নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থানরত ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিষয়টি তুলে ধরতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 02 Nov 2023, 12:20 AM
নির্বাচনী আইনে ভোটদানের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও বরাবরই যে তাতে সাড়া মেলে না, সেটি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থানরত ভোটারদের জন্য এই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের বিষয়টি প্রচারের জন্য বলেছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বলা হয়েছে, আগ্রহী বাংলাদেশি ভোটার তালিকাভুক্ত প্রবাসীরা চাইলে দূতাবাসের মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ৪০ জন প্রতিনিধির অংশগ্রহণে আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, আইনের আলোকে পোস্টাল ব্যালটে শুধু এবার নয়, সবসময় ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল।
“এবারও ভোট দিতে পারবেন। আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে- কমিশন এ বার্তাটা দিয়েছে। বিদেশে যে বাংলাদেশি মিশনগুলো রয়েছে, তার মাধ্যমে নোটিস আকারে যেন দেওয়া হয়।
“প্রবাসে বাংলাদেশি যারা দেশের ভোটার তালিকাভুক্ত নাগরিক রয়েছে, তারা যদি ভোট দিতে উৎসাহিত হয় কী পদ্ধতিতে ভোট দেবে সে বার্তাটা যেন জানিয়ে দেওয়া হয়।”
কারা ভোট দেবেন
শারীরিকভাবে সরাসরি ভোটদানে অসমর্থ ভোটাররা আগে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে কিছু প্রক্রিয়া মেনে তা ডাকযোগে প্রেরণ করে ভোট দিতে পারেন। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয়ে থাকে পোস্টাল ব্যালট ভোট।
নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ভোটার, প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার, সরকারি চাকরিজীবী, যিনি চাকরিসূত্রে নিজ এলাকার বাইরে বসবাস করেন ও কারাবন্দিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে আবেদন করতে পারেন।
এজন্য তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রাপ্তির পরপরই রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে একটি পোস্টাল ব্যালট পেপার ও একটি খাম পাঠাবেন।
এবার ভোটার তালিকা প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি যেমন লাখো ভোটার রয়েছে, তেমনি ভোটের দিন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যসহ কারাবন্দি মিলিয়ে কয়েক লাখ ভোটারের পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইনগতভাবে পোস্টাল ব্যালটের ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলেও নানা ধরনের জটিলতায় এ নিয়ে আগ্রহ থাকে না ভোটারের। অসচেতনার কারণে এ প্রক্রিয়াটিতে লাখ ভোটার অংশ নেয় না।
যা যা করতে হবে
>> পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবেদনকারী নাম, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার নাম এবং ভোটার তালিকার ক্রমিক নম্বর ইস্যুকৃত ব্যালট পেপারের মুড়িপত্রে লিখে রাখবেন।
>> ভোটার নিজেই যথারীতি ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারটি খামে ভরে পাঠাবেন। এক্ষেত্রে ডাক বিভাগের উপযুক্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে সার্টিফিকেট অব পোস্টিংয়ের মাধ্যমে ডাকযোগে পাঠানোর প্রত্যয়নসহ তারিখ উল্লেখ থাকতে হবে।
>> সার্টিফিকেট অব পোস্টিংয়ের মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট পেপার গ্রহণ ও চিঠির ওপর এ সংক্রান্ত রাবার স্ট্যাম্পের সিল ব্যবহার করতে হবে।
>> রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে ব্যালট পেপারের সঙ্গে ভোট দেওয়ার নির্দেশনা, ঘোষণাপত্র, একটি ছোট ও একটি বড় খামসহ প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ সরবরাহ করবেন। এছাড়া, ব্যালট পেপার পাঠানোর পর মুড়ির অংশ একটি প্যাকেটে সিলগালা করে রাখবেন।
>> কেন্দ্রে গিয়ে ভোটদানে মার্কিং সিল ব্যবহার করতে হলেও পোস্টাল ব্যালট পেপারে টিক (√) চিহ্ন দিতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণ করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারটি নির্ধারিত খামে রাখতে হবে।
>> এরপর ওই ভোটারের পরিচিত অন্য কোনো ভোটারের সামনে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে তা ওই ভোটারকে দিয়ে প্রত্যায়ন করে নিতে হবে। পরে ভোটদাতা যে ভোটকেন্দ্র এলাকার ভোটার, ওই নির্বাচনী এলাকার ভোটদান প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে ভোটার নিরক্ষর বা প্রতিবন্ধী হলে অন্যদের সহযোগিতা নিতে পারবেন।
>> রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত পোস্টাল ব্যালট পেপার ফল একত্রীকরণে যুক্ত করবেন। নির্ধারিত সময়ের পরে কোনো ব্যালট পেপার এলে তা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করবেন।
>> ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরও পোস্টাল ব্যালট পাওয়া গেলে তা ভোট হিসেবে গণ্য হবে না।