Published : 27 Dec 2022, 06:23 PM
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে এক পরিবারের চারজনকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে নয় বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সোমবার নারায়ণগঞ্জের কাচপুর থেকে পলাশ গাজীকে (৪১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১৪ সালে ঘরে ঢুকে এক দম্পতি ও তাদের দুই নাতনিকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে।
পরবর্তীতে মামলার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, নিহত সুলতান আহমেদের বড় ভাই মমতাজ উদ্দিন ‘জমি নিয়ে বিরোধের জেরে’ এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। এজন্য পাঁচ লাখ টাকা আর এক বিঘা জমির বিনিময়ে ভাড়া করা হয় পলাশ গাজীকে।
ওই হত্যা মামলায় মমতাজ ও পলাশ গাজীসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত; পলাশ গাজি এতদিন পলাতক ছিলেন।
আল মঈন জানান, পলাশ গাজীর বিরুদ্ধে একাধিক খুন, ডাকাতিসহ ১১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এই ব্যক্তি ‘জালাল গাজী’, ‘দাঁত ভাঙ্গা পলাশ’ নামেও পরিচিত। তিনি পটুয়াখালীর বাউফলের চান্দু গাজীর ছেলে।
যেভাবে ৪ খুন
খুনের বর্ণনা দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে মমতাজ উদ্দিন তার ছোট ভাই সুলতান আহমেদকে হত্যার জন্য পলাশ গাজীর সঙ্গে চুক্তি করেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন জমি নিয়ে বিরোধ ছিল।
এ পরিস্থিতিতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ভুরুঙ্গামারী থানায় এক বিঘা জমি দেওয়ার চুক্তিতে পলাশকে যুক্ত করেন মমতাজ। চুক্তির পর পলাশের নেতৃত্বে নজরুল ওরফে মনজু, আমির, জাকির, জালাল ওরফে পলাশ, হাসমত ও মমতাজ মিলে সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
“২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশের নেতৃত্বে অন্যান্য সহযোগীরা মুখোশ পরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে সুলতানের বাড়িতে দলবেঁধে হামলা চালায়। প্রথমে তারা সুলতানের ঘরে ঢুকে তার মুখমণ্ডলসহ সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কোপায়। চিৎকার শুনে সুলতানের স্ত্রী হাজেরা বেগম ছুটে এলে খুনিরা তার পিঠে ও পেটে ধারালো রামদা দিয়ে কোপ দেয়।
“এরপর তারা সুলতানকে আবারও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে দুই নাতনি রুমানা ও আনিকা ছুটে এলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়।”
এদিকে ঘটনার পরদিন সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান ভুরুঙ্গামারী থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। কয়েকদিন পর অন্য একটি হত্যা মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দুজনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা ‘সুলতানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের’ সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি জানায়।
আর এতেই সুলতানের বড় ভাই মমতাজ ও দাঁতভাঙা পলাশের যুক্ত থাকার বিষয়টি উটে আসে বলে জানায় র্যাব।
তদন্ত শেষে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালত মমতাজ উদ্দিন ও পলাশ গাজীসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাসের রায় দেয়। ওইদিন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি উপস্থিত থাকলেও পলাশ গাজী হত্যার পর থেকেই পলাতক, যাকে সোমবার গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আরও ‘হত্যা’
চার খুনের পর ধারাবাহিকভাবে পলাশ গাজী আরও অপরাধে জড়িয়ে পড়েন বলে জানায় র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুরে মাইক্রোবাসের চালক নুরুল হককে খুন করে গাড়ি ছিনতাই করে পলাশ ও তার সহযোগীরা। পরে তার লাশ একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও পলাশের বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর বাউফল থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা, ঢাকার মতিঝিল এলাকার সড়কে ২০১৬ সালে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি মামলা, রাজধানীর চকবাজার থানায় ২০১৯ সালে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে একজনকে হত্যা মামলাসহ মোট ১১টি মামলার সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় র্যাব।
পলাশের পরিচয় দিয়ে র্যাব আরও জানায়, ১৯৯০ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের কাচপুরে একটি গ্যারেজে কাজ করতেন তিনি। পরে ট্রাকের হেলপারি শুরু করেন, ট্রাক চালানোও শিখে নেন।
“১৯৯৫ সাল থেকে কাভার্ডভ্যান চালাত সে, তবে তার কোনো লাইসেন্স ছিল না। ২০০৯ সালে একটি পুরাতন মাইক্রোবাস কিনে ভাড়ায় চালানো শুরু করে। সেই মাইক্রোবাসটি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মাদকের চালান সরবরাহ করত পলাশ।”
এছাড়াও ভুয়া ডিবি পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে ডাকাতি-ছিনতাই করত; তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকায় নারায়ণগঞ্জ, কাচপুর, উত্তরা ও শ্যামবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা বদল করে থাকত বলে র্যাবের ভাষ্য।