ভবন বিস্ফোরণ: পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তাপসের

“ছোট ছোট দুর্যোগ মোকাবেলা না করতে পারলে তুরস্কের মতোই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে," শঙ্কা ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 05:52 PM
Updated : 11 March 2023, 05:52 PM

ঢাকায় পরপর দুই ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই তদন্ত কমিটি গঠন হয়, কিন্তু সঠিক কারণ উঠে আসে না উল্লেখ করে ক্ষোভ ঝরেছে মেয়রের কণ্ঠে।

তার ভাষ্য, “দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আমরা অংশীদারদের নিয়ে সভা করব। তদন্ত কমিটি করা হয়, প্রতিবেদন আসে না। সঠিক কোনো প্রতিবেদন নেই। কী কারণে হলো তা সঠিক কেউ বলতে পারছে না।

“কেউ বলে নাশকতা, কেউ বলে বিস্ফোরণ। তাই আমি কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছি। দেখি কয়টা প্রতিষ্ঠান কী তথ্য বের করে, কে কী প্রতিবেদন দেয়?” 

শনিবার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশে (আইইবি) সংগঠনটির উদ্যোগে 'ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস: প্রস্তুতি ও করণীয়' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন ডিএসসিসি মেয়র। সেখানে সম্প্রতি পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজার ও সায়েন্স ল্যাবের শিরিন ম্যানশনে বিস্ফোরণ প্রসঙ্গ আসে।

তাপস বলেন, “আমাদের কোনো পেশারই দায়বদ্ধতার জায়গা ঠিক নেই। প্রকৌশলীদের জন্য কোনো কাউন্সিল নেই। পাস করলেই সরাসরি ইঞ্জিনিয়ার। আমরা আসি, নকশা পাস করিয়ে নেই, তার সঙ্গে একজন পরামর্শক নিয়োগ করতে হয়। আমি নিয়ে আসলাম পরামর্শক। এই অবস্থায় আমরা কার কাছে যাব?

“কোনো দুর্ঘটনা হলে আমরা কার কাছে যাব? ঘটনা ঘটে গেলে আমরা কারও ঘাড়ে দায়িত্বটা ফেলে দেই। আমরা সাধারণ মানুষ সেলফি তোলা নিয়ে ব্যস্ত। আর যাদের এখানে কোনও দায়িত্ব নেই, তারাও ক্যমেরার সামনে কথা বলে দায়িত্ব কারও ঘাড়ে দিয়ে চলে আসে। যারা দায়িত্বে না- তারাও হাজির। কর্তৃপক্ষ আসে কথা বলতে, যাদের কোনো দায়িত্ব নেই, তারাও কথা বলতে আসে। ক্যামেরা সামনে কথা বলে দায়িত্ব শেষ করে।"

মেয়র বলেন, “দুর্যোগ হয়ে গেলে আমরা হা-হুতাশ করি, কয়েক দিন পরে শেষ। কোনো দুর্যোগ ঘটলে সবাই সেখানে ভিড় জমায়। ফায়ার সার্ভিস, র‍্যাব, সিটি কর্পোরেশন, রেড ক্রিসেন্ট, রাজউক সবাই গিয়ে হাজির হয়।

“আসলে দুর্যোগের শুরুতে কে কাজ করবে, সেটা অনেক দায়িত্বশীলরাও জানে না৷ ভবন নির্মাণ কোড-১৯৯৩, ২০২০ সালে প্রস্তুত হয়েছে৷ ছোট ছোট দুর্যোগ মোকাবেলা না করতে পারলে তুরস্কের মতোই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।"

তাপস বলেন, "আমি মনে করি রেগুলেটরি অথারিটি হয় নাই, তাতে ভালোই হয়েছে। কারণ তাদের আবার নিয়ন্ত্রণ করবে কে!"

প্রকৌশল শিক্ষায় জরুরি কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ না করায় সবকিছুতেই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হয় মন্তব্য করে শেখ তাপস বলেন, “যদি ভুল হয় তাহলে সংশোধন করে দিয়েন। এ পর্যন্ত যত প্রকৌশলীকে (সিটি করপোরেশনে) নিয়োগের জন্য আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তারা আমাকে বলেছে- ‘বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের পাঠ্যক্রমে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

“স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি আলাদা বিশেষায়িত শিক্ষা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হয়, আমি মনে করি- প্রকৌশল শিক্ষায়ও তেমনই আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হওয়া উচিত। শুধু মাস্টার্স পর্যায়ে নয়, বিএসসি শেষ করে যেহেতু পেশাজীবী হচ্ছে, সুতরাং, বিএসসি পর্যায়েই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে সে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন।”

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, “আমরা দেখি, কোনও স্ট্রাকচারাল সলিউশন প্রয়োজন হলে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমরা সে জিনিসটা পাই না। ফলে আমাদেরকে পরামর্শক নির্ভর হতে হয়। আমরা সবকিছুতেই এখন পরামর্শক নির্ভর।

“একটা সেতু নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে। একটা চারতলা ভবন নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে!"

ইমারত তৈরিতে পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাপস বলেন, "আমি ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করলাম, কিন্তু সাথে পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে। আমরা চাই- প্রকৌশলী যিনি থাকবেন তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ হলে আর পরামর্শকের প্রয়োজন হবে না।"

সেমিনারে আইইবি সভাপতি নূরুল হুদা বলেন, "কোভিডের মতো যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রকৌশলীরা সবার আগে মাঠে কাজ করেন। প্রকৌশলীরা সরকারের উন্নয়নে অন্যতম কারিগরি ভূমিকা পালন করেন।"

সেমিনারে আইইবি সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শীবলু স্বাগত বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মেহেদী আহমেদ আনসারি। 

অন্যদের মধ্যে আইইবির সহসভাপতি এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, নুরুজ্জামান, খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক রনক আহসান বক্তব্য রাখেন।