প্রাইভেট প্র্যাকটিস কমিয়ে গবেষণায় মন দিন: ডাক্তারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

“স্বাস্থ্য বিষয়ে যারা গবেষণা করবে, তাদেরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে," বলেন সরকারপ্রধান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2024, 09:13 AM
Updated : 11 March 2024, 09:13 AM

দেশের চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস কমিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, "ডাক্তার সাহেবরা প্র্যাকটিস করে, টাকা কামাই করে, গবেষণার দিকে বেশি যায় না। ঠিক? কয়েকজন ডাক্তার আছে, আমি সামনাসামনি জিজ্ঞাসা করছি। এখন গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।”

সোমবার বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

 চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "গবেষণায় গুরুত্ব দিলে দেশের মানুষ আরও সুস্থ হবে, সবল হবে, মেধাবীরা আরো মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। গবেষণা অপরিহার্য। স্বাস্থ্য বিষয়ে যারা গবেষণা করবে, তাদেরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে।"

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সকল ক্ষেত্রেই যে গবেষণার বিকল্প নেই, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, "কৃষিতে গবেষণা করে আজকে আমরা শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ না, বাংলাদেশে এখন আমাদের ফল, ফুল, মূল, এমনকি টিউলিপ, যেটা শীতের দেশ ছাড়া হয় না, সেই টিউলিপও বাংলাদেশ হচ্ছে। স্ট্রবেরিও বাংলাদেশ হচ্ছে। সবই গবেষণার ফসল। গবেষণা আমাদের নতুন দুয়ার খুলে দেয়। আর বাংলাদেশের মাটি হচ্ছে সোনার মাটি, যা লাগানো যায় সেটাই হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।"

চিকিৎসকদের তিনি বলেন, "যারা সরকারি চাকরি করছেন, তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিসটা একটু কমিয়ে দিয়ে গবেষণার দিকে মনোযোগ দেন। যারা গবেষণা করবেন, তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য যা প্রয়োজন আমরা করব। গবেষণাটা আমাদের খুব দরকার। বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, এই দুইটার ওপর আমাদের গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

“আমরা চাই, আমাদের গবেষণায় আরো বেশি সকলে মনোযোগী হবে। গবেষকদের কোনো অসুবিধা থাকলে সেটা কীভাবে দূর করা যায়, সে ব্যাপার আমাদের সরকার সবসময় অত্যন্ত আন্তরিক।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আজকে গবেষণার জন্য যে টাকা আমরা অনুদান হিসেবে দিচ্ছি, মনে রাখতে হবে, এই টাকাটা বাংলাদেশের জনগণের টাকা। জনগণের টাকা জনগণের কল্যাণে যেন লাগে। কারণ গবেষণা থেকে যেটা উদ্ভাবন হবে, সেটা কিন্তু জনগণের কাজে লাগবে। সেই কথাটাই মাথায় রাখতে হবে। আমি মনে করি তরুণের যে মেধাশক্তি, সেটা বিকাশের মধ্যে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।"

অনূর্ধ্ব ১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নেওয়ায় বাংলাদেশের মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “ষোলর নিচে যারা (মেয়ে), তারা তো ভারতকে তিন গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন। তাদেরকে আমি ডাকব এবং তাদেরকে ডেকে প্রাইজমানি দিয়ে উৎসাহিত করব।”

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের যে উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ইতিহাসও অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের মানুষের মধ্যে ক্ষমতা দিয়ে বঙ্গবন্ধু আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। যখনই সেই পদক্ষেপ নিলেন, তখন এল চরম আঘাত। ’৭৫ এর ১৫ অগাস্ট। জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। সেদিন জাতির পিতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

"যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, একটা রিজার্ভ মানি নাই, কারেন্সি নোট নাই, যুদ্ধকালীন সময়ে কোনো ক্ষেতে ফসল হয় নাই, যা কিছু ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সারা দেশের জ্বালিয়া পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি ছিল গৃহহারা, আর এক কোটি মানুষ ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল।

“সেই ধরনের অবস্থায় শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটা এলাকায় স্কুল, কলেজের সবগুলোর অবকাঠামো তৈরি করা, শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় বই দেওয়া, সেই সময় এত দুরবস্থা মানুষের ছিল, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিনা পয়সায় কাপড় বিলি করতেন। ছেলে-মেয়ে, শিক্ষকরা যাতে পোশাক পরতে পারেন, সে ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।"

সরকারপ্রধান বলেন, "আমরা দেশের সকল বিভাগীয় শহরের নভোথিয়েটার স্থাপন করছি। প্রথমে ঢাকায় করেছি। নভোথিয়েটারের কাজ শুরু করার পর কাজ শেষ করতে পারিনি, ২০০১ আমরা সরকারে আসতে পারেনি। আমি নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া সরকারে এসেই দুইটা মামলা দিয়েছিল। এটা করলাম কেন?  তখন আমি বলেছি, ভালো করে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা একনেকে যারা বসতাম সবাইকে একসঙ্গে মামলার আসামি করে।

"প্রায় এক ডজন মামলা দিয়েছিল। ২০০৭ সালে দিয়েছিল আরো ছয়টা। আমি বলেছি, সবগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা বিভাগে শহরে প্রথমে একটা করে নভোথিয়েটার করব। সেই ব্যবস্থা নিয়েছি৷ রাজশাহীতে ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে।"

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।