পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যেভাবে জলবায়ু সংকট হচ্ছে, সংশয় আছে, আগামীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পারব কিনা”
Published : 18 Oct 2022, 09:35 PM
যুদ্ধাবস্থা আর জলবায়ু পরিবর্তনের মত সঙ্কট শিশুদের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার ক্ষেত্রে ‘সংশয় তৈরি করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শেখ রাসেল দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সম্প্রতি যেভাবে সারা পৃথিবীতে একটি যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে শিশুদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী আমরা রেখে যেতে পারব কিনা তাতে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
“এর ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এগুলোর মূলে রয়েছে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে হিংসা, বিদ্বেষ আর ক্ষমতার লড়াই।“
জলবায়ু পরিবর্তনও শিশুদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার আকাঙ্ক্ষাকে শঙ্কার মুখে ফেলছে মন্তব্য করে আব্দুল মোমেন বলেন, “যারা ক্লাইমেটটাকে ধ্বংস করছে, অধিকার খর্ব করছে, তাদের মধ্যে উদ্বেগটা কম।
“যেভাবে জলবায়ু সংকট হচ্ছে, সংশয় আছে, আগামীতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পারব কিনা।”
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যদের সঙ্গে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মবার্ষিকীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ইতিহাসের নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “শুধু একটা বাড়ি নয়, তিনটি বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ঘটেছে বলে জানা নেই।
“আমরা পৃথিবীতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখতে চাই না। আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত– আমরা এমন এক পৃথিবী গড়ে তুলব যেখানে শেখ রাসেলের মত যেন আর কোনো শিশুকে জীবন দিতে না হয়।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীতে যত শিশু আছে, সব শিশুর অধিকার, তাদের জীবনের অধিকার, তাদের বয়সে যেসব অধিকার পাওয়ার কথা সেগুলো নিশ্চিত করা এবং সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এমন পৃথিবী আমরা রেখে যেতে চাই, যেখানে শিশুরা নিঃসঙ্কোচে জীবন যাপন করতে পারবে।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অনুষ্ঠানে বলেন, “বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে রেখেছিলেন। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় সোচ্চার, শান্তির সংগ্রামী বার্ট্রান্ড রাসেলের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পুত্রের নাম রাখায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র, মাত্র ১১ বছরের ছোট্ট রাসেলকে।
“মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচা সবার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার শেষে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল রাসেলকে। ওই ছোট্ট বুকটা কি তখন ব্যথায় কষ্টে বেদনায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল? যাদের সান্নিধ্যে স্নেহ-আদরে হেসে খেলে বড় হয়েছে তাদের নিথর দেহগুলো পড়ে থাকতে দেখে ওর মনের কী অবস্থা হয়েছিল! কী কষ্টই না ও পেয়েছিল! কেন, কেন, কেন আমার রাসেলকে এত কষ্ট দিয়ে কেড়ে নিল? আমি কি কোনোদিন এই ‘কেন’র উত্তর পাব?”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যার এই আকুতিভরা প্রশ্নের জবাব কে দেবে? কেউ দিতে পারেনি। হয়ত কেউ দিতেও পারবে না।”
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে বলেন, “শেখ রাসেল, জন্মের পরে ছয় বছর পর্যন্ত পিতার আদর, ভালবাসা, স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে যে শিশুটি, তাকেই কি না ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারাতে হল!”
শেখ রাসেল আগামী দিনের শিশুদের প্রেরণা হতে পারেন- এই মন্তব্য করে সচিব বলেন, “জাতির পিতা ও রাষ্ট্রপতির পুত্র হয়েও যে সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে তার পথচলা শুরু হয়েছিল, সাধারণ মানের স্কুল, সাদামাটা জীবন যাপন, আর দশটা সন্তানের মতই রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং পারিবারিক শিষ্টাচার ও আদব কায়দার যে উদাহরণ তিনি রেখে গেছেন, তা আগামী দিনের শিশুদের চলার পথে বিরাট এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।”
‘শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক’ প্রতিপাদ্যে শেখ রাসেল দিবসের এই আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শেখ রাসেলের সহপাঠী সাবেক ব্যাংকার ও এম এ মতিন কটন মিলের মহাব্যবস্থাপক হাফিজুল হক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস আলোচনায় অংশ নেন।
শেখ রাসেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর পাঠানো ভিডিওবার্তা অনুষ্ঠানে দেখানো হয়।