প্রথম পর্যায়ে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
Published : 16 May 2023, 11:31 PM
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, আন্তঃদেশীয় যৌথ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের বিনিয়োগের মতো সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে দুই দেশের আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতির কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এর অংশ হিসেবে আগামী দুই মাসের মধ্যে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বহরমপুর-ভেড়ামারা সঞ্চালন লাইন হয়ে বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়েছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন।
নেপালে ভারতীয় একটি কোম্পানির জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ আনার মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে। ভারতের গ্রিড লাইন ব্যবহার করে এবং বর্তমানে দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ব্যবহৃত আন্তঃসংযোগ গ্রিড লাইন দিয়ে তা আনা হবে বলে বৈঠক শেষে কর্মকর্তারা জানান।
মঙ্গলবার খুলনায় বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় উঠে এসেছিল এসব বিষয়।
পটুয়াখালীর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রশাসনিক ভবনে স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম এ সভা হয়। আগের দিন হয়েছিল বাংলাদেশ-নেপাল জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা।
সভায় বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগের লক্ষ্যে ভারতসহ আন্তঃদেশীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা নিয়েও পর্যালোচনা হয়। নেপালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
সভায় নেপালে নির্মাণাধীন ভারতের জিএমআর গ্রুপের ৯০০ মেগাওয়াট আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানির বিষয়ে চুক্তি সই নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান এবং নেপালের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির বিদ্যুৎ, পানি সম্পদ ও সেচ সচিব দীনেশ কুমার ঘিমির।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ভারতের সঙ্গে জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকেও বাংলাদেশ-ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিদেশীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশ (ভারত-বাংলাদেশ) একমত হয়েছিল।
এদিনের বৈঠকের পর বিদ্যুৎ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বাংলাদেশ ও নেপালের যৌথ বিনিয়োগে দেশটিতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ভারতের ওপর দিয়ে বর্তমান আন্তঃসংযোগ গ্রিড লাইন ব্যবহার করে আমদানি এবং নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে নতুন সঞ্চালন লাইনের অংশ বিশেষ ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে নির্মাণ করতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নির্ধারণ হবে বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়। নেপালের বিদ্যুৎ দুটি পৃথক পথ বাংলাদেশের পঞ্চগড় কিংবা ঠাকুরগাঁও অংশ দিয়ে আনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এজন্য ভারতের ভূখন্ডে ৪০-৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রয়োজন হবে।
ভারতের জন্য সঞ্চালন লাইন হবে বাংলাদেশে, নেপালের বিদ্যুৎ আসবে ভারত হয়ে
নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও নেপাল।
ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর এর ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির সবশেষ অবস্থা বৈঠকের প্রধান এজেন্ডার মধ্যে ছিল জানিয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “সেটা এখন মোটামুটি প্রস্তুত। যেকোনো সময় বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে পারে।
“ভারতের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যে সঞ্চালন লাইন আছে এর মাধ্যমে আগামী দুই এক মাসের মধ্যে ৪০ মেগাওয়াট আনার বিষয়ে দুই পক্ষ ঐক্যমত হয়েছে।”
বর্তমানে ভারতের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লায় মোট ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারত মিলে নেপালে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়ে একটি ‘জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট’ সইয়ের বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি খাত যদি নেপালে বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে কোনো আইনি বাধা নেই বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
এর আগে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-নেপাল জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ সভা ২০২২ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির পরবর্তী ষষ্ঠ সভা আগামী নভেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।