“এই গরমে বাইরে কাজ না করতে পারলে ভালো, নিতান্ত প্রয়োজনে বাইরে কাজকর্ম করলেও সতর্কতা নেওয়া উচিত,” বলেন ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
Published : 21 Apr 2024, 11:07 AM
ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকার সড়কে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন আবদুল হাই। ভ্যানের ওপর একটি বড় ছাতা থাকার পরও দরদর করে ঘামছিলেন তিনি। গামছা দিয়ে একটু পরপর ঘাম মুছছিলেন।
হাই বললেন, “গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে বাড়ির বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বাতাসও প্রচণ্ড গরম।
“কয়েকদিন ধইরা এমন রইদ উঠছে। মনে হইতাছে আকাশ থেইকা আগুনের গুঁড়া পড়তেছে। এমন গরম কয়েক বছর দেখি নাই। খুব খারাপ অবস্থা।”
দেশের ৪৩ জেলার উপর দিয়ে তাপদাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এরমধ্যে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইয়ে চলা যশোরে শনিবার মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলা আরেক জেলা চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চলতি মৌসুমে যা সর্বোচ্চ।
এদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি ছুটির দিন সড়কে মানুষ ও যানবাহন কিছুটা কম। অনেক দোকানপাটও বন্ধ ছিল। তবে এ সময়ও জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হয়েছেন বিভিন্ন শ্রমজীবী।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে রিকশা থামিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন একজন রিকশা চালক, তার হাতে একটি মাথাল।
আবদুল আজিজ নামের ওই রিকশাচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল আটটায় রিসকা নিয়া বাইর হই, বেলা আটটায় দুইটা আড়াইটা পর্যন্ত চালাই। যেই গরম বেশিক্ষণ চালাইতে পারি না। আল্লার নাম নিয়া বাইর হই। গরিবরে আল্লায়ই বাঁচায়।”
ঢাকার তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা কবির হোসেন মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন পণ্য ডেলিভারি করেন।
তিনি বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে গরম বেশি, এর আগে এমন ছিল না। যদিও বাতাস আছে কিন্তু আজকে তাপও খুব বেশি। যখন মেইন রোডে যাই তখন হাত, পা বার্ন হওয়ার মতো অবস্থা। জ্বালাপোড়া করে।
“মেইন রোডে থাকলে বোঝা যায় তাপমাত্রা কত। পানি নিয়া বের হই, পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি ভরে নিই।”
মগবাজার চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানের সামনে রিকশা থামিয়ে কোমল পানীয় পান করছিলেন একজন রিকশা চালক। তার জামাকাপড় ঘামে ভেজা।
জুলফিকার আলী নামে ওই রিকশাচালক বলেন, ঢাকায় প্রচণ্ড গরম। এজন্য একটু পরপর পানি জাতীয় যাই পাচ্ছেন, তাই খাচ্ছেন।
“রিকশা চালাইতে কষ্ট বেশি, পাও দিয়া চালান লাগে। আর এখন এমন গরম, শরীর জ্বলে। একটু আগে ৭০ টাকার একটা ট্রিপ মারছি। ত্রিশ টাকা দিয়া এইডা (পানীয়) খাইয়া ফেলছি। আমি সারাদিনে ৭-৮টা স্যালাইন খাই, স্যালাইন আর কত খাওন যায়।”
মহাখালীর ওরিয়েন্টাল নামে একটি রেস্তোরাঁর বাইরে একটি ছোট কক্ষ আছে, যার তিনদিকে কাচঘেরা। সড়কের ফুটপাত লাগোয়া এই কক্ষটিতে একজন মানুষ দাঁড়াতে পারেন। পাশে রাখা কড়াইয়ে পুরি ভাজছিলেন বাবুল মিয়া নামে একজন। তার সারা শরীর বেয়ে ঘাম ঝরে পড়ছিল।
বাবুল বলেন, “এই ঘরের ভেতরে মনে হয় দোজখ। আর সামনের সড়কে গেলে মনে হয় বেহেশতে আছি। এ কারণে যখনই কোনোকিছু ভাজতে হয় না, তখনই এখান থেকে বের হইয়া সড়কের ফুটপাতে দাঁড়াই থাকি।”
ঢাকার খিলগাঁও এলাকার অটোরিকশা চালক হযরত আলীর সঙ্গে কথা হয় মহাখালী এলাকায়।
হযরত বলেন, অটোরিকশার চালকের আসনের সামনের অংশ কাচ দিয়ে ঘেরা। ফলে চলন্ত অবস্থায়ও সেখানে বাতাস পৌঁছায় না। এ কারণে গরমে অটোরিকশা চালককের ভোগান্তি অন্যদের চেয়ে বেশি।
“বাতাস গ্লাসে আটকায়া ফেলে, তাই ড্রাইভার কোনো বাতাসই পায় না। এই কারণে বেশি ঘাইমা যাই। ঘামে শার্ট, প্যান্ট সব ভিইজ্জা যায়, গাড়ি চালানো কষ্ট হয়ে যায়। আর এখন তো বাতাসও গরম। ডাব খাইতে পারলে ভালো হইতো, কিন্তু একটা ডাবের দাম একশ টাকার বেশি। এ কারণে স্যালাইন খাই।”
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই গরমে বাইরে কাজ না করতে পারলে ভালো। নিতান্ত প্রয়োজনে বাইরে কাজকর্ম করলেও সতর্কতা নেওয়া উচিত। এই গরমে হিটস্ট্রোক, পানিশুন্যতাসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
“বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ যাদের পেটের দায়ে বাইরে কাজ করতে হয়। তারা অবশ্যই ছাতা অথবা বড় টুপি পরবেন, যাতে গায়ে রোদ না লাগে। ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। এখন প্রচুর ঘাম হয়- একটু কিছুক্ষণ পরপর লবণসহ পানি পান করতে হবে। তবে খোলামেলা খাবার খাবে না।”
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “এক-দুই ঘণ্টা কাজ করার পর কিছুক্ষণ ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। একটানা কাজ করা যাবে না। কারণ এতে একসময় শরীর থেকে আর ঘাম বের হবে না।
“এতে মাথাব্যথা, শরীর দুর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এটাকে হিটস্ট্রোক বলে। এটা খুবই বিপজ্জনক।”