনেককিছু দিয়েছে। এরা সবাই খালি হাতে এসেছে। কীভাবে এদের সাহায্য করা করা যায় সেটার জন্য আমরা এখানে এসেছি।
“আইওএম এদের সর্বত্র সহায়তা করছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে সবাইকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে, যেন এ কয়দিন তারা চলতে পারেন। আমরা চেষ্টা করছি তাদের অসুবিধাটা যতটুকু লাঘব করা যায়।”
সুদানফেরতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা এখানে খালি হাতে এসেছেন, এই মুহূর্তে আপনাদেরকে কী সাহায্য করা যায় এটার জন্য আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। আপনাদের আসার পেছনে, আমরা যদি প্রথম থেকে ধরি, তাহলে সুদানে খার্তুমে আমাদের দূতাবাস, জেদ্দাতে আমাদের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের যারা আছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকায় আমাদের বিমান কর্তৃপক্ষ, সিভিল এভিয়েশন এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এই সবকিছুর সমন্বয় করে আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি। আমার বিশ্বাস, বাকি যারা ওখানে আছেন, তাদের আমরা অতিসত্বর এখানে নিয়ে আসতে পারব।”
দূতাবাস থেকে সুদান প্রবাসীরা যথাযথ সহায়তা পাননি– এমন অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “ওখানে যারা আমাদের দূতাবাসের আছেন, তারা কিন্তু স্বস্তিতে নেই। এখানে আপনারা যারা আছেন তারা কিছুটা হলেও টের পেয়েছেন। সবসময় দোষ খোঁজার চেষ্টা কইরেন না। এটা কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা। এর মধ্যেই আমরা চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে আসতে।”
তিনি প্রবাসীদের বলেন, “আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা এখানে নাম ঠিকানা রেজিস্ট্রেশন করবেন, যাতে ভবিষ্যতে আপনাদের আমরা সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারি। আগামীতে কীভাবে কী করব তাতে যেন আমরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি।”