বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে এলেও তাদের দাবি উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।
Published : 11 Jul 2023, 06:52 PM
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ‘পাহাড় সমান’বৈষম্য রয়েছে অভিযোগ করে জাতীয়করণের দাবি তুলেছেন বেসরকারি শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার থেকে 'লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি' ঘোষণা করে তারা বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে।
এদিন সকাল ১০টা থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির আহ্বানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে এলেও তাদের দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে; তাই কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত প্রতিদিন তারা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
কর্মসূচিতে কথা হয় ঢাকার ধামালকোট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক উম্মে কুলসুমের সঙ্গে; প্রায় ২৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
কয়েক বছর পর অবসরে যাবেন এই শিক্ষক। চাকরি জীবনের শেষে এসে হলেও মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের মাধ্যমে ‘বৈষম্যের’ অবসান দেখে যেতে চান তিনি।
কুলসুম বলেন, “আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। সেজন্য এবার আসছি। একটা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকের অবসর নেওয়র পর আসলে কিছু থাকে না। সে নিঃস্ব। আমরা বোনাস পাই না। পিআরএল নাই। কল্যাণভাতার টাকাও পাই না।
“অন্যান্য চাকরিজীবীদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্য পাহাড়-সমান। আজকে কোরবানি এসে যায়, আমাদের বেতন হয় না। বোনাস যা দেয়, তা সামান্য। অন্যান্য চাকরিজীবীরা বোনাসের টাকাতেই কোরবানি দিতে পারে। আর আমাদেরকে কোরবানি দিতে গেলে টাকার জন্য ঘুরতে হয়।”
একই বক্তব্য নবাবগঞ্জের হরেকৃষ্ণ কুসুমকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরফান আলী সরকারের। তিনি বলেন, “আজকে ১৯ বছর ধরে চাকরি করছি আমি। আমরা নামমাত্র সেকেন্ড ক্লাস। কাজে না। যারা চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি করে, তারাও ৫০ শতাংশ বোনাস পায়। আর আমরা পাই ২৫ শতাংশ।”
ভোলা সদরের কবি মোজাম্মেল হক মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন মাহবুব সাদিক। তিনি বলেন, “আমাদের এক দফা, এক দাবি। জাতীয়করণ। কারণ এটা হলেই বাকি সব হয়ে যাবে। বাড়ি ভাড়া, বোনাস এবং বদলিই আমাদের মূল চাওয়া। আমার বাড়ি টাঙ্গাইল, কিন্তু চাকরি ভোলা। আমি চাইলেও ট্রান্সফার হতে পারব না।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ হলে এসব সমস্যা থাকবে না বলে মনে করছেন মাহবুব।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, “১৯৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বলেছিলেন, ‘আমরা যদি কখনও ক্ষমতায় যাই, শিক্ষকদেরকে রাস্তায় নামতে হবে না।’ তারপর ৩০ বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু আজও তার কথার কোনো বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। উনি আমাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। অথচ প্রতি বছরই মাঠে-ময়দানে নেমে চেষ্টা করছি উনাকে জানান দেওয়ার জন্য।
“বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে সবার আগে জাতীয়করণ করেছিলেন। এরপর ধাপে ধাপে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করার কথা ছিল। ২০১০ সালে প্রণীত ডক্টর কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা নীতিও যদি বাস্তবায়িত হত, তাহলেও আজকে হাজার হাজার শিক্ষককে এখানে আসতে হত না।”
কাশেম বলেন, “হাজার হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধাপে ধাপে মাধ্যমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করা কোনো কঠিন কাজ না। এটা সদিচ্ছার অভাব।
“আমাদের বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা। এটা অত্যন্ত লজ্জার একটা কথা। সরকার কি আামাদের জন্য এমন কোনো ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যে নামমাত্র ১০০০ টাকা দিলেই আমরা থাকতে পারব? বাড়ি ভাড়ার এই বৈষম্যের অবসান চাই।”
তিনি বলেন, “রংপুরের একটা মেয়ে চাকরি করতে যায় কক্সবাজারে। কক্সবাজারের একটা মেয়ে যায় দিনাজপুরে। কিন্তু বেতন পায় ১২০০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে মনোযোগ দিয়ে চাকরি করা সম্ভব? আমরা চিকিৎসা ভাতা পাই ৫০০ টাকা। এটা বিশ্বাসযোগ্য?
“আজকে শিক্ষকদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ টাকা কেটে নেয়। কিন্তু অবসরে যাওয়ার পর সেই টাকা তারা সময় মত পায় না। শেষে দেখা যায়, টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় সে মারা যাচ্ছে। জাতীয়করণ করলে এগুলো সমাধান হবে। আমাদের, আমাদের ছেলেমেয়েদের জীবন সহজ হবে।”
সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, “আমার কথা খুব ক্লিয়ার। জাতীয়করণ চাই।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “পুলিশ শুরুর দিকে ঝামেলা করছিল। আপাতত কিছু করছে না। তবে যাই করুক, আমরাও এভাবে আন্দোলন করতে করতে ক্লান্ত। আমরা এর সমাধান চাই।”
আরও পড়ুন